Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Wires

তারের বিপদ

সমস্যা হল, এ শহরের পুর-প্রশাসন আলোচনা এবং সমীক্ষায় যত আস্থা রাখে, কাজের গতির ক্ষেত্রে তত নয়। এত দিনেও অনেক জায়গাতেই কাজে গতি আসেনি।

শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২২ ০৪:৫৭
Share: Save:

জঙ্গলে ঢেকেছে শহর কলকাতা। তারের জঙ্গল। বস্তুত, আকাশের দিকে তাকালেই কুণ্ডলীকৃত তার দৃষ্টিপথে বাধার সৃষ্টি করে— এমন একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে মহানগরীর। গত কয়েক বছরে শহরে আমপান, ইয়াসের মতো ঘূর্ণিঝড় হানা দিয়েছে। একাধিক বড় কালবৈশাখী ঘটেছে। তার ছিঁড়ে নাগরিক দুর্ভোগ, এমনকি প্রাণহানিও হয়েছে। অথচ, মৃত্যুফাঁদ সরেনি। বিশেষত, বস্তি এলাকায় তারের জট মাথায় নিয়েই বিপদের প্রহর গোনেন বাসিন্দারা। সেই বিপদের কথা মাথায় রেখে বস্তির এ-হেন পরিস্থিতি নিয়ে সমীক্ষার উদ্যোগ করেছে কলকাতা পুরসভা। এই কাজে সহায়তা করবে দমকল, বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর এবং সিইএসসি। কলকাতা শহরের নথিভুক্ত এবং অ-নথিভুক্ত বস্তির সংখ্যা বড় কম নয়। এবং শহরের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ বস্তিতে বসবাস করেন। দমকলের দীর্ঘ দিনের অভিযোগ, বৃষ্টির জল তারের স্তূপ বেয়ে বিদ্যুতের মিটার ঘরে ঢুকে অগ্নিকাণ্ডের সৃষ্টি করে। সঙ্কীর্ণ গলি-পথের ঘিঞ্জি বস্তি এলাকায় অগ্নিকাণ্ড ঘটলে তা নিয়ন্ত্রণ করা ক্ষেত্রবিশেষে দুরূহ হয়ে পড়ে। জীবনহানি ঘটার আশঙ্কাও পুরোমাত্রায় থেকে যায়। সুতরাং এই বিপদ থেকে শহরকে বাঁচতে অবিলম্বে পদক্ষেপ করা প্রয়োজন ছিল।

কিন্তু এই মুহূর্তে সমীক্ষার প্রয়োজন কী? সমীক্ষা সাধারণত করা হয় প্রাথমিক পর্যায়ে, কোনও বিপদের ধার ও ভার বুঝতে এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা করতে। কলকাতায় তারের বিপদ প্রতিনিয়ত নাগরিকের চোখের সামনে দোদুল্যমান। এখন প্রয়োজন, অবিলম্বে ব্যবস্থা করে নাগরিকদের বিপন্মুক্ত করা, সমীক্ষায় কালক্ষেপ নয়। কলকাতায় তারের জঞ্জালের সমস্যা নতুন নয়। এর আগেও জনজীবনকে তারমুক্ত করার নানাবিধ উদ্যোগের কথা শোনা গিয়েছিল। কমিটি গঠন এবং সমীক্ষাও হয়েছিল। সে সবে উপযুক্ত ফল পাওয়া যায়নি। বিদ্যুতের খুঁটিগুলির ধারণক্ষমতা যা, তারের বোঝা তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। একই খুঁটির উপর কেব্‌ল এবং ইন্টারনেটের তারও জড়ানো থাকে। ফলে সামান্য ঝড়েই খুঁটি উপড়ে যায়। রাস্তায় বিদ্যুৎবাহী তার ছড়িয়ে পড়ে। প্রতি বর্ষায় ছেঁড়া তারে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনা সামনে আসে। আমপানে শহরে যত মৃত্যু হয়েছিল, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কারণ ছেঁড়া তারে বিদ্যুৎপৃষ্ট হওয়া। বস্তিগুলিতেও যে ন্যূনতম নিরাপত্তার বন্দোবস্ত না করেই একটি ঘরে অনেকগুলি মিটার বসানো থাকে, সে কথাও পুরসভার অজানা নয়। এর পরেও যে সমীক্ষার প্রয়োজন পড়ছে, সেটাই আশ্চর্যের।

সমস্যা হল, এ শহরের পুর-প্রশাসন আলোচনা এবং সমীক্ষায় যত আস্থা রাখে, কাজের গতির ক্ষেত্রে তত নয়। পুরসভার পক্ষ থেকে কেব্‌ল অপারেটর এবং মাল্টি সিস্টেম অপারেটরদের সঙ্গে বছর সাতেক আগেও আলোচনায় বসা হয়েছিল। মাটির নীচ দিয়ে অপটিক্যাল ফাইবার নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু এত দিনেও অনেক জায়গাতেই সেই কাজে গতি আসেনি। অকেজো তারের স্তূপকে গোছা পাকিয়ে ‘ড্রেজ়িং’ করার কাজই বা কত দূর এগিয়েছে? কোনও সভ্য, উন্নত শহরে মাথার উপর ঝুলতে থাকা তারের জঙ্গল দৃশ্যমান হয় না। কলকাতা এখনও এই ক্ষেত্রে যে তার প্রাগৈতিহাসিক দশা কাটিয়ে উঠতে পারল না, তা নিতান্তই লজ্জার।

অন্য বিষয়গুলি:

Wires road problems
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy