Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Pollution

সুরক্ষার স্বার্থে

কেন ভারত সরকার পরিবেশ-বান্ধব পাটের পরিবর্তে প্লাস্টিকের প্রতি অধিক মনোযোগী হইল, সেই প্রশ্ন উঠিতে বাধ্য।

শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৪:৩৮
Share: Save:

এখনই কয়লার ব্যবহার বন্ধ হইবে না, গত বৎসর নভেম্বরে গ্লাসগোর জলবায়ু সম্মেলনে জানাইয়াছিল ভারত। অতঃপর জানুয়ারিতে কেন্দ্রীয় সরকার বুঝাইয়া দিল, প্লাস্টিকের ব্যবহারও সত্বর বন্ধ হইবার আশা নাই। খাদ্যশস্য বহনের জন্য পাটের বদলে প্লাস্টিক ব্যবহারে সায় দিয়াছে কেন্দ্র। এই সিদ্ধান্তের কারণ যাহাই হউক, পরিবেশের উপর এর প্রভাব যে মারাত্মক হইবে, সে সম্পর্কে কোনও বিতর্ক থাকিতে পারে না। প্লাস্টিক দূষণ সারা বিশ্বে এক ভয়াবহ আকার ধারণ করিয়াছে, সমুদ্রের তলদেশ হইতে পর্বতশীর্ষ পর্যন্ত সমস্ত স্থানে বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য এবং জীববৈচিত্রে আঘাত হানিতেছে। প্লাস্টিকের পরিবেশ-বৈরিতা প্রমাণের প্রয়োজন নাই, তাহা সুপ্রতিষ্ঠিত। প্রশ্ন কেবল ইহাই যে, এই সকল তথ্য-প্রমাণ জানিয়াও কেন ভারত সরকার পরিবেশ-বান্ধব পাটের পরিবর্তে প্লাস্টিকের প্রতি অধিক মনোযোগী হইল, সেই প্রশ্ন উঠিতে বাধ্য। কেন্দ্রীয় সরকারের যুক্তি, পশ্চিমবঙ্গের চটকলগুলিই ইহার জন্য দায়ী, তাহারা যথেষ্ট চটের বস্তা উৎপাদন করিতে পারে নাই। গত বৎসর রবি মরসুমেই চটের বস্তা অনেকটা কম পড়িয়াছিল, খরিফ মরসুমেও তাহাই— প্রয়োজনের তুলনায় প্রায় দশ লক্ষ বেল চটের বস্তা কম পড়িয়াছিল। কেন্দ্র তাই রাজ্য সরকারকে চিঠি দিয়া আগাম প্রস্তাব জানাইয়াছিল যে, ২০২১-২২ রবি মরসুমে পঁয়ত্রিশ শতাংশ প্লাস্টিকের বস্তা ব্যবহার করা হইতে পারে। গম, ধান উৎপন্ন হইবার পরেই সারা দেশে তাহাদের সরকারি ক্রয় হয়, যথেষ্ট বস্তা না মিলিলে সেই প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়, কৃষকদের ক্ষোভ সরকারি অধিকর্তাদের উপরেই বর্ষিত হয়। অতএব প্লাস্টিক বস্তা ব্যবহারের আগাম ইঙ্গিত দিয়াছিল কেন্দ্র।

এই সঙ্কট নূতন নহে। এই রাজ্যের চটশিল্প উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরিয়া রাখিতে পারে নাই। দক্ষ শ্রমিক, দক্ষ পাটচাষি, সরকারি ক্রয়ের নিশ্চয়তা (প্রতি বৎসর কেন্দ্র আট হাজার কোটি টাকার চটের বস্তা ক্রয় করে) এবং সরকারি অনুদানের সুবিধা থাকা সত্ত্বেও একের পর এক চটকল বন্ধ হইয়াছে, উৎপাদন কমিয়াছে। অদক্ষ, অপেশাদার উৎপাদন ব্যবস্থার সহিত যোগ হইয়াছে কালোবাজারি। কাঁচা পাটের মজুতদারির ফলে দাম এমনই বাড়িয়াছে যে কাঁচামালের অভাবে বেশ কিছু চটকল দরজা বন্ধ করিয়াছে। শ্রমিক সংগঠনগুলিও পাটের অভাবকে ‘কৃত্রিম সঙ্কট’ আখ্যা দিয়াছে। বাণিজ্যের দৃষ্টিতে যে কোনও পণ্যের দাম মাত্রা ছাড়াইলে ক্রেতা বিকল্পের অনুসন্ধান করিবে, ইহাই স্বাভাবিক। রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী বেচারাম মান্না অবশ্য অনুযোগ করিয়াছেন, বাজারে পাটের দাম বাড়িয়াছে, চটের বস্তার দাম কেন বাড়াইবে না কেন্দ্র?

এই প্রশ্ন যত রাজনৈতিক, তত ব্যবসায়িক নহে। উচিত মূল্যে যথাযোগ্য পণ্য সরবরাহ করিতে না পারিয়া, কেবলই খাদ্যশস্যের জন্য চটের বস্তা ব্যবহারের আইনের সুরক্ষা দাবি করা কোনও গ্রহণযোগ্য সমাধান নহে। চটের সপক্ষে যুক্তি অন্যত্র। কেন্দ্রীয় সরকার বাণিজ্যিক ক্রেতা নহে, দেশের মানুষের স্বাস্থ্য তথা পরিবেশের প্রতি সরকারের দায়বদ্ধতা সর্বাধিক। শিল্পের সুরক্ষার প্রয়োজন লইয়া বিতর্ক থাকিলেও প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের গুরুত্ব লইয়া কোনও প্রশ্ন নাই। পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্রের সুরক্ষার স্বার্থেই প্লাস্টিক বর্জন, এবং চটের ব্যবহার বাড়াইতে হইবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Pollution Plastic Jute
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy