Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Industrial Area

লাভ-ক্ষতির হিসাব

জমি পাওয়ার পর তাতে শিল্প না গড়ে সেই জমি ফেলে রাখলে কিছু বছর পর তার মালিকানা স্বত্ব পাওয়া যাবে, এমন একটি নিশ্চয়তা থাকলে তা যে প্রণোদনার জন্ম দেবে, শিল্প ভবিষ্যতের পক্ষে ইতিবাচক নয়।

An image of land

—প্রতীকী চিত্র।

শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৫:০৭
Share: Save:

শোনা যাচ্ছে, শিল্পের জন্য লিজ়ে দেওয়া, কিন্তু শিল্প তৈরি হয়নি, এমন জমি নিয়ে রাজ্য সরকারের ভাবনা একটি নতুন খাতে গড়াচ্ছে। এত দিন নিয়ম ছিল যে, জমি হাতে পাওয়ার পাঁচ বছরের মধ্যে যদি শিল্প গড়ে না ওঠে, তা হলে সরকার সেই জমি ফিরিয়ে নিতে পারে। এখন ভাবা হচ্ছে, একটি নির্দিষ্ট অনুপাতে জরিমানা আদায় করে জমির মালিকানা স্বত্ব দিয়ে দেওয়া হবে সেই শিল্পপতিদেরই। তার পর সে জমিতে তাঁরা কী করবেন, তা নিয়ে রাজ্যের আর কোনও মাথাব্যথা থাকবে না। এই ভাবনাটি যে একেবারে যৌক্তিকতাহীন, তা বলা যায় না। প্রথমত, জমি ফিরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়াটি সহজ নয়। যে জমিই সরকার ফিরিয়ে নিতে চাক, তাতে মামলা হওয়া প্রায় অনিবার্য। ফলে, শিল্পও হবে না, সরকারের হাতে জমির মালিকানাও ফিরবে না। দ্বিতীয়ত, এই রাজ্যে শিল্প গঠনের তেমন চাহিদা নেই। ফলে, জমি ফিরিয়ে নিয়ে রাজ্য সরকারের যে বিশেষ লাভ হবে, তা-ও নয়। বরং, জরিমানা বা জমির চরিত্র পরিবর্তন হেতু যে টাকা সরকারের হাতে আসবে, তলানিতে ঠেকা রাজকোষের পরিপ্রেক্ষিতে তা তাৎপর্যপূর্ণ। অন্য দিকে, জমির মালিকানা স্বত্ব পেলে তার একাংশ বিক্রি করে যে টাকা হাতে আসবে, কোনও শিল্পপতি সেই টাকাকে প্রাথমিক পুঁজি হিসাবে ব্যবহার করে বাকি জমিতে শিল্প গড়ার কাজ শুরু করতে পারেন। অতএব, কেউ যুক্তি সাজাতেই পারেন যে, সরকারের প্রস্তাবিত এই নীতিটি বাস্তববাদী, ফলে গ্রহণীয়।

বাস্তববাদী হওয়ার প্রয়োজন অনস্বীকার্য, কিন্তু তাকেই সর্বাগ্রগণ্য যুক্তি হিসাবে বিবেচনা করার বিপদও প্রকট। জমি পাওয়ার পর তাতে শিল্প না গড়ে সেই জমি ফেলে রাখলে কিছু বছর পর তার মালিকানা স্বত্ব পাওয়া যাবে, এমন একটি নিশ্চয়তা থাকলে তা যে ইনসেনটিভ বা প্রণোদনার জন্ম দেবে, রাজ্যের শিল্প ভবিষ্যতের পক্ষে তা ইতিবাচক নয়। শিল্পগঠনের জন্য যে দামে এবং যে অঞ্চলে জমি পাওয়া যায়, তা খোলাবাজারে জোগাড় করা মুশকিল। ফলে, শিল্পের নামে জমি নিয়ে বছর পাঁচেক ফেলে রাখার পর কিছু জরিমানা দিয়ে তার চরিত্র বদল করে নেওয়া একটি লাভজনক পন্থা হতে পারে। বিশেষত এই রাজ্যে, যেখানে শিল্পের পথে অন্যতম বৃহৎ বাধাটির নাম শাসক দলের ছত্রছায়ায় থাকা সিন্ডিকেট। অনুমান করা চলে যে, শহর সংলগ্ন অঞ্চলে এমন জমির পরিমাণ বাড়বে। জমি যাঁর নামে, সেই শিল্পপতি লাভ-ক্ষতির হিসাব বুঝেই শিল্প গড়া অথবা না-গড়ার সিদ্ধান্ত নেবেন; শিল্প গড়া না হলে জমির চরিত্র পরিবর্তনের জন্য রাজকোষেও কিছু টাকা ঢুকবে— ফলে, এই সিদ্ধান্তে কোনও তরফেরই অন্তত স্বল্প বা মাঝারি মেয়াদে কোনও ক্ষতি নেই। কিন্তু, রাজ্যের নাগরিকদের, বিশেষত তরুণ জনগোষ্ঠীর, কী হবে?

রাজ্য শিল্পসম্ভাবনাহীন হলে নাগরিকদের কী অবস্থা হয়, সে কথা কলকাতার গান্ধী মূর্তির পাদদেশ জানে। শিক্ষকতার চাকরিকে ঘিরে এই বিপুল চাহিদা, এবং বিপুলতর দুর্নীতির বৃহত্তম কারণ কি এই নয় যে, পশ্চিমবঙ্গে শিল্পহীনতার কারণে বেসরকারি চাকরির সম্ভাবনা অতি ক্ষীণ? শিল্পের জন্য বরাদ্দ জমি যদি বিনা বাধায় অন্য কাজে ব্যবহৃত হওয়ার ছাড়পত্র পায়, এবং তার ফলে যদি শিল্পসম্ভাবনার আরও ক্ষতি হয়, তবে সেই ক্ষতির প্রত্যক্ষ শিকার হবেন এই রাজ্যের তরুণ প্রজন্ম। শুধু প্রত্যক্ষ চাকরিপ্রার্থীদেরই নয়, ক্ষতি অন্যদেরও। একটি শিল্পকে ঘিরে তৈরি হয় অনুবর্তী শিল্প এবং পরিষেবা ব্যবস্থা। ক্ষতি হবে তারও। এমন একটি পরিস্থিতিতে সর্বশক্তিতে শিল্পায়নের উদ্যোগ করা জরুরি ছিল। প্রয়োজনে শিল্পস্থাপনের জন্য লগ্নিকারীদের জন্য বিভিন্ন ইতিবাচক প্রণোদনার ব্যবস্থা করা যেত। জমি ফিরিয়ে নেওয়ার সংঘাতের পথে নয়, সহযোগিতার মাধ্যমেই পরিস্থিতির উন্নতিসাধন সম্ভব ছিল। জমি বিষয়ক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় রাজ্য সরকার সেই সামগ্রিক ছবিটিকে নজরে রাখছে কি?

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy