Advertisement
E-Paper

কিনবে কে

গত দু’বছরের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার জের, ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জোরদার অনিশ্চয়তা এবং আতঙ্ক। কিন্তু এই সমস্ত কারণের সঙ্গেই জড়িয়ে আছে বিপুল এবং ক্রমবর্ধমান আর্থিক অসাম্যের বাস্তব।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৭:৩২
Share
Save

শরীরের সমস্ত রক্ত মুখমণ্ডলে জমা হওয়া সুস্বাস্থ্যের লক্ষণ নয়, সে-কথা সকলেরই জানা। অথচ একটা সমাজের সমস্ত সম্পদ অল্প কিছু লোকের হাতে জমা হলে তার অর্থনৈতিক স্বাস্থ্য যে বিপন্ন হতে পারে, এই সত্যটিকে সচরাচর যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয় না। অসাম্য সম্পর্কে যত আপত্তি বা সমালোচনা শোনা যায়, তার বেশির ভাগটাই নৈতিকতার কথা। সেটা অসঙ্গত নয়— অতিরিক্ত অসাম্য এবং অসাম্যের অতিরিক্ত বৃদ্ধি সচরাচর সামাজিক ন্যায়ের পরিপন্থী। কিন্তু নৈতিকতার প্রশ্ন সরিয়ে রাখলেও অসাম্য নিয়ে আপত্তি বা উদ্বেগের বিস্তর কারণ থাকে। অসাম্য কিছু দূর পর্যন্ত স্বাভাবিক হতে পারে; সঞ্চয়, বিনিয়োগ এবং উৎপাদনের অগ্রগতির জন্য তা আবশ্যকও বটে; কিন্তু মাত্রাছাড়া অসাম্য অর্থনীতির পক্ষে, ব্যবসাবাণিজ্যের পক্ষে ক্ষতিকর হয়ে ওঠে। যেমন এখন দুনিয়ার বহু দেশেই হচ্ছে। ভারতেও।

ক্ষতির হাতে-গরম প্রমাণ মিলেছে খুচরো ব্যবসায়ীদের সংগঠন আরএআই-এর সাম্প্রতিক সমীক্ষায়। তাঁদের প্রতিবেদন জানাচ্ছে যে, ধনী বা সচ্ছল নাগরিকরা যে সব পণ্য কেনেন, সেগুলির বাজার ভাল হলেও সাধারণ মানুষের ব্যবহার্য পণ্যের বিক্রয়ে ভাটার টান চলছে, তার ফলে সামগ্রিক ভাবে খুচরো লেনদেনের বাজারে গতিভঙ্গের লক্ষণ প্রকট। সংগঠনের কর্তারা বলেছেন, টেলিভিশন সেট বা গাড়ির বাজারে উপরতলার মহার্ঘ পণ্যগুলির চাহিদায় তেজ আছে, কিন্তু নীচের দিকে কাটতি কম। এই প্রবণতা কেবল দুই-একটি পণ্যের ক্ষেত্রে সীমিত নয়, সাধারণ ভাবেই অধিকাংশ মানুষ একান্ত প্রয়োজন ছাড়া জিনিসপত্র কিনতে চাইছেন না। তার নানা কারণ আছে, যেমন সাম্প্রতিক মূল্যস্ফীতি, গত দু’বছরের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার জের, ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জোরদার অনিশ্চয়তা এবং আতঙ্ক। কিন্তু এই সমস্ত কারণের সঙ্গেই জড়িয়ে আছে বিপুল এবং ক্রমবর্ধমান আর্থিক অসাম্যের বাস্তব। নব্বইয়ের দশক থেকে এ দেশে অসাম্য ঊর্ধ্বমুখী হয়, গত দু’বছরে অতিমারির প্রকোপে তার গতি অতিমাত্রায় জোরদার— সাধারণ মানুষের প্রকৃত আয় স্থিতাবস্থায় অথবা নিম্নগামী, উপরতলার সম্পদ স্ফীত হয়েছে। ‘ওয়ার্ল্ড ইনইকোয়ালিটি ল্যাব’-এর তৈরি করা বিশ্ব অসাম্য রিপোর্ট ২০২২-এ ভারতকে অভিহিত করা হয়েছে ‘দরিদ্র এবং অত্যন্ত অসাম্যের একটি দেশ’ বলে, যেখানে ‘উচ্চবর্গের লোকেরা খুবই ধনী’; উপরতলার ১০% ভারতবাসীর হাতে মোট আয়ের ৫৭%, নীচের অর্ধেকের ঝুলিতে সাকুল্যে শতকরা ১৩! কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী যথারীতি এই সমীক্ষাকে ত্রুটিপূর্ণ ও ভুল বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। কিন্তু ভোগ্যপণ্যের হাটে অসাম্যের হাঁড়ি ভাঙলে তিনি নাচার।

অসাম্য নিয়ে গত কয়েক বছরে বিশ্ব জুড়ে উদ্বেগ বেড়েছে, সমীক্ষা এবং বিচার-বিশ্লেষণও বেড়েছে। তীব্র ও বর্ধমান অসাম্য বাজারের লেনদেনে বড় রকমের অসঙ্গতি সৃষ্টি না করলে এবং তার ফলে দেশে দেশে অর্থনীতির গতিভঙ্গ না হলে অসাম্য-চর্চায় এই জোয়ার আসত না। সব সম্পদ ন্যূনাংশিক উচ্চকোটির তহবিলে জমা পড়লে, বৃহদাংশিক জনসাধারণের ভাঁড়ে মা ভবানী অধিষ্ঠিতা হলে বাজারে পণ্য কিনবে কে, অর্থনীতিই বা চলবে কী করে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি থেকে শুরু করে সর্বজনীন বনিয়াদি আয় (ইউনিভার্সাল বেসিক ইনকাম বা ইউবিআই) অবধি নানা উপায় নিয়ে চর্চা হচ্ছে, কোথাও কোথাও উপায়গুলি অংশত কার্যকরও হচ্ছে। সমস্ত উপায়েরই প্রকৃত লক্ষ্য দরিদ্রের হাতে কিছু অর্থ তুলে দেওয়া, যাতে তাঁরা বাজারে চাহিদা বাড়াতে পারেন। ক্ষমতাবানেরা অনেকেই অবশ্য এ-পথে হাঁটতে নারাজ। অর্থনীতির বাস্তব সম্পর্কে তাঁরা সম্পূর্ণ অজ্ঞ, সুতরাং অসাম্যকে তাঁরা কোনও সমস্যা বলেই মনে করেন না। যেমন আমেরিকার রিপাবলিকান বা ব্রিটেনের কনজ়ার্ভেটিভ পার্টি। যেমন, নরেন্দ্র মোদী ও তাঁর সহশিল্পীরা।

Retail Market

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}