শিবপুর বটানিক্যাল গার্ডেন। ফাইল ছবি।
বিপন্ন শিবপুর বটানিক্যাল গার্ডেন, গঙ্গার ভয়াবহ ভাঙনে। গঙ্গা যে ভাবে তার পশ্চিম তীর ভাঙতে ভাঙতে অগ্রসর হচ্ছে, তাতে অবিলম্বে ওই উদ্যান এবং সংলগ্ন বসতি অঞ্চলের অনেকটাই তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা। ইতিমধ্যেই ভাঙনের কারণে এই ঐতিহ্যশালী উদ্যানের অনেক বড় গাছের নীচের মাটি সরে গিয়েছে। সেগুলি হয় উপড়ে পড়েছে, নয়তো দুর্বল হয়ে পতনের প্রহর গুনছে। এই বিপন্নতারই পরিপ্রেক্ষিতে মামলা দায়ের হয়েছিল জাতীয় পরিবেশ আদালতে। প্রথম শুনানিতে পরিবেশ আদালত মামলার সঙ্গে যুক্ত সমস্ত পক্ষকে আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এই উদ্যানের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বটি বর্তমানে কেন্দ্রীয় পরিবেশ, বন এবং জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রকের অধীনে বটানিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া-র উপর ন্যস্ত। সুতরাং, সাম্প্রতিক মামলার পরিপ্রেক্ষিতে পরিবেশ আদালতের পক্ষ থেকে রাজ্য ও কেন্দ্রকে হলফনামা দিয়ে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নিজ অবস্থান জানানোর কথা বলা হয়েছে।
বটানিক্যাল গার্ডেনের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগের কারণটি স্পষ্ট। অপরিকল্পিত নগরায়ণ এবং তজ্জনিত দূষণের ধাক্কায় যখন কলকাতা, হাওড়া-সহ সমস্ত বড় শহর ধুঁকছে, তখন সবুজে মোড়া বটানিক্যাল গার্ডেন কিছু স্বস্তির অক্সিজেন সরবরাহ করে। কিন্তু সেই স্বস্তি যাতে বজায় থাকে, তার জন্য যথাযথ দায়িত্ব পালন করা হয় কি? গঙ্গার ভাঙন রাতারাতি আসে না। তা এক দীর্ঘ প্রক্রিয়া। গঙ্গা থেকে যে খাল স্বর্ণময়ী রোডের দিকে গিয়েছে, তার দু’পাশ ভাঙতে ভাঙতে গঙ্গা প্রায় আধ কিলোমিটার এগিয়ে গিয়েছে। কিছু জায়গায় গাছপালা-সমেত জমিও গঙ্গায় তলিয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। ভাঙন রুখতে গঙ্গাতীরের একাংশে কংক্রিটের বাঁধ দেওয়া হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয়। ফলে, পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, তা বিশদে আলোচনা প্রয়োজন। ২৭৩ একর জুড়ে ছড়িয়ে থাকা এই সুবিশাল উদ্যান রাজ্যের গর্ব। বহু দুষ্প্রাপ্য ও দুর্মূল্য উদ্ভিদের ঠিকানা। তাই তাকে বাঁচাতে সর্বশক্তি নিয়োগ করতে হবে। ২০২০ সালের আমপান ঘূর্ণিঝড়ে উদ্যানের যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে। অতঃপর গঙ্গার ভাঙনে যদি বিভিন্ন জায়গা তলিয়ে যায়, তবে সামগ্রিক ভাবে রাজ্যের পরিবেশের পক্ষে দুঃসংবাদ।
এ প্রসঙ্গে গঙ্গার নাব্যতা হ্রাসের প্রসঙ্গটিও উল্লেখযোগ্য। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় গঙ্গা পরিষদের অন্যতম সদস্য রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ। অথচ, সেই রাজ্যেই এক দিকে গঙ্গার ভাঙনে একের পর অঞ্চল তলিয়ে যায়, অন্য দিকে গঙ্গার পলি তোলার কাজটিও যথাযথ হয় না। কলকাতা বন্দর গঙ্গার পলি নিষ্কাশনের কাজ করলেও তার পরিসর যথেষ্ট সীমিত। এবং পরিবেশবিদদের একাংশের দাবি, পলি নিষ্কাশন করে বন্দর কর্তৃপক্ষ গঙ্গাতেই ফেলে রাখায় নদীর নাব্যতা কমে যায়। সুতরাং, একই মামলায় বটানিক্যাল গার্ডেনের সঙ্গে গঙ্গার ভাঙনের বিষয়টিকেও প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। হলফনামা জমা দিতে বলা হয়েছে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকেই। কিন্তু গঙ্গার ভাঙন বা বিপন্নতা সংক্রান্ত আলোচনাগুলি নতুন নয়। এই সংক্রান্ত বহু প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, উপযুক্ত পদক্ষেপের বহু আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। অথচ ক্ষতির পরিমাণ কমেনি। বিপদ এখন রাজ্যের অমূল্য সম্পদে আঘাত হেনেছে। কত দ্রুত সেই বিপদ-মুক্তি ঘটে, তা-ই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy