Advertisement
০১ জানুয়ারি ২০২৫
India

মধ্যম পন্থা

মধ্যস্থতাকারীর কাজের কিছু সীমাবদ্ধতা থাকে। ভারতেরও রয়েছে। জয়শঙ্কর ভিয়েনা সফরে ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, শান্তি ফেরানোর দায় একা ভারতের নয়, বিশেষত রাশিয়ার মতো দেশের ক্ষেত্রে।

ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।

ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। ছবি: পিটিআই।

শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০২৩ ০৬:১৮
Share: Save:

ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসন থামাতে নতুন বছরে নয়াদিল্লিকে আরও সক্রিয় ভূমিকায় দেখতে চায় পশ্চিমি দুনিয়া। জি২০ সম্মেলনের সভাপতি হওয়ার সুবাদে এই বছর ভারতকে নিয়মিত ভাবে গোষ্ঠীভুক্ত বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক কর্মসূচিতে যোগ দিতে হচ্ছে। ফলে, আগামী সেপ্টেম্বরে সম্মেলনের শীর্ষ বৈঠক তো বটেই, মস্কোর উপরে প্রভাব খাটিয়ে হিংসা প্রশমনের সূত্র সন্ধানে নয়াদিল্লির উপরে ক্রমশই চাপ বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে সাম্প্রতিক অস্ট্রিয়া সফরে ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে যুদ্ধ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করতে দেখা গেল। একই সঙ্গে ভারতের উপরে সৃষ্ট কূটনৈতিক চাপের প্রেক্ষিতে অন্যান্য রাষ্ট্রের উদ্দেশে কিছু কড়া বার্তাও দিয়েছেন তিনি। আরও এক বার স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রথম থেকেই দু’দেশকে হিংসার বদলে সংলাপ ও কূটনীতির মাধ্যমে মীমাংসার পথ খুঁজতে বলে আসছে ভারত। এখনও পর্যন্ত গোটা পরিস্থিতিতে মধ্যপন্থীর ভূমিকাটি নিঃসন্দেহে দক্ষতার সঙ্গেই পালন করেছে ভারত, এই সরকারি দাবিকে কোনও ভাবেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

মূল প্রশ্নটি ছিল, বর্তমান পরিস্থিতিতে দিল্লি কি রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের দীর্ঘকালীন মৈত্রীর সম্পর্কটি উপেক্ষা করে পশ্চিমি ব্লকের সঙ্গে হাত মেলাবে, না কি মৈত্রীপথে অবিচল থাকবে। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, গত দেড়-দুই দশকে পশ্চিম, বিশেষ করে আমেরিকার সঙ্গে, ভারতের সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য উন্নতি সাধিত হয়েছে, পরমাণু চুক্তি, নৌ-মহড়া, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য— বিভিন্ন ক্ষেত্রেই ভারতের পাশে দাঁড়াতে দেখা গিয়েছে আমেরিকাকে। যদিও এ ক্ষেত্রে বিশেষ স্বার্থও রয়েছে তার: ৯/১১-উত্তর বিশ্বে, চিরাচরিত বিপক্ষ রাশিয়ার পাশাপাশি, এবং সবচেয়ে বড় কথা, সমগ্র এশিয়ায় চিনের ক্রমবর্ধমান আধিপত্য নিয়ন্ত্রণ রুখতে এই অঞ্চলে ভারত ছাড়া আর কোনও গুরুত্বপূর্ণ মিত্র কি আমেরিকার আছে? এরই মধ্যে গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনের উপরে রাশিয়ার আকস্মিক সামরিক হামলা গোটা বিশ্বের ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিকে একটা চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে। রাষ্ট্রপুঞ্জ-সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মঞ্চে যুদ্ধ বন্ধ করতে আমেরিকা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলি কূটনীতি তথা অর্থনৈতিক ভাবে রাশিয়াকে কোণঠাসা করে। ভারত তাতে সরাসরি কোনও পদক্ষেপ করে না, যদিও একাধিক পরিস্থিতিতে রাশিয়াকে যুদ্ধ থামানোর পরামর্শ দিয়ে এসেছে দিল্লি। পশ্চিমি দেশগুলির চাপের সামনেও ভারত তার অবস্থান পাল্টায়নি। এমনকি নিষেধাজ্ঞা থাকাকালীন রাশিয়া থেকে ভর্তুকিমূল্যে জ্বালানিও কিনেছে।

মধ্যস্থতাকারীর কাজের কিছু সীমাবদ্ধতা থাকে। ভারতেরও রয়েছে। জয়শঙ্কর ভিয়েনা সফরে ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, শান্তি ফেরানোর দায় একা ভারতের নয়, বিশেষত রাশিয়ার মতো দেশের ক্ষেত্রে। ফলে সম্মুখ সমর, না কি সংলাপ ও কূটনীতির মাধ্যমে রাশিয়া-ইউক্রেন সমস্যা মেটানো— ভাবতে হবে অন্যান্য দেশকেও। তবে, এই প্রক্রিয়ায় যদি ভারত অগ্রণী ভূমিকা নিয়ে শেষ পর্যন্ত শান্তি স্থাপন করতে পারে, তা হলে বিশ্বমঞ্চে তার মর্যাদা আরও বৃদ্ধি পাবে। পঞ্চাশের দশকে অনেক দুর্বল ভারত বিশ্বমঞ্চে শান্তিকামী ভূমিকা পালন করেছিল। একবিংশ শতকে তার শক্তি বেড়েছে না কমেছে, তা প্রমাণ করার সুযোগ এইখানেই।

অন্য বিষয়গুলি:

India Russia-Ukraine War
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy