Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Vegetables

দুষ্টচক্র

কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল, কিছু আলগা তত্ত্ব হাওয়ায় ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যথা, দক্ষিণবঙ্গে অতিরিক্ত গরম, দেরিতে বর্ষা আসা, এবং হঠাৎ বৃষ্টিতে ফসল নষ্ট হয়েছে।

vegetables.

গত বছর গরমের আনাজের দাম না পাওয়ায় বহু চাষি এ বছর সেগুলি চাষ করেননি। —ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০২৩ ০৫:৪৬
Share: Save:

আনাজের অগ্নিমূল্য নিয়ে তর্জন-গর্জন হল অনেক। কিন্তু কেন ক্রেতার এই ভোগান্তি, তার উত্তর মিলল না। এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চ এবং বাজারমূল্যের উপর নজরদারির ‘টাস্ক ফোর্স’-এর সদস্যরা কয়েকটি বাজার ঘুরে নানা সদুপদেশ দিয়েছেন বিক্রেতাদের। যথা, অতিরিক্ত লাভের ইচ্ছা ভাল নয়। পাইকারি বাজারে আশি টাকা কিলোগ্রাম দরে কেনা কাঁচা লঙ্কা বিক্রেতারা তিনশো টাকা দরে বিক্রি না করে, একশো টাকায় বিক্রি করাই যথেষ্ট। কোনও খুচরো বিক্রেতা অথবা পাইকারি ব্যবসায়ীকে শাস্তি দেওয়া হয়নি, কোনও বাজার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা করা হয়নি। নজরদারি করার অর্থ যে শুধুই সদুপদেশ দান— তার অসামান্য নিদর্শন দেখল রাজ্যবাসী। ইবি-র সদস্যরা জানিয়েছেন, কোথাও তাঁরা বেআইনি মজুতদারির দৃষ্টান্ত খুঁজে পাননি। তবে দাম বাড়ল কেন? আট-দশ দিনের একটি সময়কালে এক-এক ধরনের আনাজের দ্বিগুণ থেকে তিন গুণ দামে বিক্রি হওয়ার কারণ কী? উৎপাদনের ঘাটতি অথবা সরবরাহের শৃঙ্খলায় ছেদ কি তার প্রধান কারণ? না কি এই মূল্যবৃদ্ধির পিছনে রয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীচক্রের ষড়যন্ত্র? এই প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর দেওয়াই ছিল সরকারের কাজ।

কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল, কিছু আলগা তত্ত্ব হাওয়ায় ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যথা, দক্ষিণবঙ্গে অতিরিক্ত গরম, দেরিতে বর্ষা আসা, এবং হঠাৎ বৃষ্টিতে ফসল নষ্ট হয়েছে। উত্তরবঙ্গে আনাজ নষ্ট হয়েছে অতিরিক্ত বর্ষণে। অন্য রাজ্য থেকে টমেটো বা আদা আসতে পারেনি। তেলের দামের জন্য পরিবহণের খরচ বেড়েছে। এই কারণগুলি কোনওটাই অসঙ্গত নয়, কিন্তু রাজ্য জুড়ে আনাজের দাম প্রায় রাতারাতি দু’তিন গুণ বেড়ে যাওয়ার ব্যাখ্যার জন্য যথেষ্ট কি? রাজ্যের বাজারগুলিতে যা আনাজ প্রয়োজন, তার চেয়ে কত কম আনাজ ছিল পাইকারি বাজার বা আড়তগুলিতে, সেই তথ্য দেওয়া দরকার ছিল। তা হলে বোঝা যেত, বিক্রেতা বাধ্য হয়ে দাম বাড়িয়েছেন, না কি ঝোপ বুঝে কোপ মেরেছেন। কারণ, সাংবাদিকদের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে অন্য চিত্রও। নদিয়ার মহিষবাথান এবং করিমপুরের চাষিদের বক্তব্য, শহরের বাজারে যে সব আনাজের দাম ষাট টাকা থেকে আশি টাকা কিলোগ্রাম, সেগুলো তাঁরা আড়তদারদের বিক্রি করেছেন পাঁচ টাকা থেকে কুড়ি টাকা কিলোগ্রাম দরে। জোগানে ঘাটতিই মূল্যবৃদ্ধির কারণ হলে নিশ্চয়ই চাষির এই দশা হত না। জেলাগুলিতে বিভিন্ন আনাজ বিক্রি করে চাষি গড়ে কত দাম পেয়েছেন, সরকার তার তালিকা বার করলে স্পষ্ট হত, শহরের বাজারের ঝটিতি মূল্যবৃদ্ধির কতখানি ঘটেছে মধ্যস্বত্বভোগীর অঙ্গুলিহেলনে।

প্রকৃত ছবি পাওয়ার আশা কম, কারণ রাজ্যের রাজনীতিতে মধ্যস্বত্বভোগীরাই প্রভাবশালী। ফলে এক দিকে, চাষ অলাভজনক হওয়ায় বহু চাষি কাজ ছেড়ে পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে চলে যাচ্ছেন গ্রাম থেকে। সংবাদে প্রকাশ, গত বছর গরমের আনাজের দাম না পাওয়ায় বহু চাষি এ বছর সেগুলি চাষ করেননি। অন্য দিকে, আনাজ দুর্মূল্য হওয়ায় তা কিনছে না বহু পরিবার। তাতে ক্ষতির মুখে পড়ছে বহু খুচরো বিক্রেতাও। পাশাপাশি চলছে প্রাকৃতিক সম্পদের অপচয়। টমেটো-সহ বহু আনাজ প্রচুর নষ্ট হয় প্রতি বছর। যে সুসংহত পরিকল্পনা থাকলে অপচয় ও অপুষ্টির দুষ্টচক্র বন্ধ হয়, তা প্রণয়নের ধৈর্য বা ইচ্ছা, কোনওটাই নেই রাজ্য সরকারের।

অন্য বিষয়গুলি:

Vegetables Price Hike
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy