Advertisement
২৭ নভেম্বর ২০২৪
COVID-19

কী পাইবে গ্রাম

কোভিড-মৃতের সরকারি সংখ্যা প্রহসন মাত্র। বিশেষজ্ঞদের আন্দাজ, প্রকৃত সংখ্যা তাহার পাঁচগুণ হইতে আটগুণ।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ২১ মে ২০২১ ০৫:১২
Share: Save:

বাসি গ্রামের বাসিন্দারা কোভিড-মোকাবিলায় কেন্দ্রের সাম্প্রতিক নির্দেশিকাটি কি দেখিয়াছেন? সম্ভবত না। নয়াদিল্লি হইতে ঘণ্টা দেড়েক দূরত্বে এই গ্রামটি কোভিডে বিধ্বস্ত। বহু পরিবার নিশ্চিহ্ন হইয়াছে, দেহ সৎকার করিবার লোক নাই, ঘরে ঘরে মানুষ আক্রান্ত। চার ঘণ্টা দূরে হাসপাতালে পৌঁছাইবার পূর্বে মৃত্যু আসিয়া লইয়া যাইতেছে অসুস্থদের। এই অবস্থায় যদি গ্রামবাসী জানিতে পারিতেন, কেন্দ্রের মতে গ্রামেই ত্রিশটি অক্সিজেন-যুক্ত শয্যায় তাঁহাদের চিকিৎসা হইবার কথা, থাকিবার কথা ডাক্তার, নার্স, ফার্মাসিস্ট-সহ অন্তত আট জন কর্মী-সম্বলিত ‘কোভিড কেয়ার সেন্টার’— তাঁহাদের বিশ্বাসই হইত না। তাঁহাদের চক্ষু দুইটি প্রশ্ন করিত, সুদূর কল্পনাতেও যে ব্যবস্থা সম্ভব বলিয়া বোধ হয় না, এই আপৎকালীন সময়ে তাহার নিদান দিয়া কাহার লাভ? ভারতের গ্রামগুলিতে করোনাভাইরাস তাণ্ডব করিতেছে। অনেকের মতেই, কোভিড-মৃতের সরকারি সংখ্যা প্রহসন মাত্র। বিশেষজ্ঞদের আন্দাজ, প্রকৃত সংখ্যা তাহার পাঁচগুণ হইতে আটগুণ। কুম্ভমেলা এবং পাঁচটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন উপলক্ষে জনসমাগম সংক্রমণকে দ্রুত ছড়াইয়াছে। শহরের অবস্থা সহজে প্রত্যক্ষ হইতেছে, কিন্তু বিভিন্ন রাজ্যের গ্রাম হইতে বিপর্যয়ের খণ্ডচিত্র মিলিতেছে কেবল। তাহাতে আন্দাজ হইতেছে, সমস্যা আরও জটিল। এক, গ্রামে নির্যাতিত, পরিত্যক্ত হইবার ভয়ে অনেকেই পরীক্ষা করাইতে রাজি নহেন। দুই, পরীক্ষা এবং চিকিৎসার উপযুক্ত পরিকাঠামো নাই, কর্মীও নাই। অতএব গ্রামে কোভিড-মৃতের প্রকৃত সংখ্যা কত, সংক্রমণের গতিপ্রকৃতি কী, তাহা বুঝিবার উপায়ও নীতিপ্রণেতাদের হাতে নাই।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও সাম্প্রতিক বৈঠকে বুঝাইয়াছেন, গ্রামে ক্রমবর্ধমান সংক্রমণে তিনি উদ্বিগ্ন। আজ দেশে প্রতি দশ জন সংক্রমিতের অন্তত ছয় জন গ্রাম অথবা মফস্সলের বাসিন্দা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাহিরে যাইবার পরে কেন্দ্র গ্রামীণ এলাকায় কোভিড নিয়ন্ত্রণের নির্দেশনামা প্রকাশ করিল। তাহা পথ দেখাইবার পরিবর্তে আরও ধন্দে ফেলিল দেশবাসীকে। প্রথম প্রশ্ন, এত বিলম্ব কেন? করোনা অতিমারি ভারতে অনুভূত হইবার প্রায় দেড় বৎসর পরে, দ্বিতীয় ঢেউ আগ্রাসী রূপ ধরিবার পরে গ্রামীণ এলাকায় কোভিড-মোকাবিলার পরিকাঠামো বাতলাইবার অর্থ কী? দ্বিতীয় প্রশ্ন, কোভিড নিয়ন্ত্রণে যাহা প্রাথমিক কর্তব্য, সেই টিকাকরণের কী হইবে? সংক্রমিতদের প্রায় পঁয়ষট্টি শতাংশ আজ গ্রামে, কিন্তু টিকাপ্রাপ্তদের মাত্র পনেরো শতাংশ গ্রামবাসী। গ্রামীণ ভারতকে সুরক্ষিত করিতে যে বিপুল সংখ্যক টিকা এবং কর্মী লাগিবে, কী করিয়া তাহার ব্যবস্থা হইবে, কেন্দ্র জানায় নাই। এমনকি কোভিড মোকাবিলার যে বিশদ নির্দেশনামা কেন্দ্র সম্প্রতি জারি করিল, কী করিয়া তাহার রূপায়ণ হইবে, তাহাও রহস্য। প্রধানমন্ত্রী পিএম কেয়ার্স-এর অর্থে জেলাগুলিতে অক্সিজেন উৎপাদনের কারখানার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করিয়াছেন। যাহা আগুন লাগিলে পুকুর খুঁড়িবার মতো।

কয়েকটি প্রশ্ন না করিলে নহে। যেমন, সংক্রমিতের সন্ধান, পরীক্ষা ও প্রাথমিক সহায়তার দায়িত্ব আশাকর্মী, নার্স-ধাত্রীদের (এএনএম) দিয়াছে কেন্দ্র। ইহাদের নিয়মিত কাজ— প্রসূতিস্বাস্থ্য ও শিশুর টিকাকরণ— তাহা হইলে কে করিবে? ইহা কি আর এক স্বাস্থ্য বিপর্যয়ের সূচনা নহে? দ্বিতীয়, স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দিবার কথা চিকিৎসকদের। এই আপৎকালে কি তাহা সম্ভব? তৃতীয়, প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চব্বিশ ঘণ্টা অক্সিজেন ও পরিষেবার ব্যবস্থা কতগুলি গ্রামে সম্ভব? সর্বোপরি, ইহার জন্য যে বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন, তাহার কতটুকু কেন্দ্র বহন করিবে? এই সকল প্রশ্নের উত্তর না মিলিলে এই নির্দেশিকা কার্যত অর্থহীন হইয়া পড়ে। অতি বিলম্বে, অতি সামান্য— ইহাই কি গ্রামবাসীর প্রাপ্য?

অন্য বিষয়গুলি:

COVID-19 coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy