Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Galaxy

গ্রহান্তরের জীব

২০১৭ সালে যখন ওমুয়ামুয়াকে প্রথম দেখা যায়, তখন তার আকার ছিল পাটিসাপ্টা পিঠের কিংবা সিগার-এর মতো। ওমুয়ামুয়া চওড়ায় বেশি ছিল না।

A Photograph of

গ্যালাক্সিগুলোর মধ্যে দূরত্ব এতটা যে, আলোর বেগে না ছুটলে কোনও কিছুকেই যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে প্রতিষ্ঠা করা মুশকিল। ফাইল ছবি।

শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০২৩ ০৬:৩১
Share: Save:

উড়ন্ত চাকি, অথবা ভিনগ্রহীদের মহাকাশযানের দেখা পাওয়ার সম্ভাবনা বোধ হয় এ বারও সুনীল আকাশে মিলিয়ে গেল। একাধিক বিজ্ঞানী দাবি করেছেন যে, ওমুয়ামুয়া— অন্যথায় যার নাম ১-এল/২০১৭-ইউ-১ (ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রনমিক্যাল ইউনিয়ন-এর দেওয়া নাম)— ভিনগ্রহীদের পাঠানো মহাকাশযান নয়। ওটা একটা ধূমকেতু। ক’দিন আগে নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত এক রিপোর্টে ওই দাবি করা হয়েছে। আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলে-র অধ্যাপক জেনিফার বার্গনার এবং কর্নেল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ডারিল সেলিগমান ওই দাবি করেছেন। এর আগে দাবি করা হয়েছিল যে, ওমুয়ামুয়া (হাওয়াই ভাষায় যার অর্থ সন্ধানকারী) নাকি ভিনগ্রহীদের পাঠানো যান! যিনি সবচেয়ে বেশি এই দাবি পেশ করেছিলেন, তিনি হচ্ছেন হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ও আমেরিকান প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আব্রাহাম লোয়েব। উড়ন্ত চাকির দেখা পেয়েছেন— এমন দাবি করা সাধারণ মানুষ নয়, প্রথিতযশা এক জন জ্যোতির্বিজ্ঞানী এ-হেন দাবি করায় সাড়া পড়ে গিয়েছিল। ভিনগ্রহী জীবের ব্যাপারে মানুষের কৌতূহল নতুন করে শুরু হয়েছিল। এরিক ফন দানিকেন, যিনি চ্যারিয়টস অব গডস (বাংলা ভাষান্তর: দেবতা কি গ্রহান্তরের মানুষ?) গ্রন্থের লেখক, তিনি অভিনন্দন জানিয়েছিলেন লোয়েবকে— জ্যোতির্বিজ্ঞানী হওয়া সত্ত্বেও ভিনগ্রহীদের অস্তিত্বে বিশ্বাস করায়। ভিনগ্রহীদের অস্তিত্ব বোঝার দুটো উপায় আছে। এক, ভিনগ্রহীরা নিজে থেকে তাদের অস্তিত্বের জানান দিলে; আর দুই, পৃথিবীর মানুষ রেডিয়ো টেলিস্কোপে বা ওই ধরনের কোনও যন্ত্রে ভিনগ্রহীদের অস্তিত্ব শনাক্ত করলে। ওমুয়ামুয়ার ক্ষেত্রে প্রথমটি হয়েছিল বলে মনে করেছিলেন লোয়েব।

লোয়েবের এই ধারণার মূলে কারণও ছিল। ২০১৭ সালে যখন ওমুয়ামুয়াকে প্রথম দেখা যায়, তখন তার আকার ছিল পাটিসাপ্টা পিঠের কিংবা সিগার-এর মতো। ওমুয়ামুয়া চওড়ায় বেশি ছিল না— বড় জোর কয়েকশো মিটার। এ পর্যন্ত যে সব ধূমকেতু দেখা গিয়েছে, সেগুলো চওড়ায় অন্তত কয়েক কিলোমিটার। যেমন, হ্যালির ধূমকেতু ১১ কিলোমিটার চওড়া। সবচেয়ে বড় কথা, ওমুয়ামুয়ার কোনও পুচ্ছ বা লেজ ছিল না। ধূমকেতুর লেজ থাকে। সূর্যের তাপে জলীয় বাষ্প, কার্বন ডাইঅক্সাইড ইত্যাদি গ্যাস ধূমকেতু থেকে বেরোয়, যা লেজের মতো দেখায়। একে কোমা বলে। ধূমকেতুর বদলে প্রথমে ভাবা হয়েছিল ওমুয়ামুয়া একটা গ্রহাণু, যেমন অসংখ্য গ্রহাণু দেখা যায় সৌরমণ্ডলের ভিতরে। ধূমকেতুর লেজ না থাকায় ওই ধারণা জোরদার হয়েছিল। সবচেয়ে গোলমাল বাধে ওমুয়ামুয়ার গতিবেগে। ওই গতিবেগ পরিবর্তনশীল— ওমুয়ামুয়া সৌরমণ্ডলের বাইরে যাওয়ার সময় গতিবেগ হঠাৎ বাড়ে। ওই পরিবর্তনশীল গতিবেগ— যা মহাকর্ষ নিয়ন্ত্রিত নয়— তা দেখে লোয়েব সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলেন যে, ওমুয়ামুয়া ভিনগ্রহীদের পাঠানো যান। এখন বার্গনার এবং সেলিগমান বলেছেন, লোয়েব বড় তাড়াহুড়ো করে ওই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলেন। ওঁর জানা উচিত ছিল যে, ধূমকেতু থেকে লেজের মতো হাইড্রোজেন গ্যাস বেরিয়ে এলে, অনেক সময় তা দৃশ্যমান হয় না। আর পরিবর্তনশীল বেগ? অনেক কারণে বেগের পরিবর্তন হতে পারে। সবচেয়ে বেশি যে কারণে তা হতে পারে, তা হল কোনও ভারী বস্তুর আকর্ষণ। এ জন্য বার্গনার এবং সেলিগমান ওমুয়ামুয়ার গতিপথের আশেপাশে আলোর বিশ্লেষণ চেয়েছেন। আলোর বিশ্লেষণ করে ভারী বস্তুর উপস্থিতি শনাক্ত হতে পারে। বার্গনার এবং সেলিগমানের ব্যাখ্যা শুনে লোয়েবের মন্তব্য? তিনি শুধু বলেছেন, এ প্রচেষ্টা হাতিকে জ়েব্রা বলে চালানোর শামিল!

আজ থেকে ৭৩ বছর আগে প্রশ্ন তুলেছিলেন বিজ্ঞানী এনরিকো ফের্মি— ভিনগ্রহীরা থাকলে, আমরা তাদের সাড়া পাচ্ছি না কেন? শুধু থাকলেই হবে না, তাদের উন্নতপ্রযুক্তিসম্পন্ন হতে হবে। অর্থাৎ, এমন প্রযুক্তি থাকতে হবে, যাতে তারা পৃথিবীর মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। যোগাযোগ স্থাপনে সবচেয়ে বড় বাধা দূরত্ব। গ্যালাক্সিগুলোর মধ্যে দূরত্ব এতটা যে, আলোর বেগে (সেকেন্ডে তিন লক্ষ কিলোমিটার বেগে) না ছুটলে কোনও কিছুকেই যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে প্রতিষ্ঠা করা মুশকিল। সে জন্য আজ থেকে ৬৩ বছর আগে ফ্র্যাঙ্ক ড্রেক এক ফর্মুলা আবিষ্কার করেন। সাতটি উপকরণ দিয়ে গঠিত ওই ফর্মুলাকে লেখক গ্রাহাম ফারমেলো বলেছিলেন, “মোস্ট বিউটিফুল ইকোয়েশন।” আছে কি আদৌ ভিনগ্রহী প্রাণী?

অন্য বিষয়গুলি:

galaxy Space ASTEROIDS NASA Astronaut
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy