প্রতীকী ছবি।
মাওবাদী আক্রমণ আরও এক বার। কোভিড-কালের সাময়িক স্তব্ধতা কাটাইয়া মাওবাদীরাও পুনর্বার ‘কাজে’ যোগ দিয়াছে। বাস্তবিক, গত দুই সপ্তাহের মধ্যে দুই বার ভয়াল আক্রমণ— ২৪ মার্চ ছত্তীসগঢ়ের নারায়ণপুর জেলায় বিস্ফোরণে একটি গোটা বাস উড়াইয়া ৫ জন পুলিশ নিহত ও ১৩ জনকে আহত করিবার ঘটনার পর ৩ এপ্রিল আবার সেই একই রাজ্যে বিজাপুরে গ্রেনেড-রকেট হানায় ২২ জওয়ান নিধন— ইহার আগে এমন ভয়ঙ্কর কাণ্ড ঘটিতে দেখা গিয়াছিল ঠিক এক বৎসর পূর্বে, ২০২০ সালের মার্চ মাসে, যখন ছত্তীসগঢ়ের সুকমায় ১৭ জন জওয়ানের প্রাণ গিয়াছিল ভয়াল মাওবাদী-স্পেশাল টাস্ক ফোর্স সংঘর্ষে। সাম্প্রতিকতম হানায় কয়েক জন মাওবাদীও নিহত হইয়াছে বলিয়া দাবি, তবে প্রায় ৪০০ মাওবাদীর একযোগে এমন আক্রমণ ২০১০ সালের দন্তেওয়াড়ার ভয়াবহতাকেই মনে করাইয়া দেয়। গত কিছু কাল ধরিয়া নাকি বিজাপুর-সুকমা অঞ্চলে মাওবাদী নিয়ন্ত্রণ শক্তপোক্ত হইবার ইঙ্গিত ছিল। অর্থাৎ, বার্তা থাকা সত্ত্বেও আক্রমণ প্রতিহত করা যায় নাই। কেবল বহুসংখ্যক জওয়ান হত এবং আহত হন নাই, বাহিনীর অস্ত্রশস্ত্রও লুণ্ঠিত হইয়াছে। সব মিলাইয়া, এই পর্বে মাওবাদীরা ‘জয়ী’। এক বৎসর কালের ‘ছুটি’র পর তাহারা সাড়ম্বরে কাজে ফিরিয়াছে।
ঘটনার বিবরণ হইতে আর একটি বিষয়ও স্পষ্ট। যে ভাবে ২০০০ জন জওয়ান সম্বলিত পাঁচটি দলে বিভক্ত বাহিনীর উপর অতর্কিত আক্রমণ চালাইয়া মাওবাদীরা ‘জয়’ ছিনাইয়া লইয়াছে, তাহাতে নিরাপত্তাবাহিনীর তরফে অপ্রস্তুতির ইশারাও স্পষ্ট। বিষয়টি সরল নহে। গোপন তথ্য বা ইন্টেলিজেন্স, সামরিক পরিকল্পনা ও আগাম অনুমানের উপর ভিত্তি করিয়া এই দুর্গম অঞ্চলে ‘অপারেশন’ পরিকল্পিত হয়। অনেক কম সুবিধাজনক অবস্থানে থাকিয়াও মাওবাদী বাহিনী যে তাহা এমন হেলায় বানচাল করিয়া দিতে পারে— সেই তথ্যের মধ্যে একটি বিপুল অসহায়তা ও ব্যর্থতা রহিয়াছে। প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই নৃশংস আক্রমণের পাল্টা জবাব দিবেন, প্রতিশ্রুতি করিয়াছেন। কিন্তু যে জওয়ানদের প্রাণ বাহির হইয়া গেল, কিংবা যাঁহারা ভয়ঙ্কর ভাবে আহত হইলেন, তাঁহাদের দিকে তাকাইয়া প্রশ্ন উঠিবে— মন্ত্রীদের নিকট ‘জবাব’ যদি থাকেই, তাহা হইলে জওয়ানদের প্রাণবিনাশের আগে সেই জবাবের বন্দোবস্ত হইল না কেন? আক্রমণের পর ব্যবস্থা না লইয়া আক্রমণ না ঘটাইবার ব্যবস্থা তো একমাত্র রাষ্ট্রই করিতে পারে। তাহা করা হয় নাই কেন? পাঁচ বৎসর আগে প্রধানমন্ত্রী নিজের পিঠ চাপড়াইয়া বলিয়াছিলেন, মাওবাদী সঙ্কটের সমাধান তিনি করিয়া দিয়াছেন। না, তিনি ও তাঁহারা তাহা করিতে ব্যর্থ। এবং চূড়ান্ত ব্যক্তিগত ক্ষতি স্বীকার করিয়া জওয়ানরা ও তাঁহাদের পরিবারবর্গ কেন্দ্রীয় সরকারের সেই ব্যর্থতার দাম চুকাইতেছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কেন দেশের অন্য সমস্ত দায়দায়িত্ব ছাড়িয়া পশ্চিমবঙ্গ ও অসমের ভোটের দিকে তাকাইয়া ঘাঁটি বানাইয়া বসিয়া আছেন, কংগ্রেস ও অন্যান্য বিরোধী দল প্রশ্ন তুলিয়াছে। সঙ্গত প্রশ্ন। যদিও এ কথা ঠিক যে কখন কোথায় রাষ্ট্রবিরোধী মাওবাদীরা আক্রমণ শানাইবে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর গতিবিধির উপর তাহা নির্ভর করে না— কিন্তু অস্বীকার করা কঠিন যে, যুগপৎ তাঁহার ও প্রধানমন্ত্রীর মানসভুবনে দেশের অন্যান্য অভ্যন্তরীণ বিষয় অনেক কালই তুচ্ছ হইয়া গিয়াছে। তাঁহারা এখন কেবল বাংলার নির্বাচন ‘ম্যানেজ’ করিবার ভূমিকায় অবতীর্ণ। অবশিষ্ট দেশের পক্ষে ইহা বিষম বিপন্নতা, বাংলার পক্ষেও, মাওবাদী সঙ্কটের সহিত পশ্চিমবঙ্গের যোগ অজানা নহে। তবে রাজনীতি বলিতে যাঁহারা শুধু ক্ষমতাদখল বুঝেন, শাসনকার্য বুঝেন না, তাঁহাদের নিকট ইহার বেশি কী-ই বা আশা করা যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy