Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Diaspora

বাহির কৈনু ঘর

বিদেশের মাটিতে অবস্থানকারী দেশীয় মানুষজন যে দেশের রাজনীতিতে রীতিমতো সক্রিয় ভূমিকা নিতে পারেন, সে কথা নতুন নয়, ব্রিটিশ যুগ থেকেই ভারতবাসীর তা জানা আছে।

An image of Narendra Modi

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২৩ ০৬:৩১
Share: Save:

ঘর কৈনু বাহির, বাহির কৈনু ঘর: কবির বচন নতুন করে প্রমাণ করছে আজকের ভারতীয় ডায়াস্পোরা রাজনীতি। ‘ডায়াস্পোরা’ শব্দটি উত্তর-আধুনিক আলোচনাসূত্রে প্রাপ্ত, সুতরাং অনেকের কাছে তা বেশ একটু নতুন। তবে বিদেশের মাটিতে অবস্থানকারী দেশীয় মানুষজন যে দেশের রাজনীতিতে রীতিমতো সক্রিয় ভূমিকা নিতে পারেন, সে কথা নতুন নয়, ব্রিটিশ যুগ থেকেই ভারতবাসীর তা জানা আছে। স্বাধীনতার পরও সেই ধারা অব্যাহত থেকেছে। সাম্প্রতিক কালে দেশীয় রাজনীতির সংবাদচক্রে সেই ডায়াস্পোরার যত বড় ভূমিকা লক্ষিত হতে শুরু করেছে, তা বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে। বিশ্বায়িত দুনিয়ায় এমন ঘটনাই স্বাভাবিক, কিন্তু সেই বৃহৎ বিশ্বায়নের অন্তরে প্রচ্ছন্ন থাকে আরও একটি ঘটনা, যাকে আরও বিশেষ ভাবে বুঝতে হয়। এর নাম বিশ্বময় বিস্তৃত ও সংযুক্ত যোগাযোগ-মাধ্যম— সমাজতাত্ত্বিক অর্জুন আপ্পাদুরাইয়ের শব্দ ধার করে যাকে বর্ণনা করা যেতে পারে ‘মিডিয়াস্কেপ’ বা সংবাদমানচিত্র হিসাবে। ‘ঘর’ ও ‘বাহির’-এর সম্পর্কটি এই নব মানচিত্রে আজ সম্পূর্ণ নতুন ভাবে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। এবং প্রায় প্রত্যহ নতুন গতিতে তার বিবর্তন ঘটছে। স্বভাবতই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিশেষ মনোযোগী, যাতে তাঁর বিদেশবাসী দেশীয় সমাজের সঙ্গে যোগটি কেমন ঘনিষ্ঠ, সেই ছবি দেশের মানুষের কাছে কতটা ঔজ্জ্বল্যে ফুটে উঠছে তা নিয়ে। তাঁর তিনটি সফরে এই মনোযোগ বিশেষ ভাবে ধরা পড়ল: আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং ফ্রান্স।

তবে একই সঙ্গে উল্লেখ্য, আরও দু’টি কারণে দেশের রাজনীতিকে প্রভাবিত করতে নরেন্দ্র মোদী ও তাঁর সহচর রাজনীতিকরা অনেক বেশি মন দিচ্ছেন বিদেশের প্রবাসী জনসমাজের উপর। এক, তাঁরা সম্যক ভাবে অবহিত, দেশের জনসমাজ আসলে বিদেশবাসী দেশীয় জনসমাজকেই অনুসরণ করতে চায়— প্রত্যক্ষে না হলেও পরোক্ষে, প্রাত্যহিক প্রয়োগে না হলেও ধারণায়, বাসনায় ও উচ্চাশায়। সেই উচ্চাশার লক্ষ্য প্রবাসী মানুষগুলিকে দিয়ে তাঁরা দেশের মানুষের মন প্রভাবিত করতে চান। এবং, দুই, নতুন জাতীয়তাবাদী ধ্যানধারণার যতই বিস্তার হচ্ছে, প্রবাসী জনসমাজ ততই দেশের রাজনীতিতে আগের চেয়ে অনেক বেশি ‘বিনিয়োগ’ করতে চাইছেন, আর্থিক ও পারমার্থিক, দুই পথেই। সেই বিনিয়োগকে টেনে আনতে পারলে দেশের রাজনীতিতে ‘লাভ’ যে অনেকখানি, সেটা সহজবোধ্য।

সুতরাং, মোদীর শেষ তিনটি বিদেশ সফরে যে এতখানি প্রচার-আলোকের ঝকঝকানি— দেশে ও বিদেশে— তাতে স্পষ্টতই ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের পূর্বছায়া। তাঁর তৃতীয় দফার প্রধানমন্ত্রিত্বকালে ভারত নাকি তিন নম্বর অর্থনীতির জায়গা নেবে, দেশবাসীর থেকেও বিদেশবাসী ভারতীয়রা যাতে তা বিশ্বাস করেন, এবং তাতে বিশ্বাস রাখেন— সেটা এই মুহূর্তে অন্যতম প্রধান কৌশল। মণিপুরের ভয়াবহ পরিস্থিতি বিষয়ে মন্তব্য করার সময় না পেয়ে প্রধানমন্ত্রী বৈদেশিক সফরকে পাখির চোখ করে তুলেছিলেন। এ কোনও অমনোযোগী সিদ্ধান্ত নয়, বরং সুচিন্তিত রাজনৈতিক অভিমুখ। বিরোধী রাজনীতিকরা অবশ্য সে নিয়ে কতখানি অবহিত, তা বোঝার উপায় নেই। কেননা বর্তমান ভারতে ধারাবাহিক নীতিগত ও কৌশলগত বিরোধিতা স্পষ্ট ও সরব ভাবে উপস্থাপিত হতে দেখা যায় না।

অন্য বিষয়গুলি:

indian politics
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy