Advertisement
২৪ অক্টোবর ২০২৪
Kolkata Police

পুলিশের কাজ

পুলিশ বাহিনীর ভরসায় রাজ্যের মেয়েরা নির্ভয়ে নাইট ডিউটি করবেন, ট্রেনে-বাসে বাড়ি ফিরবেন গভীর রাতেও, এমন আশায় বুক বাঁধা একটু কঠিন হয়।

শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০২৪ ০৯:৩৪
Share: Save:

মেয়েদের সুরক্ষা আরও জোরদার করবে পুলিশ, নারী-হিংসার প্রতি ‘জ়িরো টলারেন্স’ মনোভাব নেবে, পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের এই ঘোষণায় রাজ্যবাসীর আশ্বস্ত হওয়ারই কথা ছিল, কিন্তু গত কয়েক দিনের ঘটনা দেখার পরে ঠোঁটের কোণে বিদ্রুপের হাসি ফোটার সম্ভাবনাই বেশি। ১৪ অগস্ট রাতে রাজ্য জুড়ে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের মধ্যে দুষ্কৃতীদের একটি দল যখন আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে হানা দিয়ে ভাঙচুর চালাল, তখন ইমার্জেন্সিতে কর্মরত নার্স, মহিলা-চিকিৎকদের বাঁচানোর চাইতে পুলিশ নিজেদের বাঁচানোতেই বেশি ব্যস্ত হয়ে উঠল। বরং সংবাদে জানা গেল যে, পুলিশকর্মীরা নার্সদের কাছে নিরাপত্তা ভিক্ষা করেছেন, উর্দি খুলে রোগী সাজার চেষ্টা করেছেন, কম্বলের তলায় লুকিয়েছেন। এই পুলিশ বাহিনীর ভরসায় রাজ্যের মেয়েরা নির্ভয়ে নাইট ডিউটি করবেন, ট্রেনে-বাসে বাড়ি ফিরবেন গভীর রাতেও, এমন আশায় বুক বাঁধা একটু কঠিন হয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও পুলিশ কমিশনার এই ঘটনায় দুষ্কৃতীদের নিন্দা করেছেন এবং পুলিশের প্রতি সহানুভূতি জানিয়েছেন। তাঁরা এক বারও পুলিশের ব্যর্থতা স্বীকার করেননি। অথচ, আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিরাপত্তার অভাব এবং তার সুযোগে নারী-হিংসার ভয়ঙ্কর নিদর্শন সামনে আসার এক সপ্তাহের মধ্যে দেখা গেল, ফের ওই হাসপাতালেরই কর্মরত মহিলা-চিকিৎসক, নার্স, ছাত্রীদের সশস্ত্র দুষ্কৃতীদের সামনে ফেলে পালাল পুলিশ।

এই প্রেক্ষিতে লালবাজার থেকে ঘোষিত ১৫ দফা নির্দেশিকা দেখলে আশ্বস্ত বোধ করা মুশকিল। পুলিশকে মেয়েদের আস্থা ফিরে পেতে হলে তাদের ঝুঁকি নেওয়ার সাহস দেখাতে হবে। কেবল মিডিয়ার সামনে পুলিশকর্তার বিবৃতি মেয়েদের ভরসা অর্জন করতে পারবে না। তবে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও, লালবাজার-ঘোষিত দফা সুরক্ষা বিধির পর্যালোচনাও দরকার। কারণ রাষ্ট্র মেয়েদের সুরক্ষা দিতে দায়বদ্ধ, এবং পুলিশ বাহিনীই সেই দায়িত্ব পালন করার জন্য নির্দিষ্ট। পুলিশের কাজে ফাঁক রয়ে যাচ্ছে বলেই অগণিত মেয়ে প্রতি দিন কর্মক্ষেত্রে, যাতায়াতের পথে আক্রান্ত হচ্ছেন, অসম্মানিত হচ্ছেন। আক্রমণ ও অমর্যাদার ভয়ে বহু মেয়ে কাজের জগৎ থেকে সরে যাচ্ছেন। পুলিশের সশরীরে টহলদারি বাড়ানো, রাস্তায় এবং কর্মক্ষেত্রে আরও বেশি সিসিটিভি বসানো, মেয়েদের কর্মক্ষেত্রে, হস্টেলে, হোমে নিরাপত্তা ব্যবস্থার পর্যালোচনা করে তাকে আরও শক্তিশালী করা, এ সবই অত্যন্ত জরুরি কাজ। সম্ভবত সবচেয়ে আশাজনক নির্দেশটি হল, স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী, সরকারি হাসপাতালের কর্মী-চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে সুরক্ষায় ফাঁক খুঁজবে পুলিশ।

সুরক্ষার ব্যবস্থাকে মেয়েদের প্রয়োজনের প্রতি সংবেদনশীল করতে হলে, মেয়েদের আস্থা অর্জন করতে হলে, তাঁদের সঙ্গে নিয়মিত সদর্থক সংলাপ অত্যন্ত জরুরি। কথাবার্তা বলার তালিকায় রাখতে হবে মহিলা হকার, মহিলা ব্যবসায়ী, মহিলা নির্মাণ কর্মীদের, যাঁরা দিন-রাতের অনেকটা সময় কাটান রাস্তায় বা উন্মুক্ত কর্মক্ষেত্রে। বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ থেকে চটকল, ইটভাটা, সব কর্মস্থলে নজরদারি চাই। সব শ্রেণির মহিলা কর্মীর জন্য, শহর-গ্রামের সর্বত্র নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে পুলিশ ও প্রশাসন দায়বদ্ধ। সর্বোপরি, পুলিশকে দুষ্কৃতীদের সংসর্গ থেকে মুক্ত হতে হবে। যে পুলিশ অবৈধ মদের ঠেক চলতে দেয়, সেই পুলিশই মহিলাদের জন্য রাস্তা সুরক্ষিত করবে, এই দাবি অসার। মেয়েদের উপর যারা ধারাবাহিক ভাবে নির্যাতন চালাচ্ছে, তারা রাজনৈতিক ক্ষমতার ছায়ায় থাকে বলে পুলিশ তাদের দেখেও দেখে না, তা কি মেয়েরা বোঝেন না? মেয়েদের নিরাপত্তা দিতে হলে পুলিশের আপদমুক্তি দরকার। ক্ষমতাসীনের নয়, নাগরিকের সুরক্ষার প্রতি পুলিশ দায়বদ্ধ— এই নীতি পালন করুক পুলিশ।

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkata Police Vineet Goyal Police Commissionerate
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE