Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
Domestic Workers

গৃহশ্রমের মূল্য

বহু বাঙালি মহিলা ভিন রাজ্যে পরিচারিকার কাজ করেন। তাঁদের সুরক্ষার ব্যবস্থাও প্রয়োজন। কেবলই আইন প্রণয়ন নয়, চাই সরকারের সুসংহত উদ্যোগ।

গৃহশ্রমিকের কাজের পরিমাপ করা কঠিন। কেউ কয়েক ঘণ্টা, কেউ রাত-দিনের কাজ করেন।

গৃহশ্রমিকের কাজের পরিমাপ করা কঠিন। কেউ কয়েক ঘণ্টা, কেউ রাত-দিনের কাজ করেন। প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০২২ ০৫:৫১
Share: Save:

অবশেষে গৃহ-পরিচারিকাদের ন্যূনতম পারিশ্রমিক নির্ধারণ করার অঙ্গীকার করল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, আগামী তিন মাসের মধ্যে গৃহ-শ্রমিকদেরও ন্যূনতম পারিশ্রমিক আইনের (১৯৪৮) অন্তর্গত করা হবে। দিল্লি, কেরল, তামিলনাড়ু-সহ দশটি রাজ্য ইতিমধ্যেই সে কাজটি করে ফেলেছে। যদিও গৃহ-পরিচারকদের যথার্থ সংখ্যা নিরূপণ করা কঠিন, তবু কেন্দ্রের হিসাবে ভারতে চল্লিশ লক্ষেরও বেশি গৃহ-শ্রমিক কাজ করছেন, তাঁদের অধিকাংশই মহিলা। কেন্দ্র ‘ই-শ্রম’ পোর্টাল খোলার পরে পশ্চিমবঙ্গের অন্তত আড়াই লক্ষ মহিলা নিজেদের ‘গৃহ-শ্রমিক’ পরিচয় দিয়ে সেখানে নথিভুক্ত করেছেন, তাঁদের অধিকাংশ দক্ষিণ ২৪ পরগনার। কেন্দ্র গৃহ-শ্রমিকদের জন্য জাতীয় নীতি প্রকাশ করেছে ২০১৯ সালে। খসড়া নীতিতে অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকের মতোই গৃহ-শ্রমিকদেরও ন্যূনতম বেতন, সামাজিক সুরক্ষা, নির্যাতন ও বঞ্চনা থেকে সুরক্ষার অধিকারের মতো সুবিধাগুলি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কর্মক্ষেত্রে হয়রানির প্রতিকার পাওয়ার জন্য বিশেষ বিচারব্যবস্থা তৈরির সুপারিশও রয়েছে। কিন্তু, তাতেও যে পশ্চিমবঙ্গে সহজে এ ব্যবস্থা হবে, এমন আশা করা মুশকিল। শ্রমমন্ত্রী ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন, বিষয়টি অত্যন্ত জটিল। প্রথমত, গৃহ-পরিচারকদের নিয়োগকারী গৃহস্থ পরিবার— কোনও বাণিজ্যিক সংস্থা বা অপর কোনও প্রতিষ্ঠান নয়। ফলে আইন তৈরি করলেও তাকে কার্যকর করা কঠিন। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, গৃহস্থ পরিবারগুলি মনে করে যে, তারা গৃহ-শ্রমিকদের প্রতি অত্যন্ত দরাজ। যদিও পাঁচ থেকে আটটি বাড়িতে কাজ না করলে অদক্ষ শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরিও রোজগার করতে পারবেন না গৃহ-শ্রমিকরা, বেঙ্গালুরু ও চেন্নাইয়ে তা দেখেছেন গবেষকরা। পশ্চিমবঙ্গেও ছবিটি আলাদা নয়।

দ্বিতীয় সমস্যা, গৃহশ্রমিকের কাজের পরিমাপ করা কঠিন। কেউ কয়েক ঘণ্টা, কেউ রাত-দিনের কাজ করেন। রান্না, শিশুপালন, বা বয়স্কদের পরিচর্যার জন্য যথেষ্ট দক্ষতার প্রয়োজন হলেও, গৃহ-শ্রমিকদের সাধারণত অদক্ষ শ্রমিক বলেই গণ্য করা হয়। রাজ্যে গৃহ-শ্রমিকদের একটি সংগঠনের দাবি, ঘণ্টায় পঁচাত্তর টাকা ন্যূনতম মজুরি, এবং মাসে চার দিন ছুটি। সরকার রাজি হলেও, গৃহস্থ হবে কি? অথচ, গৃহ-শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি, যথেষ্ট বিশ্রামের প্রয়োজন নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। অতিমারি-জনিত লকডাউনের সময়ে তাঁদের অর্ধাহার, দীর্ঘ কর্মহীনতা, বকেয়া মজুরি থেকে বঞ্চনা, এ সব দেখে তাঁদের নিরাপত্তাহীনতার আন্দাজ হয়েছিল সমাজের। পশ্চিমবঙ্গে গৃহশ্রম সম্ভবত মেয়েদের বৃহত্তম কর্মক্ষেত্র। বহু মহিলা পরিচারিকার কাজ করে একাই সন্তান প্রতিপালন করছেন। অবসর ভাতার সুযোগ নেই বলে বয়স বাড়লে, অথবা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁরা দ্রুত দারিদ্রে পতিত হন। তাঁদের যথাযথ মজুরি ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করা গেলে মানব উন্নয়নও ব্যাহত হতে বাধ্য। তবে গৃহ-শ্রমিকদের প্রতি রাষ্ট্রের কর্তব্য কেবল ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণেই শেষ হয় না। সুলভ আবাস, নিরাপদ পরিবহণ, পরিচয়পত্র দান, পুলিশি হয়রানির অবসান, এই সবও প্রয়োজন। বহু বাঙালি মহিলা ভিন রাজ্যে পরিচারিকার কাজ করেন। তাঁদের সুরক্ষার ব্যবস্থাও প্রয়োজন। কেবলই আইন প্রণয়ন নয়, চাই সরকারের সুসংহত উদ্যোগ।

অন্য বিষয়গুলি:

Domestic Workers Wage West Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE