Advertisement
০৫ জানুয়ারি ২০২৫
health Infrastructure

স্বাস্থ্যের জট

প্রতিটি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসক, নার্স, ল্যাব টেকনিশিয়ান ও গ্রুপ ডি কর্মীদের থাকার কথা। বাস্তবে বহু পদ শূন্য, স্বীকার করেন পুরকর্তারাই।

—প্রতীকী ছবি।

—প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০২৩ ০৫:৫৫
Share: Save:

কলকাতার পুর স্বাস্থ্যব্যবস্থার পরিকাঠামোকে উন্নত করার জন্য অর্থ বরাদ্দ করেছে কেন্দ্র, অথচ তা ব্যবহার করতে ব্যর্থ হচ্ছে কলকাতা পুরসভা। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ‘হেলথ অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টার’ বা সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র হওয়ার কথা ছিল ৫৯টি ওয়র্ডে, হয়েছে মাত্র ছ’টি ওয়র্ডে। ফলে গত মাসের শেষে এসে এ রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠকে বসে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব রাজেশ ভূষণ। পুরসভার আধিকারিকদের বক্তব্য, জমিজটের কারণেই সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র তৈরি করা যাচ্ছে না। কিন্তু জমির অভাবই একমাত্র কারণ নয়, তার প্রমাণ— ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে পুর এলাকার সতেরোটি ওয়র্ড স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিকেলে পলিক্লিনিক শুরু করার কথা ছিল, হয়েছে একটি মাত্র ওয়র্ডে। এই দুঃসংবাদগুলি একই সঙ্গে বিস্ময় ও ক্ষোভের জন্ম দেয়। কেন্দ্রের বঞ্চনার কথা শতমুখে প্রচার করে রাজ্য সরকার, অথচ পানীয় জল, নিকাশি বা স্বাস্থ্য কেন্দ্র নির্মাণের মতো গুরুত্বপূর্ণ নানা প্রকল্পে কেন্দ্রের বরাদ্দ টাকা ব্যবহার করতে রাজ্য বার বার ব্যর্থ হচ্ছে। জমিজটের কৈফিয়তটি শুনেও সন্দেহ জাগে— অভাব কি আসলে জমির, না কি উদ্যোগের? কলকাতার মতো মহানগরে জমি পাওয়া সহজ হবে না, তা প্রত্যাশিত। তার জন্য রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কৌশল প্রয়োজন। সে বিষয়ে কতটুকু সচেষ্ট হয়েছে সরকার?

পুর স্বাস্থ্য দফতর পরিচালিত ১৪৪টি ‘আর্বান প্রাইমারি হেলথ সেন্টার’-এর যা দশা, তা ভরসা জোগায় না। নিয়ম অনুযায়ী, এই ধরনের প্রতিটি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসক, নার্স, ল্যাব টেকনিশিয়ান ও গ্রুপ ডি কর্মীদের থাকার কথা। বাস্তবে বহু পদ শূন্য, স্বীকার করেন পুরকর্তারাই। বহু পুর ক্লিনিকে এক জন মাত্র চিকিৎসক রয়েছেন, তিনি না এলে পরিষেবা বন্ধ থাকে। যে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা নিযুক্ত রয়েছেন, তাঁরাও নিয়মিত ক্লিনিকে আসছেন কি না, তা নজরদারির ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। ক্লিনিকগুলির পরিচালনার বিষয়ে অধিকাংশ কাউন্সিলররা সম্পূর্ণ উদাসীন। ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গি ছড়িয়ে পড়লে পরিষেবার এই ফাঁকগুলি বড় হয়ে দেখা দেয়, বিক্ষোভ তৈরি হয়। শহরের নানা এলাকায় পুরসভা পরিচালিত অনেকগুলি মাতৃসদন বন্ধ, পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে রয়েছে। ফলে এক দিকে রোগীর হয়রানি বাড়ছে, অন্য দিকে চাপ পড়ছে শহরের বড় হাসপাতালগুলির উপরে।

কলকাতায় পুরস্বাস্থ্যের পরিকাঠামো প্রয়োজনের তুলনায় অতি সামান্য। কেন্দ্রের জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি অনুসারে পনেরো হাজার নাগরিক-পিছু একটি সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র থাকার কথা, যেখানে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মতোই পরিষেবা মিলবে। কলকাতার ওয়র্ডে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা চল্লিশ হাজার থেকে প্রায় এক লক্ষ, প্রতি ওয়র্ডে স্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে মাত্র একটি। ফলে প্রতি ওয়র্ডে বাড়তি কেন্দ্র না তৈরি করলে শহরের নিম্নবিত্ত ও দরিদ্র মানুষের কাছে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পৌঁছে দেওয়া অসম্ভব। কেন্দ্রের স্বাস্থ্যনীতি তার সুযোগ তৈরি করছে, অথচ তা গ্রহণ করতে কলকাতা পুরসভা অপারগ, অথবা উদাসীন। নগরবাসীর স্বাস্থ্যবিধানে নিবিড় পরিকল্পনার সুযোগ রয়েছে পুরসভারই— পরিস্রুত জল সরবরাহ, কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ, স্বচ্ছ পরিবেশ, উন্নততর বাসস্থান এবং প্রাথমিক চিকিৎসা, এমন নানা পরিষেবার সমন্বয় করতে পারে কেবল পুরসভা। এই সমন্বয়ই স্বাস্থ্যের সূচকে উন্নতির প্রকৃত উপায়।

অন্য বিষয়গুলি:

Health KMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy