Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
One year of Corona

এক বৎসর পরে

স্পষ্টত, লকডাউনের ফলে ভারতে আর্থিক অসাম্য বাড়িয়াছে। বহু মানুষ দারিদ্রসীমার নীচে নামিয়া গিয়াছেন; দেশে মধ্যবিত্তের সংখ্যা হ্রাস পাইয়াছে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২১ ০৫:০৩
Share: Save:

দেশব্যাপী লকডাউনের এক বৎসর অতিক্রান্ত হইল। অর্থাৎ, সেই অভূতপূর্ব ঘটনাক্রমের লাভ-ক্ষতির হিসাব লইবার সময় হইয়াছে। পিছন ফিরিয়া দেখিলে প্রথম প্রশ্ন যাহা উদয় হয়, গত মার্চে দেশবাসীকে প্রস্তুত হইবার জন্য বিন্দুমাত্র সময় না দিয়া গোটা দেশকে স্তব্ধ করিয়া দিবার সিদ্ধান্তটি কি অপরিহার্য ছিল? আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমাবেশের অপেক্ষা না করিয়াই যদি আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল বন্ধ করা হইত, লকডাউনের মতো কঠোর পদক্ষেপ আরও অনেক পিছনে ঠেলা যাইত না কি? প্রসঙ্গত, কোন দেশে লকডাউন কতখানি কঠোর, বিশ্বব্যাপী তাহার সূচকে ভারত সর্বোচ্চ স্তরে থাকিয়াছে। অবশ্যই এই কঠোরতার ফলও মিলিয়াছে— অন্য বহু দেশের তুলনায় ভারতে কোভিড-১৯ অনেক কম প্রাণঘাতী হইয়াছে। যদিও এই পরিসংখ্যানের সহিত সরকারি নীতি ও লকডাউনের কঠোরতার সহিত সম্পর্ক কতখানি, তাহা স্পষ্ট নহে। মানিতেই হইবে, ইউরোপ বা আমেরিকার তুলনায় সমগ্র দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব ও পূর্ব এশিয়ায় কোভিড-১৯’এ মৃত্যুর হার অনেক কম। অনুমান, অতীতে বিভিন্ন রোগব্যাধির সংক্রমণের কারণেই এই অঞ্চলে একটি স্বাভাবিক প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়িয়া উঠিয়াছে। কিন্তু আবার, এই অঞ্চলের দেশগুলির মধ্যে তুলনা করিলে স্পষ্ট যে, প্রতি এক লক্ষ জনসংখ্যাপিছু ভারতে মৃত্যুর হার অপেক্ষাকৃত বেশি। অর্থাৎ, ভারতে কোভিড-১৯ যদি কম প্রাণঘাতী হইয়া থাকে, তাহার অনেকটাই হয়তো ভৌগোলিক জলহাওয়া ও মানব-পরিবেশের বিশিষ্টতার দরুন। সরকারি লকডাউন সেখানে হয়তো কেন্দ্রীয় চরিত্রের বদলে পার্শ্বচরিত্রে অবতীর্ণ।

পরের প্রশ্নটি আরও অস্বস্তিকর। এই লকডাউন ভারত সম্বন্ধে এমন কিছু কথা জানাইয়া গেল না কি, যাহা ইতিপূর্বে এত প্রকট ছিল না? আচমকা লকডাউন ঘোষণায় বিপুল সংখ্যক পরিযায়ী শ্রমিক যখন আতান্তরে পড়িলেন, রাতারাতি কাজ হারাইয়া, মাথা গুঁজিবার ঠাঁই হারাইয়া তাঁহারা শহর হইতে গ্রামে ফিরিবার মরিয়া চেষ্টা করিলেন, দেখা গেল সরকার তাঁহাদের পাশে নাই, কোথাও নাই। পরিবহণ অমিল, ফলে ভারতের হাইওয়ে জুড়িয়া মানুষের মিছিল নামিল, শহর হইতে গ্রামের অভিমুখে। কয়েক শত মানুষ পথেই প্রাণ হারাইলেন। তাঁহাদের, এবং অসংগঠিত ক্ষেত্রের কার্যত সমস্ত শ্রমিকের, দুর্দশা বুঝাইয়া দিল, একশত আটত্রিশ কোটি মানুষের এই ‘বৃহত্তম গণতন্ত্র’-এ সামাজিক সুরক্ষা বস্তুটি আসলে অলীক। দেশ জুড়িয়া গ্রামীণ কর্মসংস্থান যোজনায় কাজের চাহিদাবৃদ্ধি বুঝাইয়া দিল, অন্য কোনও বিকল্প মানুষের সম্মুখে নাই। সরকার কয়েক দফা অর্থনৈতিক প্যাকেজ ঘোষণা করিলেও নগদ অর্থসংস্থানের দাবিটি অবহেলিতই থাকিয়া গেল। তাহার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়িল অর্থব্যবস্থার স্বাস্থ্যে: এক ত্রৈমাসিকে ভারতীয় অর্থনীতি ২৪ শতাংশ সঙ্কুচিত হইল। বিশ্বের অগ্রগণ্য দেশগুলির মধ্যে আর কোনও দেশের অবস্থা এত করুণ হয় নাই।

স্পষ্টত, লকডাউনের ফলে ভারতে আর্থিক অসাম্য বাড়িয়াছে। বহু মানুষ দারিদ্রসীমার নীচে নামিয়া গিয়াছেন; দেশে মধ্যবিত্তের সংখ্যা হ্রাস পাইয়াছে। দরিদ্র ও নিম্নবিত্তের জন্য স্বাস্থ্যসুরক্ষার বাজেটে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন বা সংশোধন দেখা গেল না, অথচ অতিমারি বুঝাইয়া দিয়াছে সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থার অসীম গুরুত্ব। এক বৎসরে ভারতে সাঙাততন্ত্র আরও পল্লবিত হইয়া উঠিয়াছে। শিক্ষা হইতে কৃষি, যে সব সংস্কারের জন্য অপেক্ষা করা যাইত, সেইগুলি তড়িঘড়ি পাশ হইয়াছে: স্বাস্থ্য বা অর্থব্যবস্থায় যে সংস্কার জরুরি ছিল, তাহা ঘটে নাই। অসাম্য ক্রমবর্ধমান হইলে সিংহভাগ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে, তাহাতে বাজারের চাহিদাও কমে। লকডাউন জানাইয়াছে, মুখে বাজারের বিকাশের কথা বলিলেও সঙ্কটকালে জনস্বার্থে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ লইতে সরকার নারাজ।

অন্য বিষয়গুলি:

Lockdown One year of Corona
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy