ইমরান খান। ফাইল চিত্র।
পনেরো বছর আগের স্মৃতিই যেন ফিরে এসেছিল পাকিস্তানে। ২০০৭-এ নির্বাচনের প্রাক্কালে রাওয়ালপিন্ডির এক রাজনৈতিক সমাবেশে হত্যা করা হয় বেনজির ভুট্টোকে, ২০২২-এর নভেম্বরে ওয়াজ়িরাবাদে বিরোধী দলপ্রধান ইমরান খানের উপর গুলি-হামলা চলল। এও ছিল এক রাজনৈতিক পদযাত্রা, পাকিস্তানে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিতে, নির্বাচন এগিয়ে আনার দাবিতে লাহোর থেকে ইসলামাবাদ অবধি ‘লং মার্চ’। নেতার জীবন বেঁচেছে, হামলাকারী ধরা পড়েছে, এটা স্বস্তির। কিন্তু জননেতার উপরে, বিশেষত গণতান্ত্রিক প্রথা মেনে আহূত রাজনৈতিক জনসমাবেশে এই আঘাত অত্যন্ত নিন্দনীয়, বৃহত্তর বিচারে তা গণতন্ত্রের উপরেই আঘাত। ইমরানের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ নির্দেশ দিয়েছেন তদন্তের, আমেরিকার সেক্রেটারি অব স্টেট পাকিস্তানের সব দলকে রাজনৈতিক হিংসার ঊর্ধ্বে ওঠার বার্তা দিয়েছেন, ভারতের বিদেশ মন্ত্রক পাকিস্তানের পরিস্থিতির উপর নজর রাখার সতর্ক বিবৃতি প্রকাশ করেছে।
পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি যে এর জেরে আবারও তপ্ত হতে চলেছে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। ভারত-পাক কূটনৈতিক সম্পর্কেও তার আঁচ লাগতে বাধ্য। ইমরান খান ক্রিকেটীয় কারণে ভারতে সুবিদিত ও জনপ্রিয়, ২০১৮-তে তাঁর প্রধানমন্ত্রিত্বের দৌড়ে থাকার ঘোষণায় এ দেশে সাড়া পড়েছিল, ভারতের সঙ্গে শান্তিপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তাঁর প্রতিশ্রুতিতে আশা জেগেছিল। সেই আশা পূরণ হয়নি, ইমরান খানের প্রধানমন্ত্রিত্বে ভারত-পাক সম্পর্ক উন্নত হয়নি। ২০১৯-এ ভারতীয় সেনা কনভয়ে আত্মঘাতী হামলায় পাক জঙ্গি গোষ্ঠী জৈশ-ই-মহম্মদের নাম উঠে আসা, সে বছরেই ভারত সরকার কর্তৃক কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা অবলুপ্তির পরিপ্রেক্ষিতে ইমরানের বিবৃতি, বাণিজ্যসম্পর্ক ছেদ ও সামরিক তীব্রতা বৃদ্ধির হুমকি ইত্যাদির পর থেকে দুই দেশের কূটনীতিতে অচলাবস্থা চলেছে। ও দিকে পাকিস্তানে অভ্যন্তরীণ গোলযোগও কম নয়, গদিচ্যুত হওয়ার পর থেকেই ইমরান খান তাঁর বিরুদ্ধে শাহবাজ় শরিফ এবং পাক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর রাজনৈতিক চাল, যোগসাজশ ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগে মুখর, পাক সামরিক শীর্ষনেতৃত্ব সম্পর্কেও সরব। পাকিস্তানের রাজনীতিতে সামরিক শক্তির হস্তক্ষেপ পরিচিত ঘটনা; বিশেষজ্ঞদের মতে পঁচাত্তর বছর পরে আজও সেনাই সেখানে ক্ষমতার মুখ্য নিয়ামক, আবার আইএসআই, মৌলবাদী জঙ্গি গোষ্ঠী এমনকি বিচারব্যবস্থার প্রভাবও কম নয়— এই বিবিধ নিয়ন্ত্রকই সেখানে নেতাকে ক্ষমতাসীন বা ক্ষমতাচ্যুত করে, ইমরানও ব্যতিক্রম নন।
ক্ষমতার কুটিল ছক, কূটনীতির জটিল সমীকরণ ছাপিয়েও ইমরান খানের উপর গুলি-হামলার ঘটনা সর্বার্থে নিন্দার্হ; বিরোধী নেতার উপরে আঘাতে পাকিস্তানে গণতন্ত্রের আক্রান্ত রূপটিই ফুটে উঠল। আশার কথা, ইমরান খানের দল গণতান্ত্রিক পথেই এর মোকাবিলা করছে, থমকে যাওয়া লং মার্চ ফের শুরু হয়েছে গুলি-হামলাস্থল থেকেই, দু’সপ্তাহের মধ্যে মিছিল রাওয়ালপিন্ডি পৌঁছলে নেতা আবার যোগ দেবেন তাতে। ও দিকে পাক প্রশাসনও বৈদ্যুতিন মাধ্যমে তাঁর সাংবাদিক বৈঠক সম্প্রচারের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। হামলার সুষ্ঠু তদন্ত হয় কি না সেটিই দেখার— এবং ভবিষ্যৎ পাক রাজনীতির গতিপ্রকৃতিও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy