Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Kashmir Valley

ফাঁপাতন্ত্র

এমতাবস্থায় দেখা গেল, লোকসভা ভোটের আগে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র পায়ের তলার জমি কেড়ে নিলেন সেখানকার দুই প্রধান বিরোধী প্রতিদ্বন্দ্বী ওমর আবদুল্লা এবং মেহবুবা মুফতি।

প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২৪ ০৭:৫৬
Share: Save:

গত পাঁচ বছর কাশ্মীর কেমন ছিল, জানতে চাইলে কাশ্মীরিরা আদৌ কোনও উত্তর দিতে পারবেন কি না, বলা মুশকিল। কেননা, ‘থাকা’ বিষয়টিই তাঁদের কাছে আজ পুরোদস্তুর পাল্টে যেতে বসেছে। এক দিকে কাশ্মীরে সংঘর্ষ অশান্তি এখন আগের তুলনায় কম— স্থানীয় বাসিন্দা থেকে বাইরের পর্যবেক্ষক সকলেই তা বলবেন। কিন্তু অন্য দিকে, প্রধানমন্ত্রী মোদী কিংবা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের মতো এই ঘটনাকে প্রসন্নবচনে ‘স্বাভাবিকতা’ বলে ব্যাখ্যা করা মুশকিল, কেননা, সহজ কথায়, কাশ্মীর উপত্যকা গত চার বছর ধরেই ‘হেভিলি মিলিটারাইজ়ড’ বা অতিমাত্রায় সামরিক অধ্যুষিত এলাকা। বাস্তবিক যুদ্ধক্ষেত্রের বাইরে সাধারণ নাগরিক পরিসরে এত সামরিক শক্তির সমাহারের দৃষ্টান্ত বিশ্বে খুব বেশি নেই। বন্দুকের মুখে গোটা নাগরিক সমাজকে ঠেকিয়ে রাখাকে, আর যা-ই হোক, গণতান্ত্রিক মতে স্বাভাবিকতা রক্ষা করা বলা চলে না। আরও একটি বিষয় আছে। কেবল বন্দুক নয়, ইন্টারনেট এবং দূরভাষ-সংযোগের উপর নিয়ন্ত্রণ বলবৎ করেও আধুনিক কালে সমাজকে অনেকাংশে দমিত করে রাখা যায়। কাশ্মীরের সচেতন নাগরিক মাত্রেই এই কথা বলে থাকেন যে, গত কয়েক বছর লাগাতার এই নিয়ন্ত্রণের কারণে তাঁরা অধিকারবঞ্চিত হয়ে রয়েছেন, অথচ এ বিষয়ে ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের মানুষ আদৌ মাথা ঘামাতেই রাজি নন। মূল কথা হল, কাশ্মীর কেমন আছে, তা ঠিক ভাবে বোঝার পরিস্থিতিই যে সে রাজ্যের মানুষের নেই, সেটাই হয়তো আপাতত কাশ্মীরের প্রধান পরিচায়ক হিসাবে গণ্য হতে পারে।

এমতাবস্থায় দেখা গেল, লোকসভা ভোটের আগে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র পায়ের তলার জমি কেড়ে নিলেন সেখানকার দুই প্রধান বিরোধী প্রতিদ্বন্দ্বী ওমর আবদুল্লা এবং মেহবুবা মুফতি। স্থির হল, তাঁরা একক ভাবেই লড়াই করবেন, যার অর্থ বিরোধী ভোটের ভাগাভাগি ও শাসকের সুবিধা। বিষয়টি কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বলা বাহুল্য। বিরোধী জোটের দিক থেকে কাশ্মীরের সমাজের প্রতি কোনও অন্যায় হল কি না, তা ন্যাশনাল কনফারেন্স (এনসি) এবং পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (পিডিপি)-র বিরোধী নেতারাই ভাবুন। তবে এটুকু বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারতীয় জনতা পার্টি জম্মু ও কাশ্মীরে বিশেষ সুবিধাজনক জায়গায় আছে— নিজেদের জোরেও বটে, বিপক্ষের দুর্বলতার জন্যেও বটে। আরও এক বার নেতাদের নিজস্ব ব্যক্তিগত ‘ইগো’ এবং হিসাবনিকাশ চলে এল সামনে। কাশ্মীরও দেখিয়ে দিল, ভারতের রাজনৈতিক নেতৃবাহিনীর যে প্রধান অসুখ— বৃহত্তর সামাজিক ও রাজনৈতিক আদর্শের বদলে ক্ষুদ্র ব্যক্তিগত সিদ্ধিকে প্রধান জায়গা দেওয়া, তার জেরেই এ দেশের জনসমাজের সামনে রাজনৈতিক বিকল্প তৈরির কাজটি কত ভয়ানক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ইতিমধ্যে একের পর এক ঘটনায় স্পষ্ট, সাংবাদিক ও সমাজকর্মীদের উপর বিভিন্ন রকমের অপরাধের দায় চাপিয়ে কী ভাবে তাঁদের প্রতিবাদকণ্ঠ নিষ্পেষণ করা চলছে। কাশ্মীরে প্রচারমাধ্যমের উপর কী পরিমাণ দমন-পীড়ন-নির্যাতন চলছে, তা দেখানোর জন্য বিবিসি থেকে গত বছর একটি বিশেষ তদন্ত এজেন্সি তৈরি হয়েছিল (এসইএ)। তাদের একটি রিপোর্টের হেডিং ছিল, ‘এনি স্টোরি কুড বি ইয়োর লাস্ট’ অর্থাৎ ‘যে কোনও সংবাদ লেখাই তোমার শেষ লেখা হতে পারে’। স্বভাবতই ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার যৎপরোনাস্তি ক্ষুব্ধ হয়েছিল এতে। মুশকিল হল, আন্তর্জাতিক মঞ্চে যে এমন রিপোর্ট তৈরি করার সিদ্ধান্ত হচ্ছে, সেটাই ভারতীয় গণতন্ত্রের ফাঁপা অভ্যন্তর বিষয়ে অনেকটা কথা বলে দেয়। আজকের কাশ্মীর মানবাধিকার বিনাশের একটি কেস-স্টাডি হয়ে উঠেছে, দ্রুত পথ পরিবর্তন না করলে বহু শাসনে ও দমনেও সঙ্কটকে চাপা দিয়ে রাখা যাবে না। আগামী দিনে এই দুর্ভাগ্যতাড়িত উপত্যকাটির শাসনের দায়িত্ব যাঁদের হাতেই আসুক না কেন, তাঁদের এই সার কথাটি মনে রাখা ভাল।

অন্য বিষয়গুলি:

Kashmir Valley Central Government BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy