Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Alexei Navalny

গণতন্ত্রের হিতার্থে

আদর্শকে পশ্চাতে ফেলিয়া হাত ধরিয়াছেন স্তালিনপন্থী, জাতীয়তাবাদী ও উদারপন্থীরা। এই মুহূর্তে রাশিয়ার নিকট প্রশ্নটি কেবল রাজনৈতিক অগ্রাধিকারের।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৫:০৮
Share: Save:

এমনিতে শান্তিপ্রিয় হইলেও কখনও কখনও রাজনৈতিক অনীহা বিসর্জন দিয়া জ্বলিয়া উঠে রুশ জাতি। কালে কালে তাহার সাক্ষী হইয়াছেন নেপোলিয়ন বোনাপার্ট, জ়ার নিকোলাস, অ্যাডলফ হিটলার, সোভিয়েট নেতৃবর্গ। সাক্ষী হইবেন কি প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও? তাঁহার একনায়কতন্ত্রের কথা বিশ্ববাসী ন্যূনাধিক অবগত, তুলনায় স্বল্পপরিচিত রাশিয়ার প্রতিবাদী সমাজ— অগণতন্ত্র লইয়া ঘর করিলে যাহা স্বাভাবিক। এক্ষণে সেই স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধেই গণসংগ্রাম শুরু হইয়াছে। বিরোধী নেতা আলেক্সেই নাভালনির স্বর দমন করিতে বিষাক্ত নার্ভ এজেন্ট প্রয়োগ, এবং তিনি প্রাণে বাঁচিয়া গেলে পুনঃপুনঃ তাঁহাকে কারাবন্দি করা— অগণতন্ত্রেও সম্ভবত এই ঘটনা বিরল। শেষাবধি ইহাই উত্তাল করিয়াছে সমগ্র রাশিয়ার নাগরিক সমাজকে। বস্তুত, এত কাল প্রশাসনের বিরুদ্ধে যাঁহার যত ক্রোধাগ্নি ধিকধিক করিয়া জ্বলিতেছিল, নাভালনির উপর আক্রমণে তাহাতে ঘি পড়িয়াছে। পুলিশ নামিয়াছে, লাঠি চলিয়াছে, গ্রেফতার হইয়াছেন পাঁচ সহস্রাধিক নাগরিক। তবু দমে নাই প্রতিবাদ। রুশবাসীকে কাবু করিতে পারে নাই মাইনাস ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাও।


অভূতপূর্ব ক্ষোভের প্রেক্ষাপট বিস্তারিত। ২০০৮ হইতে বারংবার রুশ রাজনীতির বিবিধ দুর্নীতি ফাঁস করিয়াছেন নাভালনি, তাহাই রাজনৈতিক প্রচারের মূল পুঁজি। ২০১৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তাঁহার প্রার্থী-পদ বাতিল হয়, একাধিক বার গ্রেফতার হন তিনি। দুর্জনে বলিবেন, ভিন্নমতাবলম্বীদের দীর্ঘায়ু কামনা করে না রুশ প্রশাসন। সরকারের অলিন্দে কান পাতিলেই যা শুনা যায়, জনতার ভিতরেও তাহা অজ্ঞাত থাকে না। দীর্ঘকালীন অপশাসনের পশ্চাতে যে দুরারোগ্য দুর্নীতির ব্যাধি রহিয়াছে, ইহা বুঝিয়াছে সাধারণ মানুষ, নাভালনির জনপ্রিয় হইতেও বিলম্ব হয় নাই। বিক্ষোভের মাত্রা বাড়াইয়াছে অর্থনৈতিক দুরবস্থা, ভোটে বিপুল কারচুপি, অতিমারি সামলাইবার ব্যর্থতা। ক্রমশ সমার্থক হইয়া উঠিয়াছে তিনটি দাবি: নাভালনির মুক্তি, রাশিয়ার মুক্তি ও ‘পুতিনবাদ’-এর পতন। জমানা পরিবর্তনের দাবি নাভালনি করেন নাই, সেই দাবি জনগণের ভিতর হইতেই উঠিয়া আসিয়াছে।


ইহাই প্রতিবাদটির অনন্যতা। আদর্শকে পশ্চাতে ফেলিয়া হাত ধরিয়াছেন স্তালিনপন্থী, জাতীয়তাবাদী ও উদারপন্থীরা। এই মুহূর্তে রাশিয়ার নিকট প্রশ্নটি কেবল রাজনৈতিক অগ্রাধিকারের। পুতিনবাদের ন্যায় বড় ‘বিপদ’ যখন আসিয়াছে, যাহা গণতন্ত্র বস্তুটিকেই পাল্টাইয়া ফেলিতে উদ্যত, তখন তাহার বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ লড়াই বিনা কি পথ আছে? বহু যুগ পূর্বে ফ্যাসিস্টবিরোধী সংগ্রামে জোট বাঁধিয়াছিল নানা আদর্শে বিশ্বাসী শক্তি। ইদানীং কালে আদর্শ শুধু বিভাজন সাধনই করিয়াছে, সমমনস্ক হইয়াও এক মঞ্চে আসিতে স্বস্তি বোধ করে নাই বহু রঙের রাজনীতি। অতএব, রাশিয়ার প্রতিবাদ দুইটি বিষয় বুঝাইল। প্রথমত, রাষ্ট্রের টনক নড়াইতে লড়াইয়ের প্রত্যেকটি সরণি খুঁজিয়া দেখা বাঞ্ছনীয়, নচেৎ কতিপয় ‘এলিট’ বা কোনও ক্ষুদ্র গোষ্ঠী পরিসর ছাপাইয়া সমাজের সর্বাংশকে আন্দোলিত করা অসম্ভব। দ্বিতীয়ত, কোন বিপদটি গণতন্ত্রের পক্ষে সর্বাধিক, ইহা বুঝিয়া লওয়াও একটি প্রাথমিক কর্তব্য। নিবু নিবু গণতন্ত্রকে বাঁচাইবার এই অভিনব লড়াই বিশ্বের প্রতিটি দেশের পক্ষেই শিক্ষণীয়।

অন্য বিষয়গুলি:

Agitation Russia Alexei Navalny
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy