Advertisement
১৮ ডিসেম্বর ২০২৪
police

আসল কাজ

পুলিশের সঙ্গে দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিক, ব্যবসায়ী বা প্রভাবশালীর ওঠাবসা স্রেফ সিনেমার প্লট নয়, বাস্তব ঘটনা।

রক্ষকই ভক্ষক।

রক্ষকই ভক্ষক।

শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০২২ ০৫:১৬
Share: Save:

একদা পুলিশকে ‘শান্তিরক্ষক’ বলা হত, অপ্রীতিকর অবাঞ্ছিত ঘটনা ঘটলে শান্তি স্থিতি তথা নিরাপত্তার বাতাবরণটি নিশ্চিত করার দায়ভারটি তাঁরা পালন করতেন বলে। এ যুগে নাগরিকের সেই শান্তিও নেই, সেই রক্ষকও; পুলিশের আচরণ ও কাজ বরং এই প্রচলকথাকেই সত্য করে তুলেছে: রক্ষকই ভক্ষক। আনিস খানের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত সন্দেহজনক, সিট-এর রিপোর্টে খুনের অভিযোগ খারিজ হলেও চার্জশিটে স্থানীয় আমতা থানার তৎকালীন ওসি, এএসআই, হোমগার্ড, সিভিক ভলান্টিয়ার, সবার নাম ছিল। মাসখানেক পরেই এ বার কাঠগড়ায় গল্‌ফ গ্রিন থানার পুলিশ। স্থানীয় যুবক দীপঙ্কর সাহাকে বাড়ি থেকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া ও থানায় বেধড়ক মারধরের অভিযোগ, যার জেরে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু। এ শুধু দুর্ভাগ্যের নয়, চরম আতঙ্কেরও।

পুলিশের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কাজের জেরে নাগরিকের মৃত্যুই যদি নিয়মে দাঁড়িয়ে যায়, তা হলে পুলিশের হাতে নিত্যনৈমিত্তিক নাগরিক হেনস্থা নিয়ে আর কী-ই বা বলার থাকে। বহুবিধ হয়রানি— যা পুলিশের করার কথাই নয়, আইনতও যা নিষিদ্ধ— তা-ই পুলিশের হাতে ঘটে চলেছে অহরহ। হেফাজতে মৃত্যুর জেরে হওয়া মামলার পরিপ্রেক্ষিতে সারা দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের স্থান উত্তরপ্রদেশের সঙ্গে, তালিকার শীর্ষভাগে, সম্প্রতি সংসদে পেশ হয়েছে এই তথ্য। এই মৃত্যুর অনেকাংশই যে পুলিশি হেফাজতে, অস্বীকার করার উপায় নেই। পুলিশের হাতে সাধারণ মানুষের হয়রানির অভিযোগ-তালিকাটি সুদীর্ঘ: জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাড়ি থেকে জোর খাটিয়ে তুলে আনা, কখনও পুলিশের গাড়িতেই অনির্দিষ্ট কাল ঘোরানো, ঘণ্টার পর ঘণ্টা থানায় বসিয়ে রাখা, শৌচাগারে যেতে না দেওয়া ইত্যাদি। হেফাজতে মারধর নির্যাতনের অভিযোগ তো আছেই, এমনকি জেরার সময় বৈদ্যুতিক শক দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। সম্ভাব্য অভিযুক্তকে উঠিয়ে আনতে গিয়ে সমন দেখানো, নোটিস পাঠানো, গ্রেফতারি বা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কাউকে আনতে গেলেও পুলিশকর্মীর নাম ও পদ-সহ ব্যাজ পরার বাধ্যতামূলক নিয়ম, কী কারণে গ্রেফতারি তা জানানো, ‘অ্যারেস্ট মেমো’ দেওয়া, মেয়েদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে ফৌজদারি আইনের বিশেষ ধারায় বেঁধে দেওয়া নির্দিষ্ট সময়সীমা— পুলিশ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানে না, এই অভিযোগও ভিত্তিহীন নয় মোটেই।

আর একটি অভিযোগ: পুলিশ আর দুর্নীতির যোগসাজশ, যার জোরে প্রকৃত অপরাধীও পার পেয়ে যায়। পুলিশের সঙ্গে দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিক, ব্যবসায়ী বা প্রভাবশালীর ওঠাবসা স্রেফ সিনেমার প্লট নয়, বাস্তব ঘটনা। অপরাধ দমন যার কাজ, সে উল্টে অপরাধীকেই আশ্রয় ও প্রশ্রয় দিলে পুলিশের উপর থেকে নাগরিকের বিশ্বাস সরে যায়। আর দৈনন্দিন যাপনও যখন পুলিশি জুলুমে প্রতিনিয়ত ধ্বস্ত হতে থাকে, তখন নাগরিকের কাছে পুলিশের গ্রহণযোগ্যতা তলানিতে গিয়ে ঠেকে। পুলিশের ব্যবস্থাপনায় রক্তদান কর্মসূচি, ক্রীড়া-আয়োজন বা নানা সমাজকল্যাণমূলক কাজও হয়, তাতে হয়তো ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয় খানিক, কিন্তু এ সব পুলিশের আসল কাজ নয়। প্রথম ও প্রধান কাজ নাগরিকের রক্ষণ, ঠিক পথে আইন মেনে তা করা দরকার। পুলিশের হাতে নাগরিকের মৃত্যু দূরস্থান, নিগ্রহও বাঞ্ছনীয় নয়।

অন্য বিষয়গুলি:

police power
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy