Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
University Grants Commission

উচ্চশিক্ষার ভাষা

উচ্চশিক্ষা মানে একটি বিষয়ের আশ্রয়ে জ্ঞানচর্চার দিগন্ত প্রসারিত করা। এই প্রক্রিয়াটি স্থানিক নয়, সার্বিক। তাই প্রতিষ্ঠানটি ‘বিশ্ব’বিদ্যালয়।

An image representing books

উচ্চশিক্ষা মানে কি স্রেফ ইংরেজিতে দুর্বল পড়ুয়াদের মাতৃভাষা সহায়ে পরীক্ষার বৈতরণি পেরোনো? প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২৩ ০৬:৩৭
Share: Save:

তাৎক্ষণিক ও সুদূরপ্রসারী লাভের মধ্যে ফারাকটা দূরদৃষ্টির। ভারতে উচ্চশিক্ষার নীতি-নিয়ামকরা সুদূরপ্রসারী সুফলের কথা বলেন, তাঁদের কাজে দূরদর্শিতার ছাপ থাকে কি? বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সম্প্রতি দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে চিঠি পাঠিয়ে বলল, কোর্স বা পঠনপাঠন ইংরেজিতে হলেও যেন পড়ুয়াদের মাতৃভাষা বা প্রধান আঞ্চলিক ভাষায় পরীক্ষা দিতে দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলি যেন শিক্ষণ প্রক্রিয়ায় আঞ্চলিক বা স্থানীয় ভাষাকে গ্রহণ করে, ইংরেজি থেকে পাঠ্যবইগুলি ভারতীয় ভাষায় অনুবাদের ব্যবস্থা করে। এই সবই শিক্ষাক্ষেত্রে ভারতীয় ভাষার প্রচার-প্রসারে, শিক্ষার মাধ্যম হিসাবে ভাষাগুলির গুরুত্ব বাড়াতে। তা ছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা আর্থ-সামাজিক অবস্থানের পড়ুয়ারা পড়তে আসেন, অনেকেই ইংরেজি ভাল জানেন না বা লিখতে পারেন না, মাতৃভাষা তথা আঞ্চলিক ভাষায় পরীক্ষা দিতে পারলে এই ছাত্রদেরও সুবিধা হবে, ভারতীয় ভাষার কল্যাণে হীনম্মন্যতা দূর হয়ে ব্যক্তিত্বের বিকাশ হবে, সেও বড় পাওয়া।

এই সবই তত্ত্বগত ভাবে শুনতে ভাল, কিন্তু কার্যক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয়ে সতর্ক হওয়া চাই। উচ্চশিক্ষা মানে কি স্রেফ ইংরেজিতে দুর্বল পড়ুয়াদের মাতৃভাষা সহায়ে পরীক্ষার বৈতরণি পেরোনো? ইউজিসি যেমন বলছে, সেই মাতৃভাষা বা আঞ্চলিক ভাষার চর্চা নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ, অতি জরুরিও, কিন্তু একুশ শতকে উচ্চশিক্ষার পরিসরে ইংরেজির পরিবর্তে বা তাকে বাদ দিয়ে তা হতে পারে না। ইংরেজিতে দুর্বল ছাত্রদের মাতৃভাষায় পরীক্ষায় লিখতে দিলে তাঁরা তাৎক্ষণিক সঙ্কট উতরে যেতে পারেন, কিন্তু ‘উচ্চ’শিক্ষার উচ্চতায় পৌঁছতে পারবেন বলে মনে হয় না। তর্কের খাতিরে যদি ধরা যায় যে, এ রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে সার্বিক ভাবে বাংলা ভাষা, কিংবা পুরুলিয়ায় বা কোচবিহারে স্থানিক ভাষায় পরীক্ষা দেওয়ার বা গবেষণা-সন্দর্ভ জমা দেওয়ার বন্দোবস্ত হল, সেই পড়ুয়া নিজের এলাকার বাইরে যেতে চাইলেই কিন্তু আটকে যেতে পারেন। উপরন্তু মাতৃভাষা বা আঞ্চলিক ভাষায় পঠনপাঠন পরীক্ষা ইত্যাদির পরিকাঠামো বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে এখনও অপ্রতুল। মূল পাঠ্যবইগুলির বাংলা বা স্থানীয় ভাষায় সুলভ অনুবাদ, মাতৃভাষায় পরিভাষা তৈরি, গুণমানে মূলের সমকক্ষতা— এই সবই নিশ্চিত না করে স্রেফ পরীক্ষা পাশের জন্য মাতৃভাষা বা স্থানীয় ভাষার আশ্রয় নিলে তা শিক্ষার্থীকে বরং বেঁধে রাখবে সঙ্কীর্ণ গণ্ডিতে।

উচ্চশিক্ষা মানে একটি বিষয়ের আশ্রয়ে জ্ঞানচর্চার দিগন্ত প্রসারিত করা। এই প্রক্রিয়াটি স্থানিক নয়, সার্বিক; আঞ্চলিকতা ছাড়িয়ে বৈশ্বিকতায় উত্তীর্ণ, এ জন্যই প্রতিষ্ঠানটি ‘বিশ্ব’বিদ্যালয়। বিদ্যা তথা জ্ঞানের উন্মোচনে ভাষাজ্ঞানের প্রসার অতি জরুরি, বিশেষত সেটি যা বিশ্বচিন্তকদের চর্চার ভাষা। উচ্চশিক্ষায় মূল্যায়নও অতি জরুরি, প্রকল্প বা গবেষণা শেষে যা পাওয়া গেল তা যেন অনেকের কাছে পৌঁছতে পারে, তা নিশ্চিত করা দরকার। কেবল ডিগ্রি-লাভে নয়, বহু মতের সংযোগেই সেই শিক্ষার সার্থকতা। আঞ্চলিক ভাষায় এই সংযোগ নিশ্চয়ই সম্ভব, তারও বেশি সম্ভব ইংরেজিতে। কেউ উচ্চশিক্ষিত হয়ে আঞ্চলিক ভাষায় সমৃদ্ধ গবেষণা-সন্দর্ভ লিখলে তা অত্যন্ত বড় প্রাপ্তি। কিন্তু দরকার উল্টোটিও— মাতৃভাষাটি ভাল করে জানা, এবং অন্যান্য ভাষার হাত ধরে পৌঁছে যাওয়া বিশ্বপ্রাঙ্গণে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy