জয়ী ৪ অধ্যাপক। সুরজিৎ ধাড়া, ( বাঁ দিক থেকে) অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়, রজতশুভ্র হাজরা ও জ্যোতির্ময়ী দাস। -গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
ভারতে বিজ্ঞান গবেষণায় সর্বোচ্চ শিরোপা শান্তিস্বরূপ ভাটনগর পুরস্কারের বর্তমান বৎসরের ১১ জন প্রাপকের মধ্যে চার জনই বাঙালি। বিগত দুই বৎসরের খতিয়ানও আশাব্যঞ্জক। ২০১৯ সালে ১২ জন পুরস্কারপ্রাপকের মধ্যে চার জন ছিলেন বাঙালি। ২০২০ সালে যে ১২ জন বিজ্ঞানীকে পুরস্কৃত করা হয়, তন্মধ্যে ছয় জন বাঙালি গবেষক। বিজ্ঞান গবেষণায় সাফল্যের পূর্বশর্ত উচ্চ মেধা। কাজেই, মেধার বিচারে বাঙালিকে খাটো করিয়া দেখা অসম্ভব। ভারতীয় বিজ্ঞান গবেষণার মানও বর্তমানে যথেষ্ট উন্নত। আমেরিকার ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (নাসা) কর্তৃক মহাশূন্যে প্রেরিত ‘হাবল স্পেস টেলিস্কোপ’ যাহার সন্ধান পায়নি, ভারত-প্রেরিত অ্যাস্ট্রোস্যাট উপগ্রহটি তাহা সম্ভব করিয়াছে। পুণের ইন্টার ইউনিভার্সিটি সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজ়িক্স-এ গবেষণারত বাঙালি পদার্থবিজ্ঞানী কনক সাহা অ্যাস্ট্রোস্যাটের সাহায্যে ৯৩০ কোটি আলোকবর্ষ দূরবর্তী এক নক্ষত্রের অতিবেগুনি বিকিরণ শনাক্ত করিয়া ব্রহ্মাণ্ডে প্রথম প্রস্ফুটিত আলোর সন্ধান করিয়াছেন। পরীক্ষামূলক জ্যোতির্বিজ্ঞানে ইহা কম বড় কৃতিত্বের ব্যাপার নহে। অন্য একটি সাফল্যের জন্য পুরস্কৃত হইয়াছেন দেবদীপ মুখোপাধ্যায়। তাঁহার গবেষণার বিষয় ক্রিপ্টোগ্রাফি। তথ্য এক্ষণে অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি সম্পদ। বর্তমানে পৃথিবী মানুষে-মানুষে তথ্য আদান-প্রদানের উপর বহুলাংশে নির্ভরশীল। ই-কমার্স এবং ই-ব্যাঙ্কিংয়ের যুগে— এবং হ্যাকিংয়ের উপদ্রবের মধ্যে— আদান-প্রদানের ভিড়ে তথ্য সুরক্ষিত রাখা মুশকিল। আদান-প্রদানের ভিড়ে তথ্যকে সুরক্ষিত রাখিবার পদ্ধতির নাম ক্রিপ্টোগ্রাফি। সহজ কথায়, এই পদ্ধতিতে তথ্যকে পাঠযোগ্যের অতীত করিয়া তোলা হয়। যাহাতে শত্রুপক্ষের হাতে পড়িলেও, ওই তথ্যের নাগাল কেহ না পায়। ক্রিপ্টোগ্রাফি বহু যুগের পুরাতন শাস্ত্র। দেবদীপ সেই শাস্ত্রটিতে একটি অতি তাৎপর্যপূর্ণ নূতন মাত্রা সংযোজিত করিলেন।
চার বিজ্ঞানীর বিজয়গর্বে বাঙালি বিলক্ষণ গর্বিত হইতে পারে— কিন্তু ইহাকে বাংলার সাফল্য বলিয়া দাবি করা মুশকিল। এই সাফল্য বাংলার বাহিরে গবেষণাগারে অর্জিত। তাহা হইলে কি ইহা ধরিয়া লইতে হইবে যে, বাঙালির ভিন্ন ভূখণ্ডে মেধাবী, মাতৃক্রোড়ে নহে? কী কারণ থাকিতে পারে পশ্চিমবঙ্গে গবেষণাগারগুলির ব্যর্থতায়? পশ্চিমবঙ্গের গবেষণাগারগুলিতে কেন এমন সাফল্য অর্জিত হয় না যে, যাহা দেশে সর্বোচ্চ সম্মানে ভূষিত হইতে পারে? এই প্রসঙ্গে একটি কথা স্মরণ করাইয়া দেওয়া বিধেয়— সর্বভারতীয় স্তরে যে রাষ্ট্রপোষিত সংস্থাগুিল বিজ্ঞানে সাফল্য অর্জন করিতেছে, পশ্চিমবঙ্গে তেমন সংস্থার সংখ্যা নেহাতই কম। কোনও এক বিচিত্র কারণে কেন্দ্রের নীতিনির্ধারকরা এই রাজ্যটির কথা বিস্মৃত হন। ফলে, কেন্দ্রপোষিত সংস্থায় অর্থের যে প্রাচুর্য স্বাভাবিক, পশ্চিমবঙ্গের সংস্থাগুলিতে তাহা নাই। কিন্তু তাহারও অধিক সত্য হইল, গবেষণায় বিজ্ঞান চিরকাল প্রতিযোগিতামূলক। গবেষণায় সফল হইতে গেলে উক্ত কথাটি আপ্তবাক্যের ন্যায় স্মরণে রাখিতে হইবে।
পশ্চিমবঙ্গে বিগত অর্ধশতাব্দীকাল ওই কথাটি স্মরণে রাখিবার মানুষের বড়ই অভাব। ভারতের বিভিন্ন ল্যাবরেটরির কর্ণধারগণ বহুকাল ধরিয়া পশ্চিমবঙ্গকে ‘ক্যাচমেন্ট এরিয়া’ বলিয়া গণ্য করেন— অর্থাৎ, এই রাজ্য হইতে তাঁহারা অতি মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের লইয়া যান নিজেদের প্রতিষ্ঠানে। অভিযোগ, অন্য রাজ্যের ল্যাবরেটরিগুলিতে মেধার কদর যে ভাবে হয়, এই রাজ্যে হয় না। বস্তুত, মেধার প্রাচুর্য থাকিলেও তাহার লালন-পালনে এই রাজ্যে অনীহা সর্বগ্রাসী। এখনও সতর্ক হইবার সময় আছে, কিন্তু তাহার জন্য ইতিবাচক ভাবনার প্রয়োজন। আমেরিকার ন্যায় দেশে অতি মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিশেষ স্কুলের ব্যবস্থা আছে, যেখানে তাহাদের জন্য বিশেষ পাঠ্যক্রমের ব্যবস্থা হয়। গতে বাঁধা শিক্ষাব্যবস্থার জাঁতাকলে যাহাতে তাহাদের প্রতিভা পিষ্ট না হয়, তাহা নিশ্চিত করা হয়। পশ্চিমবঙ্গ সরকারও এমন বিশেষ ব্যবস্থার কথা ভাবিতে পারে। প্রাথমিক স্তর হইতে ছাত্র বাছাই করিয়া তাহাদের গড়িয়াপিটিয়া লইতে হইবে। এবং, শিক্ষান্তে তাহাদের উপযোগী গবেষণাগারের ব্যবস্থা করিতে হইবে। তাহাদের বেতনও আন্তর্জাতিক স্তরের সহিত সঙ্গতিপূর্ণ হওয়া বিধেয়। জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসনটি দখল করিতে চাহিলে নিজেদের তাহার জন্য প্রস্তুত করিতে হইবে বইকি।
যৎকিঞ্চিৎ
দল ছাড়ার সময় দলীয় দফতর থেকে এসি মেশিনটাকে খুলে নিয়ে গেলেন কানহাইয়া কুমার। সেই যন্ত্র নাকি তাঁরই টাকায় কেনা। এসি তো আর মৃত্যুহীন প্রাণ নয় যে, বিচ্ছেদের সময় তাকে অবলীলায় দান করে যাওয়া যায়। কিন্তু প্রশ্ন হল, যে নতুন ঠিকানায় পাড়ি দিলেন কানহাইয়া, সেখানে যদি ইতিমধ্যেই এসি থাকে? পুরনো যন্ত্র কি তবে পড়ে থাকবে এক কোণে, অবহেলায়? প্রাক্তন সম্পর্কের কথা মনে করিয়ে দিতে থাকবে নিরন্তর? নতুন সংসারে তা নিয়ে অশান্তি বাঁধবে না তো?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy