Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
West Bengal government

অপচয়ের উৎসব

এই দোলাচল সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত নয়। গত নভেম্বরে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মন্ত্রিসভার বৈঠকে বলেন, মেলা, উৎসব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে খরচ কমিয়ে সেই টাকা জনমুখী প্রকল্পে ব্যয় করতে হবে।

nabanna

নবান্ন। —ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:১৩
Share: Save:

উৎসব, মেলায় অপচয়ের অভিযোগ আগেই ছিল, এ বার তার সঙ্গে যোগ হল বিভ্রান্তি। ১০-১২ জানুয়ারি জেলাস্তরে ছাত্র-যুব উৎসব করতে হবে, এই নির্দেশ জারি করেছিল যুবকল্যাণ ও ক্রীড়া দফতর। বহু জেলায় সেই নির্দেশ অনুসারে কাজ এগিয়েও যায়। অতঃপর একটি অনলাইন বার্তা পাঠিয়ে উৎসব বাতিল করতে, এবং বরাদ্দ ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। বিষয়টি ‘জরুরি’, এমন কথাও উল্লেখ করা হয়েছে নির্দেশে। প্রশ্ন উঠবে, এত জরুরি একটি বিষয় এমন অপরিকল্পিত ভাবে কেন করা হল? জেলাস্তরের কর্তারা অনেকেই প্রস্তুতি পর্বের খরচ করে ফেলেছেন। নানা কারণে তাঁরা অপ্রস্তুত— জেলাস্তরে ছাত্র-যুব উৎসব বাতিল হলেও, রাজ্যস্তরে তা হবে কি না, তা স্পষ্ট নয়। সেই সঙ্গে, কৃষিমেলা, জঙ্গলমহল উৎসব প্রভৃতি নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিল।

এই দোলাচল সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত নয়। গত নভেম্বরে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মন্ত্রিসভার বৈঠকে বলেন, মেলা, উৎসব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে খরচ কমিয়ে সেই টাকা জনমুখী প্রকল্পে ব্যয় করতে হবে। বিশেষ জোর দেন একশো দিনের কাজের প্রকল্পে নথিভুক্ত শ্রমিকদের বিকল্প কাজ দেওয়ার উপরে। শ্রমমেলা-সহ অন্যান্য মেলার খরচ কমিয়ে, একশো দিনের কাজের বরাদ্দ বাড়াতে নির্দেশ দেন শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটককে। অতএব মেলা ও উৎসবে খরচ কমা দরকার, সেই ইঙ্গিত আগেই মিলেছিল। এর পরেও উৎসবের কর্মসূচি পরিবর্তন, বা স্থগিত রাখার বিষয়টি ভাবা হয়নি। এই সিদ্ধান্তহীনতার ফলে মাঝপথে স্থগিত হল প্রস্তুতি, অকারণ খরচ হল টাকা। প্রশাসনের কাছে যে দায়িত্বপরায়ণতা আশা করা যায়, তার কতখানি অভাব এ রাজ্যে, তার সন্ধান এই ঘটনায়।

এর পরও একটা কথা থাকে। মেলা-উৎসব নিয়ে রাজ্য সরকারের এই নাজেহাল দশা দেখে মনে পড়তে পারে মোল্লা নাসিরুদ্দিনের সেই গল্প, যেখানে বেড়ালে এক সের মাংস খেয়ে ফেলেছে শুনে নাসিরুদ্দিন বেড়ালকে ওজন করেন, এবং বেড়ালের ওজন এক সের দেখে প্রশ্ন করেন— এটা বেড়াল হলে মাংস কোথায়, আর এটা মাংস হলে বেড়াল কোথায়? রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তের পর রাজ্যবাসীও প্রশ্ন করতে পারেন, মেলা-উৎসবের জন্য খরচ যদি প্রয়োজনীয় হয়ে থাকে, তা হলে আজ তা বন্ধ করা হচ্ছে কেন? আর যদি তা অপ্রয়োজনীয়-ই হয়, তা হলে এত দিন খরচ করা হয়েছিল কেন? রাজ্যের ভাঁড়ারে কি এতই উদ্বৃত্ত অর্থ ছিল যে, তা দিয়ে চিন্তাভাবনা না করেই মেলা-উৎসব করা যায়? যে রাজ্যে স্কুলশিশু মিড-ডে মিলের পাতে আলু-সয়াবিন ছাড়া কিছু পায় না, সরকারি কর্মীরা ডি এ-র জন্য আন্দোলন করেন, কৃষি ও শিল্পের উৎপাদন-বিপণনের পরিকাঠামোয় বহু খামতি রয়ে যায়, রাজ্যবাসীর মাথাপিছু ঋণ দাঁড়ায় প্রায় ষাট হাজার টাকা, সেখানে কী প্রয়োজন মাটি উৎসব, শ্রমিক মেলা, সবলা মেলা, হস্তশিল্প মেলা, জনস্বাস্থ্য মেলা-সহ বিবিধ উৎসবের? উন্নয়নের টাকায় যখন টান, তখনও এ সব মেলার খরচ মিটিয়েছে বিভিন্ন জেলা পরিষদ, এবং রাজ্য সরকারের নানা দফতর। বিরোধীরা বার বার একে অকারণ খরচ বলে দাবি করেছেন। অভিযোগ এসেছে, এই অনুষ্ঠানগুলি বস্তুত সরকারি খরচে তৃণমূলের জনমোহিনী নীতির প্রচার, এগুলির প্রধান উদ্দেশ্য নির্বাচনী জনসংযোগ। যুব উৎসব বাতিল করে সরকার কার্যত সেই ধারণাকে পোক্ত করল।

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal government Nabanna TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy