পাকিস্তানের শাসনকর্তা পরিবর্তনে ভারতের কাছে এখন জরুরিতম প্রশ্ন হল: এতে দু’দেশের সম্পর্কে কোনও প্রভাব পড়বে কি? আপাত ভাবে এক মিত্রতার পরিবেশ তৈরি হয়েছে— পাকিস্তানের সঙ্গে ‘গঠনমূলক যোগাযোগ’-এর কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, এবং ‘শান্তিপূর্ণ ও সহযোগিতামূলক মৈত্রী’-র বার্তা দিয়েছেন নবনিযুক্ত প্রতিবেশী প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফও। খেয়াল করতে হয়, আঞ্চলিক সমৃদ্ধির জন্য ‘ভূ-রাজনীতি’র বদলে ‘ভূ-অর্থনীতি’তে মনোনিবেশ করার কথা বলে থাকেন পাকিস্তানের প্রভাবশালী সেনাপ্রধান কমর জাভেদ বাজওয়া। কিন্তু ভূতপূর্ব প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের অতি-রাজনীতির জাঁতাকলে তা ভেস্তে যায়, গত বছর ওয়াঘা সীমান্তপথে তুলো ও চিনি আমদানির দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতে সই করেও শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে যান তিনি। এ বার শাহবাজ় তা পারবেন কি? কিন্তু জরুরিতর কথা, পাকিস্তানের রাজনীতিতে যে মূলগত কোনও পরিবর্তন ঘটেনি, অর্থাৎ সেনাই যে এখনও সেখানে শেষ কথা, তা আবারও প্রমাণিত হল ইসলামাবাদের এই সাম্প্রতিক উথালপাথালে। আশার আলোটি, অতএব, এখনও আগের মতোই মরীচিকা।
ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় কাঁটা কাশ্মীর সমস্যা নিরসনে এখনও পর্যন্ত কোনও সদিচ্ছা দেখা যায়নি পাকিস্তানি প্রশাসনের তরফে। ঘরোয়া রাজনীতির স্বার্থে কাশ্মীরকেন্দ্রিক বাগাড়ম্বর তাদের কাছে অতি জরুরি, অতএব নয়াদিল্লির সঙ্গে যে কোনও আলোচনাতেও এই প্রসঙ্গই মুখ্য হয়ে ওঠে— সম্পর্ক মেরামতির উদ্যোগও তাই সুদূরপরাহত। আর, রাজনীতির ঘোলা জলে যিনি অকস্মাৎ প্রধানমন্ত্রী হয়ে গিয়েছেন, তাঁর সতর্ক ভাবে পা না ফেলে কোনও উপায় নেই। আসলে, মুখে সম্পর্কের উন্নতির কথা বললেও বাস্তবে সেনাকে চটিয়ে কিছু করতে তিনি অপারগ। মনে রাখতে হবে, এই শাসকজোটকে একেবারেই সুস্থায়ী বলা চলে না, এবং প্রতিপক্ষ ইমরান খানও বিনা যুদ্ধে জমি না ছাড়ার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এই সন্দেহ-অবিশ্বাসের বাতাবরণের মধ্যে কোনও শাসকের পক্ষেই স্বাধীন ভাবে কাজ করা সম্ভব নয়।
ভারত ও পাকিস্তান দুই প্রজাতন্ত্রের মূলগত ফারাক এতখানি যে, তাদের মধ্যে স্বাভাবিক ভাবে গভীর বন্ধনের আশা করার কোনও কারণ নেই। পাকিস্তানের রাজনীতি সর্বৈব ভাবে সেনা-নিয়ন্ত্রিত। ইতিহাস বলবে, পাকিস্তানে আজ পর্যন্ত যে দু’জন রাজনৈতিক নেতা দেশের শাসনব্যবস্থায় তাঁদের কর্তৃত্ব বিস্তারে উদ্যোগী হয়েছেন, তাঁদের কেউই সফল হননি। ১৯৭৯ সালে ফাঁসিকাঠে প্রাণ দিতে হয়েছিল জ়ুলফিকার আলি ভুট্টোকে, আর ১৯৯৯-তে সেনা অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারিয়ে জেলে গিয়েছিলেন নওয়াজ় শরিফ। বিশেষজ্ঞদের মত, দুই পূর্বসূরির পথে হাঁটতে গিয়েই নিজের বিপদ ডাকলেন ইমরানও। গত চার বছরে তাঁর অপশাসন বা বিরোধীদের কণ্ঠরোধে যে সঙ্কট তৈরি হয়নি, তা-ই ঘনিয়ে এল সেনাকর্তাদের সঙ্গে মতবিরোধে। স্মর্তব্য, সে দেশে সেনার এই আধিপত্যের এক প্রধান কারণ ভারতবিরোধী বাগাড়ম্বর। রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সেই সুদীর্ঘ ছায়া সরাতে না পারলে নয়াদিল্লির সঙ্গে ইসলামাবাদের সুসম্পর্ক স্থাপনের চিন্তাটিও অসেতুসম্ভব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy