আজও উচ্চতর গবেষণায় নিযুক্ত মহিলা-বিজ্ঞানীদের সংখ্যা পুরুষদের অনুপাতে কম। প্রতীকী ছবি।
বিজ্ঞানের গবেষণায় আরও বেশি মহিলাকে উৎসাহিত করতে বিশেষ অনুদানের কথা ঘোষণা করল কেন্দ্রীয় সরকার। ‘কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ’-এর এই প্রকল্পে রসায়ন, জীবন বিজ্ঞান, ভৌত বিজ্ঞান, প্রযুক্তিবিদ্যা প্রভৃতির ক্ষেত্রে গবেষণার জন্য আবেদন করতে পারেন পিএইচ ডি অথবা পোস্ট ডক্টরাল স্তরে পাঠরত মহিলারা। বিজ্ঞান-প্রযুক্তির বহু গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার ও উদ্ভাবন মেয়েরা করেছেন, বহু গবেষণা সংস্থার নেতৃত্বে রয়েছেন তাঁরা। তবু আজও উচ্চতর গবেষণায় নিযুক্ত মহিলা-বিজ্ঞানীদের সংখ্যা পুরুষদের অনুপাতে কম। বিশ্বে এই গড় আটাশ শতাংশ, ভারতে মহিলা-বিজ্ঞানীদের উৎসাহিত করার নানা সরকারি প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তা এখনও অবধি কুড়ি শতাংশে পৌঁছয়নি। ভারতে বিজ্ঞানের কিছু শাখায় স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর স্তরে মহিলাদের সংখ্যা অর্ধেক বা তারও বেশি থাকে, বিজ্ঞানে পিএইচ ডি ডিগ্রিপ্রাপ্তদের মধ্যে মেয়েদের অনুপাত চল্লিশ শতাংশের আশেপাশে। কিন্তু তার পর দ্রুত কমতে থাকে। সাতানব্বইটি বিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল, পুরো সময়ের গবেষক ও শিক্ষকদের মধ্যে মহিলা মাত্র তেরো শতাংশ। গত বছরে প্রকাশিত এই তথ্য যেমন এক দিকে ভারতের বৈষম্যদুষ্ট সমাজের পরিচয়, তেমনই মানবসম্পদের অপচয়ের সাক্ষ্যও বহন করে।
কেন এত মেয়ে বিজ্ঞানের জগৎকে ভালবেসে তাতে প্রবেশ করে, নানা প্রতিযোগিতায় প্রতিভার প্রমাণ রেখেও বিজ্ঞান চর্চায় থাকতে পারছেন না? এ প্রশ্নটি করা জরুরি, কারণ সাম্য বিধানের সূত্রটিও লুকিয়ে রয়েছে এর উত্তরে। মেয়েদের জন্য পৃথক অনুদান আদৌ কার্যকর হবে, না কি হিতে বিপরীত ঘটাবে, সে প্রশ্নও উঠেছে। তবে কি মূলস্রোতের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণে মেয়েরা সক্ষম নয় বলেই তাঁদের জন্য বরাদ্দ ‘সংরক্ষণ’ করতে হচ্ছে? এমন সংশয় জাগার সুযোগ রাখাই উচিত নয়, কারণ গবেষণার উৎকর্ষের নিরিখে ভারতীয় মহিলা-বিজ্ঞানীরা নিজেদের কৃতিত্বের পরিচয় বরাবরই রেখে এসেছেন। বরং উদ্বেগ দেখা দিয়েছে, মেয়েদের প্রকল্পটির জন্য আলাদা বরাদ্দ হবে কি না। সে বিষয়ে অবশ্য কেন্দ্রের নতুন প্রকল্পের ঘোষণা নীরব। বর্তমানে বিজ্ঞানের গবেষণার সরকারি বরাদ্দ অতি সামান্য। সেই অর্থকেও নানা স্রোতে ভাগ করে দিতে থাকলে আখেরে ক্ষতি হবে গবেষণারই।
মেয়েদের বিজ্ঞানচর্চা ব্যাহত হওয়ার কিছু কারণ নানা সূত্র থেকে মেলে। প্রথমত, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে বিয়ে ও সন্তানধারণের প্রত্যাশা মেয়েদের উপর চাপ তৈরি করে। যার ফলে গবেষকের কর্মজীবনে পুরোদস্তুর প্রবেশের সময়েই অনেক মেয়ে সরে যান। তাঁদের প্রয়োজন সন্তান প্রতিপালনে সহায়তার ব্যবস্থা। সেটা হতে পারে বিশেষ অনুদান, না হলে বিশেষ পরিষেবার মাধ্যমে। কিছু দিন সরে থাকার পর মহিলা-বিজ্ঞানীরা যাতে ফের কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করতে পারেন, তার ব্যবস্থাও দরকার। দ্বিতীয়ত, উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক স্তরে বিজ্ঞান শিক্ষার সুযোগ অধরা থাকছে বহু মেয়ের কাছে। বিজ্ঞানের পাঠ ব্যয়বহুল, এই ধারণা থেকে পরিবার উৎসাহী হয় না। সেই সঙ্গে, বহু ব্লক, মহকুমায় মেয়েদের হাই স্কুলগুলিতে বিজ্ঞান পড়ার সুযোগ থাকে না। পরিকাঠামোর এই সব ঘাটতি পূরণ করার জন্য কোনও একটি প্রকল্প নয়, প্রয়োজন বহুমুখী পরিকল্পনা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy