Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
taliban

ভয়ঙ্কর

পাকিস্তানের ভূমিকার কারণেই, মৌলবাদ-শাসিত প্রতিবেশী আফগানিস্তানের সহিত এ বার কোন পথে ভারতের সম্পর্ক চালিত হইবে— এই প্রশ্নের উত্তর সহজ নহে।

শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০২১ ০৫:২৮
Share: Save:

কাবুলের পতন তবে তালিবানের নিকট আফগানিস্তানের সমর্পণ সম্পূর্ণ করিল। সমগ্র বিশ্ব হতচকিত ঘটনার তীব্রতা ও দ্রুততায়। তালিবান তো কেবল মানবাধিকারবিরোধী, পশ্চাৎমুখী, মৌলবাদী শক্তি নহে; বিধ্বংসী সন্ত্রাসবাদী শক্তি হিসাবেও ইহা পরিচিত। সেই তালিবান যে এমন বিদ্যুৎগতিতে, কার্যত বিনা প্রতিরোধে, গোটা দেশ দখল করিয়া ফেলিবে, তাহা অভাবিত ছিল। ইতিপূর্বেও আফগানিস্তানে তালিবান শাসন জারি ছিল ১৯৯৬ হইতে ২০০১ পর্যম্ত। তাহার পর আমেরিকান ও নেটো বাহিনী তালিবানকে পিছু হটাইয়া যে আফগান সরকার গঠন করে, আজ স্পষ্ট যে কুড়ি বৎসরে তাহা কী বিপুল ভাবে ব্যর্থ। তালিবান শাসনের ভয়ানক রূপ, তাহার নারীনির্যাতন ও শরিয়তি শাসনের বিভীষিকাময় বাস্তব দেখিবার পরও যে সরকার ও জনসমাজ সমস্ত শক্তি দিয়া তালিবান প্রতিরোধে ঝাঁপাইয়া পড়ে নাই, তাহাদের দায়িত্বজ্ঞানহীন না বলিয়া উপায় কী। আফগানিস্তান হইতে আমেরিকার বাহিনী প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যেই গোটা বিশ্বে ধিক্কৃত। ব্রিটেন-সহ অন্য ইউরোপীয় শক্তিগুলিও একবাক্যে বলিতেছে যে, আমেরিকার একপাক্ষিক প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তেই আফগানিস্তানে সর্বনাশ নামিয়া আসিল। আমেরিকার নিকট ইহা ভিয়েতনামের তুল্য মহা-পরাজয়, সন্দেহ নাই। তবুও বলিতেই হইবে, গোটা ঘটনায় কেবল আমেরিকার দায়িত্বজ্ঞানহীনতা দেখিলে অতি-সরলীকরণ হইবে। আরও অনেকগুলি জটিল দিক না আলোচনা করিলে তালিবান নামক ভূরাজনৈতিক সঙ্কটটির স্বরূপ বোঝা যাইবে না। বোঝা যাইবে না, ইসলামি মৌলবাদী রাজনীতিটির আন্তর্জাতিক চেহারা। বোঝা যাইবে না, আফগানিস্তানের শাসক-সমাজ অস্ত্র ও অর্থের প্রলোভনে কী ভাবে তালিবানের দিকে দিগ্বিদিকজ্ঞানশূন্য হইয়া ছুটিয়াছে, এবং তাহাদের সেই দিশাহীনতাকে কী ভাবে কাজে লাগাইয়াছে আন্তর্জাতিক ইসলামি মৌলবাদ। একাধিক সাক্ষাৎকারে আফগান নারীরা জানাইয়াছেন তাঁহাদের সমাজের হৃদয়হীনতার কথা। জানাইয়াছেন, যখন বিদেশি শক্তি সে দেশে সামাজিক মুক্তির পক্ষে দাঁড়াইয়াছিল, তখনও আফগান সমাজের এক বড় ক্ষমতাশালী অংশ মৌলবাদী অন্ধতার বশে এবং বিপুল অর্থের প্রলোভনে নিজেদের সমাজের সহিত বিশ্বাসঘাতকতা করিয়াছে। গত রবিবার প্রেসিডেন্ট আশরফ গনির হয়তো দেশ ছাড়িয়া না পলাইয়া গত্যন্তর ছিল না। কিন্তু তিনি ও তাঁহার রাজনৈতিক সহচররা কি বলিতে পারিবেন, গত দশক ধরিয়া দেশ গঠন বা শাসনের কোন কাজ, তালিবান ঠেকানোর কোন বন্দোবস্ত তাঁহারা করিয়াছেন?

ইতিমধ্যে পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব নিশ্চয় পরম পুলকিত: ইহা তাঁহাদের চূড়ান্ত বিজয়। তালিবানের এই বিস্ময়কর অভ্যুত্থানের পিছনে তাঁহাদের ভূমিকা এখন আর কোনও কল্পনা-জল্পনার বিষয় নহে। কয়েক দশক ধরিয়া তালিবানদের জন্য তাঁহারা পাকিস্তানকে ‘অভয়ারণ্য’ বানাইয়া রাখিয়াছেন। আফগানিস্তান দেশটির ভূপ্রাকৃতিক গঠনই বলিয়া দেয়, পাকিস্তান যদি সহায়তা না করিত, তবে সে দেশের জনজাতি-অধ্যুষিত গিরিকন্দরে তালিবান রমরমা এমন অটল, অটুট থাকিতে পারিত না। আমেরিকার নেতৃত্বে নেটো বাহিনী যে দুই দশকে সেখানে দাঁত ফোটাইতে পারে নাই— তাহা কেবল চরিত্রগত ভাবে জনজাতীয় তালিবানের যোদ্ধাবাহিনীর কৃতিত্ব নহে— নিশ্চিত ভাবেই তাহা কোনও মিত্রশক্তির অত্যাধুনিক সমর-প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা-নজরদারির সপ্রেম সহায়তার ফলাফল। তালিবান-শাসিত আফগানিস্তান ঠিক এই কারণেই ভারতের নিকট এক অভূতপূর্ব দুঃসংবাদ। বিশেষত পাকিস্তানের ভূমিকার কারণেই, মৌলবাদ-শাসিত প্রতিবেশী আফগানিস্তানের সহিত এ বার কোন পথে ভারতের সম্পর্ক চালিত হইবে— এই প্রশ্নের উত্তর সহজ নহে।

অন্য বিষয়গুলি:

taliban Afghanistan War
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy