—প্রতীকী ছবি।
একদা মৈত্রীর সম্পর্ক আজ শত্রুতায় পর্যবসিত। আক্রমণ, প্রতি-আক্রমণে চাপা উত্তেজনার আবহ বিদ্যমান ভারতের উত্তর-পশ্চিমের দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্র পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের মধ্যে। সংঘাতের মূলে দুই দেশের সীমান্ত বিবাদ। সম্প্রতি আফগানিস্তানের খোস্ত এবং পাকটিকা প্রদেশে আকাশপথে পাকিস্তানের হামলায় শিশু-সহ আট জন নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ তোলে তালিবান সরকার। অথচ পাকিস্তানের দাবি, তাদের লক্ষ্য ছিল তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) জঙ্গিগোষ্ঠী, যারা আফগানিস্তান সীমান্তের কাছে ঘাঁটি তৈরি করেছে। পাক অভিযোগ, ২০২১ সালে আফগানিস্তানে তালিবান ক্ষমতায় এলে টিটিপি-সহ অন্যান্য জঙ্গিগোষ্ঠীর সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ বৃদ্ধি পেয়েছে পাকিস্তানে। ইসলামাবাদের এ-হেন দাবি নস্যাৎ করে কাবুল পাল্টা বিবৃতি দিয়েছে, যে জঙ্গিগোষ্ঠীর উদ্দেশে ইসলামাবাদ হামলা চালাচ্ছে, আদতে তারা রয়েছে পাক ভূখণ্ডেই।
নব্বইয়ের দশকে তালিবান উত্থানের পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসা পাকিস্তান বহু বছর ধরেই মদত দিয়ে আসছে এই সুন্নি ইসলামপন্থী গোষ্ঠীকে। শুধু তা-ই নয়, উনিশশো নব্বইয়ের শেষের দিকে তালিবানরা যখন ক্ষমতায় আসে তখন তাদের সরকারকে যে কতিপয় দেশ আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছিল, তাদের অন্যতম ছিল পাকিস্তান। তবে ২০০১-এর ১১ সেপ্টেম্বর আমেরিকায় ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসবাদী হামলার পরে ওয়াশিংটনের চাপে তালিবানদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে বাধ্য হয় ইসলামাবাদ। যদিও দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে কৌশলগত ভাবে দ্বৈত ভূমিকা পালন করে এসেছে তারা— এক দিকে আমেরিকাকে তাদের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সহযোগিতা করেছে এবং অন্য দিকে তালিবানকেও নেপথ্য মদত দিয়েছে। প্রসঙ্গত, ২০০১ সালে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আমেরিকা যখন আফগানিস্তানে হানা দেয়, তখন ইসলামাবাদকে আপাত ভাবে সাহায্য করতেই হয় ওয়াশিংটনকে। এই প্রেক্ষাপটেই পাক জেহাদিদের দ্বারা ২০০৭ সালে জন্ম হয় টিটিপি-র। ২০২১ সালে আফগানিস্তান থেকে আমেরিকার সেনা প্রত্যাহার-সহ ও তালিবান উত্থানের পর পাকিস্তান বোঝে পড়শি রাষ্ট্রের সঙ্গে মিত্রতা বজায় রাখা কঠিন। এ দিকে, তালিবানদের পুনরুত্থান শক্তি জুগিয়েছে টিটিপি-কেও। আফগান তালিবান এবং টিটিপি বা পাকিস্তানি তালিবান দু’টি ভিন্ন সংগঠন হলেও সমমনস্ক। অর্থাৎ, আফগানিস্তানে আফগান-তালিবানদের মতোই, পাকিস্তানকে আমেরিকার প্রভাবমুক্ত একটি কট্টর ইসলামিক রাষ্ট্র হিসাবে গড়ে তুলতে চায় টিটিপি। পাকিস্তানের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও টিটিপি-কে সমর্থন বহাল রাখার জেরে তাই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে অবনতি ঘটেছে।
গত বছরের শেষে পাকিস্তান সরকারের লক্ষ লক্ষ আফগান উদ্বাস্তুকে দেশছাড়া করার সিদ্ধান্তও বৃদ্ধি করেছে দু’দেশের মধ্যে তিক্ততা। ইসলামাবাদের সঙ্গে কাবুলের সম্পর্কে অবনতি হলেও ২০২১-এর পর থেকে কাবুলের সঙ্গে দিল্লির সম্পর্ক এ-যাবৎ কিন্তু তুলনামূলক ভাবে স্থিতিশীল। দিল্লির উদ্বেগ: পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের মধ্যে টানাপড়েন দীর্ঘায়িত হলে এই অঞ্চল পুনরায় সন্ত্রাসভূমিতে পরিণত হবে, যার আঁচ সীমান্ত পেরিয়ে ভারতেও পৌঁছতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy