ফাইল চিত্র।
পশ্চিমবঙ্গ কেন মেয়েদের প্রসবকে সুরক্ষিত করার কাজে পিছিয়ে পড়ছে? ২০১৫-১৭ সালে এক লক্ষ প্রসবে ৯৪ জন মায়ের মৃত্যু হত, ২০১৮-২০ সালে মৃত্যু হয়েছে ১০৩ জন মায়ের। এই হার যদিও তার আগের সময়কালের মৃত্যুহারের (১০৯) থেকে সামান্য ভাল, তবু আশঙ্কা হয়, অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে। কোভিড অতিমারিতে প্রসূতি ও শিশুর স্বাস্থ্য অত্যন্ত অবহেলিত হয়েছিল। বহু প্রসূতি হাসপাতালে ভর্তি হতে গিয়ে প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন, অনেকে হয়রানির ভয়ে যাননি। আশাকর্মীদের নিয়োগ করা হয়েছে কোভিড প্রতিরোধে, তাই গর্ভবতীদের পরিষেবায় ফাঁক থেকে গিয়েছে। অঙ্গনওয়াড়ি প্রকল্পে দীর্ঘ ছেদ পড়ায় পুষ্টিতে ঘাটতির সম্ভাবনা যথেষ্ট। কোভিড লকডাউন কালে নাবালিকা বিবাহের সংখ্যাও বেড়েছে। মৃত্যুহার এমন একটি সূচক, যা অস্বাস্থ্য ও অচিকিৎসার তীব্রতার দিকে ইঙ্গিত করে। সামাজিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার এই সব দুর্বলতা আপনিই কমবে, এমন ধরে নেওয়া চলে না। বিশেষত যেখানে কিছু উন্নতির পরে আবার অবনতির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, সেখানে বুঝতে হবে যে আশঙ্কার কারণগুলি গভীর এবং ব্যাপক। প্রসূতি মৃত্যুর জাতীয় গড়ের (এক লক্ষ প্রসবে চুরানব্বই) চাইতে পশ্চিমবঙ্গে প্রসূতি মৃত্যুর হার বেশি, এই সংবাদও স্বস্তিদায়ক নয়।
যে কারণটি সর্বাধিক মনোযোগ দাবি করে, তা হল অকালমাতৃত্ব। নাবালিকাদের গর্ভধারণ ও প্রসবের হার যে পশ্চিমবঙ্গে বেড়েছে, এবং এ বিষয়ে ভারতে পশ্চিমবঙ্গের স্থান লজ্জাজনক, জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষা ২০১৯-২০ তার সাক্ষ্য দিয়েছে। অতএব মেয়েদের আধার কার্ডে উল্লিখিত বয়সের সঙ্গে তাদের প্রথম সন্তানের জন্মের সময় মিলিয়ে দেখে এই সমস্যার পরিধি স্পষ্ট করা দরকার। সে কাজটা রাজ্য সরকার এড়াচ্ছে, কারণ তাতে কন্যাশ্রী, রূপশ্রীর মতো প্রকল্পের সাফল্যের দাবি আহত হবে। কিন্তু সরকারের মুখরক্ষার চাইতে মেয়েদের প্রাণরক্ষা অনেক জরুরি কাজ। শিক্ষা এবং সক্ষমতাই নারী-স্বাস্থ্যের প্রধান নির্ণায়ক। সেখানে গলদ পূরণ করতেই হবে। দ্বিতীয়ত, আশাকর্মীদের কাজ গর্ভবতী ও শিশুদের স্বাস্থ্যের সুরক্ষা। সংক্রামক ব্যাধি এবং জনস্বাস্থ্যের অন্যান্য সমস্যার জন্য তৃণমূল স্তরে ভিন্ন কর্মী নিয়োগ করা দরকার। মনে রাখতে হবে, অপুষ্টি ও রক্তাল্পতা, যে দু’টি সমস্যা ভারতে চিরকাল মেয়েদের বিপন্ন করেছে, এখন তার সঙ্গে যোগ হয়েছে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবিটিস। ফলে গর্ভবতীর ঝুঁকির পরিমাপে সতর্ক হতে হবে।
চিকিৎসা ব্যবস্থার রোগগুলি অজানা নয়। গর্ভবতীর জন্য ‘নিশ্চয়যান,’ ব্লক ও মহকুমা স্তরের হাসপাতালে সিজ়ারিয়ান অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা করতে চিকিৎসকদের অ্যানাস্থেশিয়ায় প্রশিক্ষণ, এ সবই করা হয়েছিল প্রসবকে সুরক্ষিত করতে। তার পরেও গর্ভযন্ত্রণায় কাতর মেয়েদের জেলা থেকে কেন রেফার করতে হচ্ছে কলকাতায়? তার কারণ রবীন্দ্রনাথের কথায়, “আমরা আরম্ভ করি, শেষ করি না; আড়ম্বর করি, কাজ করি না।” চিকিৎসকদের অবশ্যই রোগীর কল্যাণের প্রতি দায়বদ্ধ করতে হবে, কিন্তু প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা হাসপাতালের রয়েছে কি না, তা-ও দেখতে হবে। অসার দাবির অক্লান্ত প্রচারের পিছনে যেন না ঢাকা পড়ে যায় তরুণী মায়ের মৃত্যুযন্ত্রণা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy