ফাইল চিত্র।
রাজ্যের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ চটকল বন্ধ হইতে পারে। আশঙ্কা সত্য হইলে প্রায় এক লক্ষ মানুষ কর্মহীন হইবেন, খাদ্যশস্য রাখিবার চটের বস্তা সরবরাহও ব্যাহত হইবে। এমন বিপর্যয়ের সম্মুখে দাঁড়াইয়া চটকল মালিকদের সংগঠন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে অনুরোধ করিয়াছে, চটকলগুলির আধুনিকীকরণের জন্য দ্রুত ব্যাঙ্কঋণের ব্যবস্থা করিতে। ইহা যেন ঘরে আগুন লাগিলে কুয়া খুঁড়িবার আবেদন। বিভিন্ন সময়ে চটকলগুলির উন্নতির জন্য নানা উদ্যোগ গৃহীত হইয়াছে, অনুদান মিলিয়াছে। কিন্তু অল্প কয়েকটি চটকলই তাহার সুযোগ লইয়া নূতন প্রযুক্তি গ্রহণ করিয়াছে। অধিকাংশ চটকল পুরাতন প্রযুক্তি লইয়া খুঁড়াইয়া চলিতেছে। কটু সত্য ইহাই যে, এই রাজ্যের চটকলগুলির একটি বড় অংশের নির্দিষ্ট মালিকানা নাই, রহিয়াছে ইজারাদার, আদালত-নির্দিষ্ট পরিচালকবৃন্দ, অথবা লাইসেন্সপ্রাপ্ত কর্তৃত্ব। কৃৎকৌশলগত উন্নয়নে এই শ্রেণির পরিচালকদের আগ্রহ নাই, বরং খরচ এড়াইয়া কিছু লাভ বাড়াইবার কৌশল খুঁজিতে তাঁহারা আগ্রহী। ফলে কারণে-অকারণে বারংবার দরজা বন্ধ হইয়া যায় চটকলে। কারণ বা অজুহাত হিসাবে শ্রমিক অসন্তোষই সুপরিচিত। কিন্তু এ বারে কারণটি ভিন্ন: কাঁচা পাটের অভাব। আমপান ঝড়ের জন্য পাটের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হইয়াছিল, ফলে দাম বাড়িয়াছে। জুট কমিশনার অবশ্য ইতিমধ্যেই নির্দেশ জারি করিয়া চটকলগুলির পাট মজুত করিবার সীমা ও আড়তদারদের মজুত পাটের পরিমাণ নির্দিষ্ট করিয়াছেন। যাহা ইঙ্গিত দেয়, বাজারে পাটের সরবরাহ না থাকিবার, এবং দাম ঊর্ধ্বমুখী হইবার কারণ হইতে পারে মজুতদারি। শ্রমিক সংগঠনগুলিরও তেমনই অভিযোগ।
শিল্পের বাৎসরিক চাহিদার তুলনায় গত বৎসর পাটের উৎপাদন কম হইয়াছে ঠিকই। কিন্তু বাংলাদেশ হইতে পাট আমদানি হয়, এ রাজ্যের চাষির ঘরে, বিবিধ আড়তে ও চটকলগুলিতে পুরাতন পাট মজুত থাকে। অতএব প্রশ্ন উঠিবে, পাটের জোগান কম হইলেও, তাহার অভাব কি এতই তীব্র যে, চটকল বন্ধ করিতে হইবে? অসাধু ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ করিয়া দাম কমানো এবং জোগান বাড়ানো সম্ভব কি না, তাহা দেখা প্রয়োজন। এই দায় রাজ্য সরকারকেও গ্রহণ করিতে হইবে, কারণ এক সঙ্গে কুড়ি-বাইশটি চটকল বন্ধ হইতে দিলে করোনা কালে কর্মহীনতার অভিঘাত বহুগুণ বাড়িবে। বাজারে কত কাঁচা পাট রহিয়াছে, কত মজুত রহিয়াছে চটকল এবং আড়তদারদের নিকট, তাহার হিসাব পরীক্ষা এমন কিছু দুঃসাধ্য নহে। নূতন পাট উঠিবার পূর্বে চার-পাঁচ মাস কাজ চালাইবার মতো পাট জোগাড় করা যায় কী প্রকারে, সর্বশক্তিতে তাহার অনুসন্ধান করা প্রয়োজন।
পশ্চিমবঙ্গের একটি প্রধান শিল্প হইয়াও চটশিল্প দীর্ঘ দিন উপেক্ষিত, অস্বচ্ছতায় আবৃত। কেন্দ্রীয় সরকার স্বয়ং চটের বস্তার প্রধান ক্রেতা, খাদ্যশস্যে চটের ব্যবহার আইনত আবশ্যক, দেশ-বিদেশের বাজারে পরিবেশ-বান্ধব পাটজাত পণ্যের চাহিদা ক্রমবর্ধমান। তৎসত্ত্বেও বাংলার চটকলগুলি ধুঁকিতেছে, ইহা বড়ই লজ্জার কথা। আজ চাষি দর না পাইয়া পাটের জমি কমাইতেছেন, শ্রমিক হতাশ হইয়া রাজ্য ছাড়িতেছেন। চটকলগুলির একাংশও যেন দরজা বন্ধ করিবার ফিকির খুঁজিতেছে। পাটের দিকে চাহিলে পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতির ভিত্তি বা ভবিষ্যৎ সহসা ঠাহর হয় না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy