Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
TMC

ঝড়ের ধুলা

লক্ষণীয়, নির্বাচনী অনাচারের একটি চরম রূপ বিনা নির্বাচনে ক্ষমতা দখল।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১০:২৪
Share: Save:

রাজ্যের চারটি পুর-নিগমে তৃণমূল কংগ্রেসের বিপুল জয়কে আধুনিক প্রথা অনুসারে ‘সবুজ ঝড়’ আখ্যা দেওয়া হইয়াছে। ‘ঝড়’-এর পূর্বাভাস ছিলই, চারটি পুরসভাই রাজ্যের শাসক দলের দখলে আসিতে দেখিয়া কেহ বিস্মিত হয় নাই। ২২৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৯৮টি দখল করিবার কৃতিত্বে যে তুমুল প্রতাপ, তাহার পরে বিরোধীদের পরাজয়ের বিশ্লেষণ আপাতদৃষ্টিতে অনাবশ্যক মনে হইতে পারে। কিন্তু ঝড় যেমন পথের বাধাকে ফুৎকারে উড়াইয়া দেয়, তেমনই প্রবল ধুলায় দৃষ্টিকেও আচ্ছন্ন করিয়া দেয়। সেই কারণেই জয়-পরাজয়ের পরিসংখ্যানের বাহিরে অপর একটি উদ্বেগজনক প্রশ্নে দৃষ্টিপাত করা জরুরি, যে উদ্বেগটি এই রাজ্যে অতিমাত্রায় প্রবল হইয়া উঠিতেছে। প্রশ্নটি নির্বাচনী কারচুপি এবং জবরদস্তির। পশ্চিমবঙ্গে কার্যত যে কোনও স্তরের নির্বাচনে এই অভিযোগ প্রায় অবধারিত হইয়া পড়িয়াছে। চারটি পুরসভার নির্বাচনেও তাহার ব্যতিক্রম ঘটে নাই, রাজ্যের পুরনির্বাচনের আগামী অধ্যায় লইয়াও অনুরূপ অভিযোগ বিস্তর।

লক্ষণীয়, নির্বাচনী অনাচারের একটি চরম রূপ বিনা নির্বাচনে ক্ষমতা দখল। এই রূপটির চূড়ান্ত প্রকাশ হইয়াছিল ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে, যখন প্রায় এক-তৃতীয়াংশ আসনে বিরোধী প্রার্থী না থাকিবার ফলে তৃণমূল একতরফা জয়ী হইয়াছিল। ২০২২ সালের পুরনির্বাচনকে নাকি তাহারই ‘শহর সংস্করণ’ আখ্যা দিয়াছেন বীরভূমের এক বিরোধী নেতা। কথাটি অর্থবহ— বীরভূমের যে পাঁচটি পুরসভায় নির্বাচন হইবে, তাহার মধ্যে দুইটি ইতিমধ্যেই তৃণমূলের দখলে। সাঁইথিয়া এবং সিউড়ির অধিকাংশ ওয়ার্ডের বিরোধীপ্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করিয়া লইয়াছেন। বোলপুরের কোনও ওয়ার্ডে বিজেপি প্রার্থী নাই, সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী বলিতে কেবল বাম। অন্যত্রও এমন দুর্লক্ষণের অভাব নাই। বিরোধী মনোনয়নপত্র জমা না পড়িবার জন্য ফল নির্ধারিত হইয়া গিয়াছে দিনহাটা এবং বজবজ পুরসভায়। বিরোধী প্রার্থীদের ভীতিপ্রদর্শন, দমন-পীড়নের অগণন অভিযোগ রহিয়াছে জেলায় জেলায়। পাশাপাশি রহিয়াছে ভোটের দিন কারচুপির প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ নানা কৌশল প্রয়োগের আশঙ্কা, সাম্প্রতিক পুরনির্বাচনে বিশেষত বিধাননগরের দৃশ্যাবলি যে আশঙ্কা বাড়াইয়া তুলিয়াছে। সবুজ ঝড়ে ধুলাবালির— এবং বিষকণিকার— পরিমাণ এত বেশি হইলে পুরবাসী বিপন্ন বোধ করিবেন, ইহাই স্বাভাবিক।

উদ্বেগ বাড়াইয়া তোলে শাসক দলের নেতাদের আচরণ। যথা, তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সুসমাচার: সংগঠন নাই বলিয়াই বিরোধী প্রার্থীরা অনেকে মনোনয়ন জমা দিতে পারেন নাই। যুক্তিটি বিচিত্র। সংগঠন না থাকিলে বিরোধী হারিতে পারে, মনোনয়ন জমা দিতে পারিবে না কেন? তিনি কি তবে স্বভাবসিদ্ধ প্রগল্‌ভতায় ফাঁস করিয়া দিতেছেন যে, এই রাজ্যের নির্বাচনী গণতন্ত্রে খেলার মাঠে নামিবার পূর্বেই ময়দান-বহির্ভূত কোনও খেলায় জিতিয়া আসিতে হয়? আক্রমণ এবং হুমকির খেলা? এই প্রশ্নেই আবার মহাসচিবের বাণী: বিজেপি ত্রিপুরায় ৯০ শতাংশ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতিয়াছিল, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি নেতাদের ‘নিজেদের আয়নায়’ মুখ দেখিতে হইবে। ইহার গূঢ় অর্থটি ঠিক কী? নাগরিকের ভোটাধিকার আজ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিকট বাহুল্য বোধ হইতেছে, সুযোগ পাইলে তাহা খারিজ করিতে দল দ্বিধা করিবে না— এই ভয়ানক বার্তাটিই রাজ্যের নাগরিকদের নিকট পৌঁছাইতেছে না কি? মুখ্যমন্ত্রী নিজে পুরভোটের সাফল্যকে ‘নম্র ও দায়িত্বশীল’ হইবার প্রেরণা হিসাবে অভিহিত করিয়াছেন। সাধু। কিন্তু কথা এবং কাজের মধ্যে ফারাক থাকিলে কথার মূল্য থাকে না, এই সত্যটি নিশ্চয়ই তাঁহার অজানা নহে। রাজ্যের ভোটচিত্রটি ক্রমাগত কলুষিত হইয়া চলিয়াছে। এই কলুষের স্পর্শ হইতে কিন্তু তাঁহারও অব্যাহতি নাই।

অন্য বিষয়গুলি:

TMC WB Municipal Election
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy