Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Politics

রাজনীতির রাহুগ্রাস

পুরস্কার প্রাপক এবং প্রধান অতিথি একই মঞ্চে বিরাজমান হবেন, সৌজন্য বিনিময় করবেন, আনুষ্ঠানিক কর্তব্য পালন করবেন এবং যে যার পথে রওনা হবেন, এমনটাই হওয়ার কথা।

sharad pawer and narendra modi.

(বাঁ দিকে) এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ার এবং (ডান দিকে) প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০২৩ ০৫:১০
Share: Save:

দশচক্রে ভগবান ভূত হয় বটে, তবে রাজনীতির চক্র কোনও অংশে কম শক্তিশালী নয়। আপাতবিচারে স্বাভাবিক আচরণ রাজনীতির লীলায় অস্বাভাবিক হয়ে উঠতে পারে। নরেন্দ্র মোদী ও শরদ পওয়ারকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি তেমনই এক (অ)স্বাভাবিক ইতিবৃত্ত রচিত হল। মহারাষ্ট্রে লোকমান্য বালগঙ্গাধর তিলক আক্ষরিক অর্থেই এক ঐতিহাসিক পুরুষ হিসাবে স্বীকৃত ও বন্দিত। তাঁর নামে নামাঙ্কিত একটি সংস্থা দেশের প্রধানমন্ত্রীকে লোকমান্য তিলক জাতীয় পুরস্কারে সম্মানিত করেছে, আপাতবিচারে এই সিদ্ধান্তে চমৎকৃত হওয়ার কোনও কারণ ছিল না। প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসলে এমন অনেক শিরোপা আপনিই এসে থাকে। আবার, সেই উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মহারাষ্ট্রের প্রবীণ এবং দীর্ঘদিন যাবৎ সক্রিয় ও সর্বজনপরিচিত নেতা শরদ পওয়ারকে প্রধান অতিথির ভূমিকায় আমন্ত্রণ জানানোর ঘটনাকেও বিসদৃশ বলা চলে না। সুতরাং পুরস্কার প্রাপক এবং প্রধান অতিথি একই মঞ্চে বিরাজমান হবেন, সৌজন্য বিনিময় করবেন, আনুষ্ঠানিক কর্তব্য পালন করবেন এবং যে যার পথে রওনা হবেন, এমনটাই হওয়ার কথা। একটি সুস্থ এবং উদার পরিবেশে তা নিয়ে কথা ওঠার কোনও কারণ ছিল না।

কিন্তু ভারতীয় রাজনীতি এবং সেই রাজনীতির সর্বগ্রাসী প্রভাবে প্রভাবিত সমাজের পরিবেশকে আজ আর সুস্থ বা উদার বলার কোনও উপায় নেই। সেখানে যে কোনও প্রসঙ্গে যে কোনও উপলক্ষে দশদিশি জুড়ে একটিই প্রশ্ন অষ্টপ্রহর উচ্চারিত হয়ে চলেছে: আগে বলো তুমি কোন দলে। রাজনীতির ময়দান এবং সামাজিক সাংস্কৃতিক পরিসর একাকার হয়ে গিয়েছে। অতএব নরেন্দ্র মোদী এবং তাঁর দল তথা পুনরুজ্জীবিত এনডিএ জোটের প্রতিস্পর্ধী হিসাবে ‘ইন্ডিয়া’ নামক বিরোধী শিবির যখন ক্রমে দানা বাঁধছে, তখন সেই শিবিরের অন্যতম প্রবীণ শরিক শরদ পওয়ার কেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এক মঞ্চে দাঁড়াবেন, কেনই বা তাঁর পুরস্কার অর্পণের সমারোহে প্রধান অতিথি হবেন, এই প্রশ্নে কয়েক দিন ধরেই বিস্তর আলোচনা ও সওয়াল-জবাব শোনা গেল। অনুষ্ঠানে দুই নেতাই মোটের উপর আলগোছে পরস্পরের ‘মোকাবিলা’ করে নিয়েছেন, সুতরাং শোরগোল স্তিমিত হয়েছে। কিন্তু রাজনীতির রেষারেষি থেকে সামাজিক পরিসরকে কেন দূরে রাখা যাবে না, সেই প্রশ্নটি থেকেই গেল।

এই পরিস্থিতির দায় শাসক এবং বিরোধী দুই তরফেরই। শাসকরা যে ভাবে তাঁদের আধিপত্যবাদী আগ্রাসনে গোটা দেশকে বিরোধী-মুক্ত করবার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন, তা সুস্থ পরিবেশের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। বস্তুত, মহারাষ্ট্রে সেই অভিযানের সাম্প্রতিকতম পর্বটি সদ্য সম্পন্ন হয়েছে এবং শরদ পওয়ারের এনসিপি-র যে সদস্য ও জনপ্রতিনিধিরা বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে অগ্রণীর ভূমিকায় দেখা গিয়েছে তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্রকে। এমন একাধিক অর্থে ঘর-ভাঙানিয়া প্রতিপক্ষের সর্বাধিনায়ক পুরস্কার প্রদানের অনুষ্ঠানে শামিল হলে যে বহু প্রশ্নই উঠবে, সে কথা বহুদর্শী বিরোধী রাজনীতিক নিশ্চয়ই বিলক্ষণ জানতেন। বিশেষ করে যখন তাঁর ‘বিরোধিতা’র দৃঢ়তা কখনওই প্রশ্নাতীত ছিল না। এখানেই বিরোধীদের দায়িত্বের কথাটি প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে। নীতি ও আদর্শগত বিরোধিতার অবস্থান যদি সুদৃঢ় এবং সুস্পষ্ট থাকে, তা হলে সামাজিক পরিসরে সৌজন্যের উদার ও সুস্থ রীতি অনুসরণ করা স্বাভাবিক দেখায়। অতীতে তো বটেই, আজও যে বিরোধী দলগুলি আপন অবস্থানে নিঃসংশয়, তাদের নেতানেত্রীরা শাসকদের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করলে কারও ভ্রু-কুঞ্চিত হয় না। কিন্তু বিরোধী নেতাদের আচরণে যদি গূঢ়তর দোলাচলের নানা লক্ষণ প্রকট হয়ে চলে, অধুনা যাকে ‘সেটিং’ বলা হয় তেমন প্রচ্ছন্ন বোঝাপড়ার বিবিধ সঙ্কেত মিলতে থাকে, তবে পরিস্থিতি অন্য রকম দাঁড়াতে পারে, যেমনটি পুণের অনুষ্ঠান উপলক্ষে দাঁড়িয়েছে। সেখানেই এই ঘটনার গভীরতর তাৎপর্য।

অন্য বিষয়গুলি:

Sharad Pawar Narendra Modi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy