ভারত-পাকিস্তান কূটনৈতিক সম্পর্কের মজা হল, এই সম্পর্কে কখনও কোনও মুহূর্ত নিস্তরঙ্গ থাকে না। সে সিন্ধু চুক্তির সূত্রেই হোক বা সন্ত্রাসের পরিপ্রেক্ষিতে। ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত সাম্প্রতিক শাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজ়েশন (এসসিও)-এর বৈঠকে ভারতীয় বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের উপস্থিতিতে তেমনই কোনও মুহূর্তের অপেক্ষায় ছিল কূটনৈতিক মহল। বস্তুত, গত বছর গোয়া-য় এসসিও-ভুক্ত রাষ্ট্রগুলির বিদেশমন্ত্রীদের সম্মেলনে তৎকালীন পাক বিদেশমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো-র জয়শঙ্করের সঙ্গে বাদানুবাদের জেরে দু’দেশের সম্পর্কে তিক্ততা যে ভাবে চরমে উঠেছিল, তাতে এ-হেন সম্ভাবনা অমূলক ছিল না। ভারত আগেই স্পষ্ট করে দিয়েছিল যে আনুষ্ঠানিক বা ঘরোয়া পার্শ্ববৈঠকে সে আগ্রহী নয়, বরং এসসিও-র প্রতি তাদের দায়বদ্ধতাকেই বেশি গুরুত্ব দিতে চাইছে দিল্লি। তবে, ন’বছর পরে ভারতের কোনও বিদেশমন্ত্রীর ইসলামাবাদ সফর কাটল তুলনামূলক ভাবে সংযত পরিবেশে। জম্মু ও কাশ্মীরে সুষ্ঠু বিধানসভা ভোটের পরে বিদেশমন্ত্রীকে পাকিস্তানে পাঠানো মোদী সরকারের তাৎপর্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। দ্বিপাক্ষিক সংঘাতের ঊর্ধ্বে উঠে বহুপাক্ষিক আলোচনা এবং কূটনীতিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে তারা— এসসিও-র মতো আন্তর্জাতিক মঞ্চে জয়শঙ্করকে পাকিস্তানে পাঠিয়ে সেই বার্তাই দিতে চেয়েছে সাউথ ব্লক।
এক দিকে, সম্মেলনে পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের মধ্যে দিয়ে চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর-এর সম্প্রসারণ নিয়ে অসন্তোষ ব্যক্ত করার পাশাপাশি ভারতীয় বিদেশমন্ত্রী জানিয়েছেন, সন্ত্রাসবাদ, মৌলবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদ হল বাণিজ্য ও যোগাযোগের পথে বড় অন্তরায়। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, এই সমস্যার কড়া মোকাবিলা করা না হলে, তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও কূটনৈতিক সম্পর্কে। বিধানসভা ভোটের আগে গত কয়েক মাস ধরে জম্মু-কাশ্মীরে একের পর এক জঙ্গি হামলা ঘটছে। জয়শঙ্কর পুলওয়ামা কাণ্ডের কথাও বলেছেন এই সূত্রে, যদিও ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক মহলে পুলওয়ামার প্রকৃত ঘটনা নিয়ে বিস্তর কানাঘুষো। লক্ষণীয়, কূটনীতির এক স্তরে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মঞ্চ থেকে পাকিস্তানকে যথাসম্ভব একঘরে করার উপরেই জোর দিয়ে চলেছে দিল্লি— বিশেষত পাকিস্তানের আর্থিক দুরবস্থা এবং অন্তর্বর্তী বিবিধ রাজনৈতিক সমস্যায় সেই সুযোগ মিলেছেও অঢেল— আবার অন্য এক স্তরে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে সুস্থতা আনার প্রয়াসও চলছে।
এ বারও দিল্লিকে সেই দ্বিমুখী প্রচেষ্টা জারি রাখতে দেখা গেল। বস্তুত, দিল্লির এসসিও-কে গুরুত্ব দেওয়ার অন্যতম কারণ— মধ্য এশিয়ায় যেখানে বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক বিস্তারের ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে পাকিস্তান, সেখানকার রাষ্ট্রনেতাদের সঙ্গে সক্রিয় যোগাযোগের মাধ্যমে সম্পর্ক উন্নত করা, পাকিস্তানকে এড়িয়ে। আবার অন্য এক স্তরে, ইসলামাবাদকে মোটের উপর সদর্থক বার্তা দেওয়া হল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বিষয়ে। জয়শঙ্কর সম্প্রতি আবারও বলেছেন, যে কোনও প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মতোই পাকিস্তানের সঙ্গে সহজ সম্পর্ক চায় ভারত, তবে তা আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাস থেকে চোখ ফিরিয়ে নয়। এই দুই নৌকা এক সঙ্গে কত দূর ঠিকমতো বাওয়া যাবে, ভবিষ্যৎ বলবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy