আপাতত শান্তির আবহ ফিরেছে ভারত-চিন সীমান্তে। পূর্ব লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি) বরাবর পুনরায় টহলদারি শুরু করেছে ভারত ও চিনের সেনা। এর আগে লাদাখের ডেমচক এবং ডেপসাং উপত্যকার বিতর্কিত অঞ্চলে মুখোমুখি অবস্থান থেকে সেনা পিছোনোর (ডিসএনগেজমেন্ট) প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় দু’তরফেই। প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহেই রাশিয়ায় ব্রিকস সম্মেলনের মাঝে পার্শ্ববৈঠক করেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মোদী ও চিন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। সেখানেই লাদাখে সেনা অবস্থান নিয়ে দ্বিপাক্ষিক সমঝোতায় পৌঁছয় দুই দেশ। ফলে, সাড়ে চার বছরের বেশি সময় ধরে চলা অচলাবস্থা আপাতত প্রশমিত। চুক্তি অনুযায়ী, সেনা সরানোর পাশাপাশি বিতর্কিত অঞ্চলে যে সব অস্থায়ী সেনা ছাউনি তৈরি হয়েছিল, তা-ও সরিয়ে ফেলা হবে। আগের মতোই দু’দেশের সেনা টহল দেবে সীমান্তে। কিন্তু ‘টহলদারি সীমানা’ নিয়ে যাতে বিতর্কের সৃষ্টি না হয়, নজর থাকবে সে দিকেও। এও স্থির হয়েছে যে, টহলদারির বিষয়ে দু’তরফে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মানা হবে। যেমন, এক দেশের সেনার টহলদারি শেষ হলে তারা অন্য দেশকে তা জানিয়ে দেবে। তার পরই শুরু হবে ওই দেশের টহলদারি।
২০২০ সালে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে পূর্ব লাদাখের বিভিন্ন এলাকায় অনুপ্রবেশের অভিযোগ ওঠে লাল ফৌজের বিরুদ্ধে। শুধু তা-ই নয়, উত্তেজনার আবহে জুনের মাঝামাঝি গলওয়ান উপত্যকায় ভারতীয় সেনার উপরে প্রাণঘাতী হামলাও চালায় তারা, যার জেরে তিক্ততা বাড়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে। বস্তুত, এই সময়ে ইন্দো প্যাসিফিক অঞ্চলে চিনের আধিপত্যবাদী পদক্ষেপ এমনিতেই উদ্বেগ বাড়াচ্ছিল দিল্লির। ভারত-চিন সীমান্তে স্থিতি ফেরানোর জন্য কূটনৈতিক এবং সামরিক স্তরে দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে এসেছে দিল্লি। চিনের সঙ্গে এই অগ্রগতি শুধু দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেই নয়, ভারতের বৃহত্তর ভূরাজনৈতিক লক্ষ্যের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। মনে রাখতে হবে, বর্তমানের মুখোমুখি অবস্থান থেকে সেনা পিছোনো গোটা প্রক্রিয়ার সূচনামাত্র। এর পরে রয়েছে সেনাসংখ্যা কমানো (ডি-এসক্যালেশন) এবং এই অঞ্চল থেকে সেনা ও সরঞ্জাম (ডি-ইনডাকশন) সরানোর পদক্ষেপ, যা শুধু সময়সাপেক্ষই নয়, এতে নিরন্তর নজরদারিও জরুরি। এই সূত্রে প্রতিরক্ষামন্ত্রী এস জয়শঙ্করের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে আস্থা ফেরাতে আরও সময় লাগার উক্তিটিও তাই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
লক্ষণীয় সীমান্ত বিবাদের পরিস্থিতি সামলানো বহুলাংশেই সম্ভবপর হয়েছে ভারতের কূটনৈতিক এবং প্রতিরক্ষা মহলে দৃঢ়তা ও ধৈর্যের কারণে। সীমান্ত বিবাদের সমস্যাকে গুরুত্ব না দিয়ে বাণিজ্য ও অর্থনীতির উপরে চিন জোর দিতে চাইলেও, এ ক্ষেত্রে ভারত তার অবস্থানে অনড় থেকেছে— সীমান্ত বিবাদ না মিটলে বাকি ক্ষেত্রে সম্পর্ক সাবলীল করবে না তারা। বর্তমানে পরিস্থিতির উন্নতি হলেও নিজেদের স্বার্থে আগামী দিনেও এই নীতিই ধরে রাখুক দিল্লি। একই সঙ্গে দিল্লিকেও নিশ্চিত করতে হবে যাতে তাদের তরফে করা পদক্ষেপগুলি যথাসম্ভব স্বচ্ছ থাকে, যাতে প্রক্রিয়াটির উপরে আস্থা রাখা যায়। পূর্বের ‘ধামাচাপা’ দেওয়ার নীতি যথাসম্ভব বর্জন করুক সরকার। বরং অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে সতর্কতার সঙ্গে এগোনোই এ ক্ষেত্রে সেরা পন্থা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy