শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-পড়ুয়ার অনুপাতটি যথাযথ না হলে শিক্ষাদানের কাজ ব্যাহত হয়। প্রতীকী ছবি।
পশ্চিমবঙ্গের বেহাল সরকারি স্কুল শিক্ষাব্যবস্থার আলোচনা প্রসঙ্গে ইতিপূর্বে বহু বারই বিপর্যস্ত হয়ে পড়া পড়ুয়া-শিক্ষক অনুপাতের প্রসঙ্গটি উঠে এসেছে। এর পিছনে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উৎসশ্রী পোর্টালের ভূমিকাও কম সমালোচিত হয়নি। অভিযোগ, ২০২১ সালে চালু হওয়া উৎসশ্রী পোর্টালের সুবিধা নিয়ে বহু শিক্ষক গ্রাম বা জেলা থেকে নিজেদের শহরে চলে আসায় গ্রামের, বিশেষত প্রত্যন্ত অঞ্চলের বহু স্কুল প্রায় শিক্ষকশূন্য হয়ে পড়ে। বিপর্যয় আঁচ করে এক বছরের মধ্যেই এই পোর্টাল বন্ধ করে দেওয়া হলেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। এই অসুবিধা দূর করতে সম্প্রতি উদ্যোগী হয়েছে রাজ্যের শিক্ষা দফতর এবং স্কুল সার্ভিস কমিশন। কলকাতার শিক্ষকদের জেলায় পাঠানোর উদ্যোগ শুরু হয়েছে। জানা গিয়েছে, কলকাতার প্রায় ছ’শো শিক্ষককে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন স্কুলে বদলির সুপারিশপত্র তৈরি করা হয়েছে। আরও এক হাজার শিক্ষককে বিভিন্ন জেলায় বদলির প্রক্রিয়াও অচিরেই শুরু হবে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-পড়ুয়ার অনুপাতটি যথাযথ না হলে শিক্ষাদানের কাজ ব্যাহত হয়। এই রাজ্যের ক্ষেত্রে বাস্তবে তা-ই ঘটেছে। সর্বশিক্ষা মিশনে চল্লিশ জন পড়ুয়া পিছু এক জন শিক্ষক— এই অনুপাতের প্রস্তাব করা হয়েছিল। এ রাজ্যের ক’টি বিদ্যালয়ে এই অনুপাত মেনে চলা সম্ভব হচ্ছে? প্রত্যন্ত অঞ্চলে একই শিক্ষক একই সময়ে একাধিক ক্লাস নিতে বাধ্য হচ্ছেন, বা স্কুলের অশিক্ষক কর্মচারীকে দিয়ে পঠনপাঠনের কাজ চালানো হচ্ছে— এমন নিদর্শনও দেখা গিয়েছে। এমনকি, শিক্ষকের অভাবে উঁচু ক্লাসে বিজ্ঞানের মতো বিষয় পড়ানো বন্ধ হয়ে গিয়েছে, এমন উদাহরণও কম নয়। অথচ, এই অঞ্চলগুলিতে সরকারি বা সরকার পোষিত স্কুলের উপর ছাত্রছাত্রীদের নির্ভরতা শহরের তুলনায় অনেকটাই বেশি। শিক্ষকের অভাব ঘটলে এদের শিক্ষা সম্পূর্ণ হবে কি? অন্য দিকে, কলকাতার মতো শহরে সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত বাংলা মাধ্যম স্কুলগুলিতে পড়ুয়া সংখ্যা ক্রমহ্রাসমাণ, অথচ অনেক ক্ষেত্রেই শিক্ষকের সংখ্যা প্রয়োজনাধিক। এরই পরিপ্রেক্ষিতে কলকাতা হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণ ছিল, প্রয়োজনে কলকাতা থেকে শিক্ষক পাঠিয়ে গ্রামে শিক্ষকের অভাব পূরণ করতে হবে। অবশেষে সরকার যে সেই পথে হাঁটল, তা কিছুটা স্বস্তির কথা।
কিন্তু শুধুমাত্র বদলি দিয়ে স্কুলগুলিতে শিক্ষকের অভাব সম্পূর্ণ মেটানো সম্ভব নয়। লক্ষণীয়, কলকাতার অনেক নামী সরকারি স্কুলেও শিক্ষকের অভাবে পঠনপাঠন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সুতরাং, নিয়ম মেনে বদলির পাশাপাশি প্রয়োজন অনুসারে বিভিন্ন স্কুলে শূন্যপদগুলিতে নিয়োগের কাজটিও দ্রুত এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে সম্পন্ন করতে হবে। অস্বচ্ছতার অভিযোগ সাম্প্রতিক বদলির প্রক্রিয়াকে ঘিরেও উঠেছে। এ ক্ষেত্রে সঙ্কীর্ণ রাজনৈতিক লাভ-ক্ষতির হিসাব সরিয়ে পড়ুয়ার প্রয়োজনকে গুরুত্ব দিতে হবে। অতিমারিতে দীর্ঘ সময় স্কুল বন্ধ থাকার কারণে এ রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থা যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত। তদুপরি, শিক্ষকের অভাবে যদি এক শ্রেণির পড়ুয়া শিক্ষাবঞ্চিত থেকে যায়, তবে সার্বিক ভাবে তা রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি শুভ সঙ্কেত নয়। শিক্ষা প্রত্যেক শিক্ষার্থীর মৌলিক অধিকার। রাজনীতি যেন সেই অধিকারকে গ্রাস করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকেই। রাজ্যের সার্বিক ভবিষ্যতের স্বার্থে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy