Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Gautam Adani

উন্নয়নের স্বার্থে

এই চক্রটিকে দূরে সরিয়ে রেখে কেরল ও গুজরাতের দু’টি ঘটনাকে বিচার করলে গণতান্ত্রিক দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সংক্রান্ত একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ওঠে।

—প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০২৪ ০৮:২৪
Share: Save:

কয়েক দিনের ব্যবধানে আরব সাগরের উপকূলবর্তী দুই রাজ্যের দু’টি সমুদ্রবন্দর সংক্রান্ত দু’টি ঘটনা সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে এসেছে। দু’টি বন্দরই আদানি গোষ্ঠীর মালিকানাধীন। ভারতীয় রাজনীতিতে গত কয়েক বছরে এই গোষ্ঠীর নাম বহুবিতর্কিত, বিতর্কের কারণ বা উপলক্ষগুলিও সর্বজনবিদিত। রাষ্ট্রনীতি এবং অর্থনীতির সম্পর্ক যখন জটিল এবং কুটিল, তখন এমন বিতর্ককে অপ্রাসঙ্গিক বলে উড়িয়ে দেওয়া চলে না, বরং একটি গণতান্ত্রিক দেশে তার বিভিন্ন তথ্য, যুক্তি ও প্রতিযুক্তি বিশদ ভাবে বিচার বিশ্লেষণ করা দরকার, জনসমক্ষে আনা দরকার। এ দেশে, প্রধানত বর্তমান শাসকদের আলোচনা-বিমুখ, অসহিষ্ণু এবং অহমিকাসর্বস্ব মানসিকতার কারণে, সেই স্বচ্ছ এবং তথ্যনির্ভর যুক্তিবিচারের ধারাটি অধুনা ভয়ানক ভাবে বিপন্ন। তার একটি পরিণাম এই যে, উন্নয়নের ব্যাপক ও গভীর প্রশ্নগুলি নিয়ে জনপরিসরে সুচারু আলোচনার কোনও পরিবেশই তৈরি হয় না, সব বিতর্কই আমরা বনাম ওরা নামক তরজার দুষ্টচক্রে আবর্তিত হয়ে চলে।

এই চক্রটিকে দূরে সরিয়ে রেখে কেরল ও গুজরাতের দু’টি ঘটনাকে বিচার করলে গণতান্ত্রিক দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সংক্রান্ত একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ওঠে। এক দিকে, কেরলের তিরুঅনন্তপুরমের কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুর সম্প্রতি সেখানকার একটি নতুন বন্দরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেননি। ওই বন্দর নির্মাণে তাঁর পূর্ণ সমর্থন আছে, কিন্তু তাঁর বক্তব্য: সেই নির্মাণের ফলে উৎখাত হওয়া নাগরিকদের ক্ষতিপূরণের যে প্রকল্প পূর্ববর্তী (কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন) ইউডিএফ সরকার ঘোষণা করেছিল, বর্তমান এলডিএফ সরকার তা কার্যকর করেনি; এই অন্যায়ের প্রতিবাদেই ওই অনুষ্ঠান থেকে তাঁর দূরে থাকার সিদ্ধান্ত। অন্য দিকে, গুজরাতে বন্দরের প্রয়োজন মেটাতে গোচারণভূমি দখল করা নিয়ে মামলা চলছিল, পশুপালনের জন্য গ্রামের কাছাকাছি যথেষ্ট বিকল্প চারণভূমির বন্দোবস্ত করতে হবে— এটাই গ্রামবাসীদের দাবি। গুজরাত হাই কোর্টের নির্দেশ অনুসারে রাজ্য সরকার সম্প্রতি বন্দরের ১০৮ হেক্টর জমি পুনরুদ্ধারের বিজ্ঞপ্তি জারি করে। সুপ্রিম কোর্ট ওই নির্দেশে স্থগিতাদেশ দিয়েছে, ফলে বন্দরের জমি আপাতত বন্দরের হাতেই থাকছে। গোচারণের জমি উদ্ধারের জন্য যাঁরা মামলা এবং আন্দোলন করছিলেন, তাঁরা হতাশ।

রাজনীতিক একটি অনুষ্ঠান বয়কট করে রাজ্য রাজনীতিতে নিজের তথা দলের বাজারদর বাড়াতে আগ্রহী কি না, সে-প্রশ্ন থাকুক। সর্বোচ্চ আদালত শেষ অবধি কোন ন্যায়বিচার সাব্যস্ত করে, সেটাও মহামান্য বিচারকদের এক্তিয়ারে পড়ে। কিন্তু এই দু’টি ক্ষেত্রেই একটি পুরনো প্রশ্ন নতুন করে উঠে এসেছে। পুনর্বাসনের প্রশ্ন। দেশের বিভিন্ন এলাকায় উন্নয়নের জন্য স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের বসতি, জীবিকা এবং পরিবেশের উপর আঘাত লাগে, এই অভিঘাতকে এড়ানো কার্যত অসম্ভব। এই কারণেই তাঁদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দরকার হয়, দরকার হয় পুনর্বাসনের। সরকারকেই তা নিশ্চিত করার দায় নিতে হয়, সেটা যথার্থ গণতন্ত্রের মৌলিক দায়। দুর্ভাগ্যের কথা, বহু ক্ষেত্রেই— কি রাজ্যে, কি কেন্দ্রে— সরকার সেই দায় বহনে যথেষ্ট মনোযোগী বা আগ্রহী নয়। ক্ষতিপূরণ যথাসম্ভব কমিয়ে রাখা এবং নির্ধারিত ক্ষতিপূরণ না দেওয়ার রীতি কেবল কেরল বা পশ্চিমবঙ্গ নয়, দেশ জুড়েই বহুলপ্রচলিত। অন্য দিকে, পুনর্বাসনের নামে উন্নয়ন-উদ্বাস্তু মানুষকে কার্যত প্রতারণা করার নজিরও অতি সুলভ, একটি অঞ্চলর গোচারণভূমি কেড়ে নিয়ে দূরবর্তী কোনও এলাকায় পাঠিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনায় দায় সারবার তাগিদ আছে, বিপন্ন উদ্বাস্তুদের যথার্থ বিকল্প জীবন খুঁজে দেওয়ার সদিচ্ছা নেই। শাসকের এই ঔদাসীন্য বা অমানবিকতা গণতন্ত্রের প্রতিকূল। এবং, তা যে শেষ অবধি উন্নয়নেরও অনুকূল হয় না, ইতিহাসে তার বিস্তর প্রমাণ আছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Gautam Adani sashi tharoor Congress
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy