ফাইল চিত্র।
পশ্চিমবঙ্গ প্রমাণ করিয়াছে যে, এই রাজ্য পারে। বিভেদকামী শক্তিকে রুখিয়া দিতে পারে, রাজ্যের উদারবাদী সহিষ্ণু চরিত্রটি রক্ষা করিতে পারে। এক্ষণে প্রশ্ন, পশ্চিমবঙ্গ পারিবে কি? রাজনৈতিক হিংসার যে উত্তরাধিকার এই রাজ্য বহন করিয়া চলিতেছে, যে রাজনৈতিক হিংসার নিরিখে গোটা দেশে পশ্চিমবঙ্গ কার্যত অপ্রতিদ্বন্দ্বী হইয়া উঠিয়াছে, তাহা হইতে এই রাজ্য কি নিজেকে উদ্ধার করিতে পারিবে? এই প্রশ্নের উত্তর নাগরিকদের খুঁজিতে হইবে— তাহারও অধিক খুঁজিতে হইবে প্রশাসনকে, রাজ্যের রাজনৈতিক অভিভাবকদের। তাঁহারা পশ্চিমবঙ্গকে হিংসামুক্ত দেখিতে চাহেন কি না, তাহার উপরই নির্ভর করিতেছে রাজ্যের উত্তরণের সম্ভাবনা। শপথ গ্রহণ করিয়াই মুখ্যমন্ত্রী জানাইয়াছেন, যে দলই সন্ত্রাস করুক, তিনি তাহা বরদাস্ত করিবেন না; প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে। কথাটি যে শুধুই মৌখিক নহে, আন্তরিক— তাহা প্রমাণ করিবার দায় মুখ্যমন্ত্রীর উপরই বর্তায়। বিশেষত, অতীত অভিজ্ঞতা তাঁহার পক্ষে সাক্ষ্য দিবে না। অবশ্যই, শুধু তৃণমূল কংগ্রেসের আমলেই নহে, তাহার পূর্বসূরি বাম জমানায়, এবং তাহারও পূর্বের কংগ্রেস-পর্বেও যথাযথ রাজনৈতিক আনুগত্যই ছিল যে কোনও অন্যায় আচরণের ছাড়পত্র। পুলিশ-প্রশাসন সকলই ক্রমে রং বিচারে অভ্যস্ত হইয়াছে। এই স্থিতিজাড্য কাটাইতে হইলে মুখ্যমন্ত্রীকে সম্মুখে দাঁড়াইয়া নেতৃত্ব দিতে হইবে।
রাজনৈতিক হিংসা যে কোনও সময়েই নিন্দনীয়, পরিত্যাজ্য। তাহা সর্বার্থেই মানুষের ব্যক্তিস্বাধীনতার, সংবিধানস্বীকৃত অধিকারের বিরোধী। কিন্তু, বর্তমান বঙ্গে এই হিংসা আরও দুইটি কারণে বর্জনীয়। প্রথমত, বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ দ্ব্যর্থহীন ভাবে জানাইয়াছেন যে, তাঁহারা বিভেদনীতির বিরুদ্ধে, সম্প্রীতির পক্ষে। সেই বিভেদ শুধু ধর্মীয় বা জাতিগত পরিচিতির ভিত্তিতে নহে— যে কোনও বিভেদই নিন্দনীয়। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চলিতে দিলে রাজ্যবাসীর এই রায়ের অন্তর্নিহিত অনুজ্ঞার অসম্মান করা হয়। পশ্চিমবঙ্গ শান্তির পক্ষে ভোট দিয়াছে— সেই শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যাহা করা প্রয়োজন, করিতে হইবে। দ্বিতীয়ত, রাজ্য জুড়িয়া যদি অশান্তি চলিতে থাকে, তাহাতে সেই শক্তিরই সুবিধা, যাহারা রাজ্যকে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরিয়া আসিতে দিতে চাহে না; যাহারা অস্থিরতাকে বাড়াইয়া রাজ্যে শাসনহীনতা প্রমাণ করিতে চাহে। মুখ্যমন্ত্রীকে বুঝিতে হইবে যে, নির্বাচন জয়েই তাঁহার যুদ্ধ শেষ হয় নাই। প্রতি মুহূর্তে বিভেদকামী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই জারি থাকিবে।
বিভেদকামী শক্তি কতখানি বিষধর, কী রূপ মারাত্মক হইতে পারে, পশ্চিমবঙ্গে তাহার হাতে-গরম প্রমাণ মিলিতেছে। নির্বাচন-উত্তর সন্ত্রাসের ঘটনাকে বাড়াইয়া চড়াইয়া প্রচার করা বা ভিন্রাজ্যের ছবি দিয়া সন্ত্রাসের ‘ফেক নিউজ়’ প্রচার করা তো চলিতেছে বটেই, কিন্তু তাহাও তুলনায় নির্বিষ। ভয়ঙ্কর হইল, প্রতিটি ঘটনাতেই মিথ্যা সাম্প্রদায়িক রং চড়ানো হইতেছে। পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক সন্ত্রাসের কলঙ্কিত ইতিহাসও সাক্ষ্য দিবে যে, এই রাজ্যে ধর্ম বাছিয়া সন্ত্রাস হয় না। কিন্তু, ঠিক সেই অপপ্রচারটিই অত্যন্ত সঙ্ঘবদ্ধ ভাবে, পরিকল্পিত পথে করা হইতেছে। তাহার পিছনে কাহার সংগঠন আছে, এবং এই বিভেদ বাড়িলে কাহাদের রাজনৈতিক লাভ, এই প্রশ্নগুলির উত্তর রাজ্যবাসী সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতায় জানেন। বিজেপির ভূতপূর্ব রাজ্যসভার সাংসদ ও বিধানসভা নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী স্বপন দাশগুপ্তের ন্যায় নেতারা অবশ্য অনুমানের সুযোগটুকুও রাখেন নাই। তাঁহারা সমাজমাধ্যমে সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং অত্যন্ত বিপজ্জনক সাম্প্রদায়িক প্রচার চালাইতেছেন। এই ভয়ঙ্কর প্রবণতায় রাশ পরানো প্রয়োজন। সর্বাগ্রে আগুন নিবাইতে হইবে— ইহাই প্রশাসনের নিকট শান্তিকামী পশ্চিমবঙ্গের দাবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy