Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
gosaba

সমাধানের সন্ধান

ইতিমধ্যে মুখ্যমন্ত্রী আমপান-পরবর্তী বাঁধনির্মাণের অপ্রতুলতা দেখিয়া হতাশা প্রকাশ করিয়াছেন।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০২১ ০৫:৪৫
Share: Save:

গত সপ্তাহে সুন্দরবনের গোসাবা অঞ্চলে কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা প্রতিবাদ মিছিল করিলেন। তাঁহাদের দাবি, ত্রাণের পরিবর্তে তাঁহাদের প্রয়োজন নূতন ‘স্থায়ী’ বন্দোবস্ত। এই বন্দোবস্তের মধ্যে প্রথম ও প্রধান হইল: কংক্রিটের বাঁধ। কেবল তাঁহারা কেন, বহু প্রকৃতিপ্রেমী সংস্থা, দুর্যোগ মোকাবিলার বিশেষজ্ঞও ইতিমধ্যেই নদীবাঁধের প্রয়োজনীয়তার দিকে নির্দেশ করিয়াছেন, যদিও তাহা কংক্রিটের হওয়াই বিধেয় কি না, এই বিষয়ে মতানৈক্য আছে। কিন্তু স্থায়ী বন্দোবস্ত হিসাবে আরও কিছু কাজ জরুরি, সাম্প্রতিক ধ্বংসকাণ্ডের অভিজ্ঞতা বলিতেছে। বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, কেননা গত বৎসরের আমপান এবং এই বৎসরের ইয়াসকে আর ব্যতিক্রমী ঘটনা বলা যায় না— বিশ্বময় প্রাকৃতিক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই ধরনের নদী-বদ্বীপ অঞ্চলের বিপন্নতা ক্রমেই বাড়িতেছে, ইহা এখন স্পষ্ট। ঝঞ্ঝা-বিপর্যয়ের ঘটনা উপর্যুপরি ঘটিতেই থাকিবে, এমন ধরিয়া লইয়া সুন্দরবনের দিকে দ্রুত বিশেষ ভাবে প্রশাসনিক দৃষ্টিপাত অবশ্যকর্তব্য। বিপর্যয় না ঘটিলেও সুন্দরবন অঞ্চলে স্বাভাবিক প্রাকৃতিক কারণেই জীবনযাপন অতীব দুরূহ, তাহা খেয়াল রাখিয়া উন্নয়ন সংস্কার করিতে হইবে। অভিজ্ঞ জনেরা বারে বারেই কথাটি স্মরণ করাইয়া দিলেও সমাজ ও রাজনীতির নীতি-প্রণেতাদের কানে তাহা এখনও যথেষ্ট পরিমাণে প্রবেশ করিয়াছে কি না বলা ভার। সামাজিক আন্দোলন ছাড়া যে দেশে উন্নয়নের কাজ অগ্রসর হয় না, সেখানে বিপন্ন গ্রামবাসীদের বিক্ষোভ হয়তো প্রশাসনের নজর আকর্ষণ করিবে, এই প্রত্যাশাই রহিল।

ইতিমধ্যে মুখ্যমন্ত্রী আমপান-পরবর্তী বাঁধনির্মাণের অপ্রতুলতা দেখিয়া হতাশা প্রকাশ করিয়াছেন। সংশ্লিষ্ট কর্তাদের ভর্ৎসনাও করিয়াছেন। প্রশ্ন থাকিয়া যায়, এই ভর্ৎসনা কি বিলম্বিত নহে? কী কাজ হওয়া দরকার, আর বাস্তবে কী হইতেছে, জানিবার জন্য নিশ্চয়ই প্রাকৃতিক দুর্যোগের অপেক্ষায় থাকিবার কথা নহে, রাজনৈতিক লাভক্ষতির হিসাব করিবারও কথা নয়! প্রাকৃতিক কারণেই সুন্দরবন পশ্চিমবঙ্গের সর্বাপেক্ষা সমস্যাসঙ্কুল অঞ্চল, এখানকার অধিবাসীদের বিপদে ফেলিবার জন্য আমপান বা ইয়াসের মতো বৃহৎ ঘূর্ণিঝড় লাগে না। প্রায় প্রতি বৎসরই হয় অতিবর্ষায়, নয় ব্যতিক্রমী সমুদ্রজোয়ারে তাঁহাদের বাসস্থান, খেতজমি এবং কর্মসংস্থান বিনষ্ট হয়, লবণাক্ত জল ঢুকিয়া সেচের জল হইতে পানীয় জল, সকল কিছুই দুর্লভ করিয়া দেয়। কেবল পানীয় জলের ক্ষেত্রেই যে অভাব নিয়মিত তৈরি হয়, কোনও সভ্য দেশে সেই পরিস্থিতি গ্রহণযোগ্য নয়। সুতরাং, সমস্যাটি ‘স্থায়ী’— শুধুমাত্র দুর্যোগকালীন নহে। তাই সমাধানও ‘স্থায়ী’ হওয়া দরকার।

আশার কথা, গত বৎসরের পর এই বৎসরের বাস্তবই দেখাইয়া দিতেছে, প্রশাসনের তরফে আংশিক দৃষ্টিপাতও কতটা পার্থক্য রচনা করিতে পারে। নয়-নয় করিয়াও যেটুকু কাজ আমপানের পর হইয়াছে, যেটুকু সচেতনতা তৈরি করা গিয়াছে, তাহাতে এই বৎসরের দুর্যোগ মোকাবিলা অনেকখানি সহজ হইয়াছে। গ্রামবাসীরা নিজেরাই অনেকখানি প্রস্তুতি লইতে পারিয়াছেন। মানুষকে ঠিক সময় অস্থায়ী শিবিরে সরাইয়া লওয়া হইতে বাঁধ না ভাঙিতে দেওয়ার ব্যবস্থা, সকল কাজেই স্থানীয় সমাজের সক্রিয় ভূমিকা প্রশাসনের কাজের সহায় হইয়াছে। এই দৃষ্টান্ত হইতে শিক্ষা লওয়া জরুরি। সুন্দরবনকে নিরাপত্তাদানের পথটি দীর্ঘ, কৌশলসাপেক্ষ। সেই পথে প্রশাসন ও সমাজকে পাশাপাশি কোমর বাঁধিয়া নামিতে হইবে। দক্ষিণ এশিয়ার বহু দেশে নদী-বদ্বীপ অঞ্চলে নিরাপত্তা ও নূতন নির্মাণের কলাকৌশল কাজে লাগানো হইতেছে— তাহা পর্যালোচনা করিয়া প্রয়োজনে বিদেশি প্রযুক্তির সহায়তা লইতে হইবে। মোট কথা, সুন্দরবনের সংস্কারের অর্থ যাহাতে কেবল ডিজ়াস্টার রিলিফ বা বিপর্যয়কালীন ত্রাণের মধ্যে আটকাইয়া না থাকে, তাহা নিশ্চিত করা জরুরি কাজ।

অন্য বিষয়গুলি:

gosaba concrete Sunderbans
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy