Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Education system

প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ

শিক্ষা নাগরিকের মৌলিক অধিকার। তাই এই ক্ষেত্রে উপযুক্ত পরিকাঠামো নির্মাণ একেবারে প্রাথমিক কর্তব্য। সরকার সেই বিষয়ে উদাসীন থাকলে শিক্ষার প্রসারে তার সামগ্রিক সদিচ্ছা নিয়েই প্রশ্ন ওঠে।

An image of Education

—প্রতীকী চিত্র।

শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৬:৩১
Share: Save:

রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থার দৈন্যদশা চতুর্দিকে প্রকট। বর্তমান সমস্যার মূলে যেমন ‘বাংলার শিক্ষা’ পোর্টাল। অভিযোগ, মাসখানেক আগে সরকারি স্কুলগুলিতে সম্পন্ন দ্বিতীয় পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়নের নম্বর তোলা যাচ্ছে না এই পোর্টালে। পোর্টাল খুলতে দীর্ঘ সময় লাগা বা খুললেও কয়েক ধাপ পেরিয়ে পড়ুয়াদের নম্বর বসাতে না পারার মতো বিবিধ সমস্যা দেখা দিচ্ছে। প্রথম পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়নের নম্বর তোলার সময়েও এমনই সমস্যা হয়েছিল। ফলে এখনও অনেকের নম্বর তোলা বাকি। এমতাবস্থায় পুজোর পরে তৃতীয় পর্যায়ক্রমিকের ক্ষেত্রেও একই সমস্যা দেখা দিলে শেষ পর্যন্ত কম্পিউটার থেকে শিক্ষার্থীদের সামগ্রিক ফলাফল বার করা সম্ভব হবে কি না, উদ্বেগ থেকেই যাচ্ছে। অন্য দিকে, শিক্ষা দফতরের যুক্তি, পোর্টালে পড়ুয়াদের আধার নম্বর যোগ করার কারণে প্রযুক্তিগত সমস্যা হতে পারে। শুধু জেলা থেকে নয়, খাস কলকাতা থেকেও শিক্ষা পোর্টালগুলি খুলতে গিয়ে একই সমস্যা। প্রসঙ্গত, গত বছরেও একই সঙ্কটে পড়েছিল অনেক স্কুল।

সমস্ত সরকারি ও সরকার পোষিত স্কুল, তাদের শিক্ষক এবং বিপুল সংখ্যক ছাত্রছাত্রীর তথ্য একত্র করতে সরকারের পক্ষে ২০১৯ সালে শিক্ষা পোর্টালটি চালু করা হয়। ছাত্র-শিক্ষকের স্কুলে হাজিরা থেকে শুরু করে কোনও ছাত্রের শিক্ষার অগ্রগতি, বিভিন্ন পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের মতো তথ্য সংগৃহীত রাখাই এর অন্যতম উদ্দেশ্য। বাম আমলে অনুরূপ উদ্যোগ অকার্যকর হলেও, বর্তমান সরকারের সময় নতুন পোর্টালটির যাতে একই পরিণতি না হয়, সে বিষয়ে নজরদারি করার আশ্বাস মিলেছিল। কিন্তু অভিজ্ঞতা বলছে, পূরণ হয়নি সে প্রতিশ্রুতি। অভিযোগ, শুরুর বছর থেকেই পোর্টালে তথ্য তোলা নিয়ে দেখা দেয় সমস্যা। এ ছাড়াও, বিভিন্ন সময়ে বিবিধ সমস্যার মুখে পড়ে পোর্টালটি। যেমন, গত এপ্রিলেই প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তির সময়ে শিক্ষা দফতর নির্ধারিত বয়সসীমার কারণে সমস্যা হয় বহু পড়ুয়ার। পোর্টালে নাম তুলতে না পারার ফলে দফতরের তরফে স্কুলের পোশাক বা বইপত্র পাওয়ার মতো সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ারও সম্ভাবনা দেখা দেয়। শিক্ষা দফতরের তরফে যেখানে প্রায় সমস্ত প্রশাসনিক কাজ অনলাইনে করার উপরে জোর দেওয়া হচ্ছে, সেখানে বাংলা শিক্ষা পোর্টালের এ-হেন দুরবস্থা কেন, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়ে।

শিক্ষা নাগরিকের মৌলিক অধিকার। তাই এই ক্ষেত্রে উপযুক্ত পরিকাঠামো নির্মাণ একেবারে প্রাথমিক কর্তব্য। সরকার সেই বিষয়ে উদাসীন থাকলে শিক্ষার প্রসারে তার সামগ্রিক সদিচ্ছা নিয়েই প্রশ্ন ওঠে। পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা তেমনই। বহু সরকারি স্কুলে না আছে পর্যাপ্ত শিক্ষক, কোনও জায়গায় শিক্ষক থাকলেও ছাত্রেরা অনুপস্থিত। কোথাও গবেষণাগার নেই, এমনকি উপযুক্ত শ্রেণিকক্ষও নেই। সরকারি বা সরকার পোষিত স্কুলগুলির এই শোচনীয় অবস্থার কারণেই অভিভাবকরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। এ বিষয়ে সরকারি উদাসীনতা এমনই যে, কোন বয়সের শিশু কতটা গুনতে পড়তে লিখতে শিখল, তার সঠিক হিসাব শিক্ষা দফতর থেকে না পাওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল। অথচ, এই বিষয়গুলির সঙ্গে রাজ্যের বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ জড়িয়ে আছে। সেই কারণেই ত্রুটি মেরামতের দায় সম্পূর্ণ বর্তায় সরকারের উপরে। ‘প্রযুক্তির গোলমাল’ বলে সেই দায় এড়ানো যায় কি?

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy