Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
The Annual Economic Survey 2022-23

হিসাব মিলল কি

ডিসেম্বরের পরিসংখ্যান দিয়ে জানানো হয়েছে যে, কর্মসংস্থান নিয়ে চিন্তা নেই। কিন্তু, সেই কর্মসংস্থানের চরিত্র বা গুণমান কেমন, তার উল্লেখ নেই।

ভোগ্যপণ্যের চাহিদা ফিরে এসেছে— কিন্তু এ কথার উল্লেখ নেই যে, ২০১৪ থেকেই ক্রেতা-চাহিদা নিম্নমুখী।

ভোগ্যপণ্যের চাহিদা ফিরে এসেছে— কিন্তু এ কথার উল্লেখ নেই যে, ২০১৪ থেকেই ক্রেতা-চাহিদা নিম্নমুখী। প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৫:৫৮
Share: Save:

অতিমারির ধাক্কা থেকে ভারতীয় অর্থব্যবস্থার পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ হয়েছে, ঘোষণা করল এ বছরের ইকনমিক সার্ভে বা অর্থনৈতিক সমীক্ষার প্রথম অধ্যায়। প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি পেলে জওহরলাল নেহরুর কথাকে খানিক পাল্টে নিয়ে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলতেই পারতেন, গোটা দুনিয়া যখন অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কৃষ্ণগহ্বরে নিমজ্জিত হচ্ছে, ভারত তখন জেগে উঠছে জীবন ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে। সেই জেগে ওঠা, সেই পুনরুদ্ধারের চরিত্র কী, তা নিয়ে কয়েকটি প্রশ্ন তোলা যেতে পারে। তবে তার আগে ভিন্নতর প্রশ্ন আছে: অর্থনৈতিক পুনরুত্থানের ছবি আঁকতে গিয়ে সমীক্ষায় যে পরিসংখ্যান ব্যবহার করা হল, সেগুলি কি সম্পূর্ণ? যেমন, সমীক্ষার দাবি যে, ভোগ্যপণ্যের চাহিদা ফিরে এসেছে— কিন্তু এ কথার উল্লেখ নেই যে, ২০১৪ থেকেই ক্রেতা-চাহিদা নিম্নমুখী। ডিসেম্বরের পরিসংখ্যান দিয়ে জানানো হয়েছে যে, কর্মসংস্থান নিয়ে চিন্তা নেই। কিন্তু, সেই কর্মসংস্থানের চরিত্র বা গুণমান কেমন, তার উল্লেখ নেই। গ্রাম এবং শহর উভয় ক্ষেত্রেই যে বেকারত্ব গত এক বছর ধরে গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে রয়েছে, সেই ছবিটিও সমীক্ষায় অনুপস্থিত। তবে, তথ্যের স্বচ্ছতা বিষয়ে এই সরকারের যতখানি সুনাম, সেই পরিপ্রেক্ষিতে সমীক্ষার এই বাছাই পরিসংখ্যানকে ব্যতিক্রমী বলার বিশেষ কারণ নেই।

বরং, অর্থনৈতিক পুনরুত্থানের চরিত্রের আলোচনায় আসা যাক। ভারত কোভিডের ধাক্কা সামলে নিয়েছে, অর্থনৈতিক সমীক্ষার এই দাবিটির ব্যাখ্যা হল: জিডিপি-র হিসাব কোভিড-পূর্ব অবস্থার স্তরটিকে অতিক্রম করেছে। ২০১৯-২০ অর্থবর্ষ, অর্থাৎ অতিমারির আগের শেষ সম্পূর্ণ অর্থবর্ষে ভারতের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের পরিমাণ যদি ১০০ টাকা হয়ে থাকে, তবে তিন বছরের পতন-উত্থানের পরে আজ সেই অঙ্কটি এসে দাঁড়িয়েছে ১০৮ টাকায়। একেই কি অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার বলব? যদি অতিমারি না হত, ভারতীয় অর্থব্যবস্থা যদি বছরে গড়ে ৬ শতাংশ হারেও বৃদ্ধি পেত, তা হলে ২০১৯-২০ সালের ১০০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে আজ ১১৯ টাকার সামান্য বেশি হত। আর, প্রাক্‌-কোভিড পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী ‘ফাইভ ট্রিলিয়ন ডলার ইকনমি’-র যে খোয়াবনামা ফেরি করতেন, তাতে পৌঁছতে গেলে যে হারে বৃদ্ধির প্রয়োজন হত, সেই ৯ শতাংশ বৃদ্ধির হার অর্জন করতে পারলে ২০১৯-২০ সালের ১০০ টাকা আজ দাঁড়াত ১৩০ টাকায়। অর্থাৎ, আজ যাকে পুনরুদ্ধার বলে দাবি করছে অর্থনৈতিক সমীক্ষা, জিডিপি-র সেই অঙ্কটি প্রধানমন্ত্রী-প্রদর্শিত স্বপ্নের থেকে বহু দূরে তো বটেই, ভারতের স্বাভাবিক বৃদ্ধির কক্ষপথের থেকেও অনেক পিছনে। একেই পুনরুদ্ধার বললে মোল্লা নাসিরুদ্দিনের ভঙ্গিতে প্রশ্ন করতে হয়, তবে সঙ্কট কোথায়?

কী হতে পারত, সে হিসাব যদি বাদও থাকে, কী হয়েছে, সেই কথাটি নিয়ে মাথা না ঘামালেই নয়। ইদানীং চিকিৎসকরা সন্দেহ প্রকাশ করছেন যে, কোভিড হয়তো আক্রান্তের শরীরকে পাল্টে দিয়েছে অপরিবর্তনীয় ভাবে— যাকে বলা হচ্ছে ‘লং কোভিড’। যে ভাবে প্রতিষেধক টিকা দেওয়া হয়েছে, তা-ও মানুষের দীর্ঘকালীন স্বাস্থ্যের উপরে কী প্রভাব ফেলেছে, ক্রমশ উঠছে সেই প্রশ্নও। অর্থাৎ, আজকের মানব-শরীর আপাতদৃষ্টিতে প্রাক্‌-কোভিড পর্যায়ে ফিরে গেলেও সত্যই তা ফিরেছে কি না, সে প্রশ্ন উড়িয়ে দেওয়ার নয়। অর্থব্যবস্থার ক্ষেত্রেও হয়তো সেই একই প্রশ্ন উঠবে। জিডিপি যদি প্রাক্‌-কোভিড পর্যায়ে ফেরেও, তার অভ্যন্তরীণ কলকব্জাগুলি এক রকম আছে কি? ক্রমবর্ধমান আর্থিক অসাম্য, শিক্ষায় পিছিয়ে পড়া, শ্রমশক্তির এক বিরাট অংশের কার্যত কোনও প্রশিক্ষণ না থাকা— এই সমস্ত বাস্তব নিয়ে কি ভারত বিশ্বমঞ্চে নেতৃস্থানীয় হয়ে ওঠার স্বপ্নটি পুনরায় দেখতে পারে? মনে রাখা ভাল, কোভিড ভারতকে সেই স্বপ্ন থেকেই বিচ্যুত করেছিল।

অন্য বিষয়গুলি:

Economy India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy