Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Swastha Sathi

অসার আশ্বাস

স্বাস্থ্যবিমার রূপায়ণের পথ আটকে দাঁড়িয়েছে সরকারের অর্থাভাব, না কি স্বাস্থ্যভবনের অকুশলী পরিকল্পনা?

শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২২ ০৪:৪৩
Share: Save:

বঙ্গবাসীর স্বাস্থ্যসাথী নিয়ে দুর্ভোগের পূর্বাভাস মেলে এক শিশুপাঠ্য কাহিনিতে। মনোজ বসুর গল্পে রয়েছে, দৈব কৃপায় এক জনের কাঁঠালগাছের পাতা খসে পড়লে হয়ে যায় টাকার নোট। কৃপা যখন ফুরোল, তখন সে নোট ভাঙাতে গেলে ফের হয়ে যায় কাঁঠালপাতা। রাজ্যবাসীও দেখছেন, যে কোনও হাসপাতালে যে কোনও চিকিৎসার প্রতিশ্রুতি ভরা রয়েছে যে কার্ডে, হাসপাতালে দিতে গেলে তা অচল। সংবাদে প্রকাশ, স্বাস্থ্যসাথীর অধীনে হাসপাতালে ভর্তির হার কমেছে। বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে তিন মাসের জন্য প্রাপ্য দু’শো কোটি টাকা বকেয়া রেখে দিয়েছে রাজ্য সরকার। তাই হাসপাতালগুলি স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে রোগী ভর্তির ঝুঁকি নিতে চাইছে না। তাদের আশঙ্কা, সরকারের ভান্ডার থেকে টাকা মিলবে না। অন্য দিকে সরকারের আশঙ্কা, বিমার সুযোগ নিয়ে দুর্নীতি করছে বেসরকারি হাসপাতাল। অপচয় এড়াতে সরকার কাটছাঁট করছে প্রকল্পে। আগে রোগী ভর্তির নানাবিধ কারণকে একত্রে একটি শ্রেণির অধীনে আনা হয়েছিল, যার শিরোনাম ছিল ‘অনির্দিষ্ট’ (আনস্পেসিফায়েড)। এই শ্রেণিটি সম্প্রতি তুলে দিয়েছে সরকার। স্বাস্থ্যবিমায় দুর্নীতি এড়ানোর এই হল দাওয়াই। এ যেন মাথাব্যথা সারাতে মাথাটি কেটে নেওয়ার বিধান। ওই শ্রেণিটি উঠে যাওয়ার জন্য বহু ধরনের চিকিৎসা স্বাস্থ্যসাথীর বাইরে চলে গিয়েছে, এমনকি ইমার্জেন্সিতে রোগী ভর্তিও বিঘ্নিত হচ্ছে। প্রাণ হারিয়ে টাকা বাঁচানো— এ কেমন নীতি?

স্বাস্থ্যবিমার রূপায়ণের পথ আটকে দাঁড়িয়েছে সরকারের অর্থাভাব, না কি স্বাস্থ্যভবনের অকুশলী পরিকল্পনা? না কি কার্পণ্য আর ভ্রান্তি হাত মিলিয়েছে? জল্পনার বিষয়। তবে এটা নিশ্চিত যে, এর ফলে রাজ্যবাসী কেবল চিকিৎসার সুযোগ হারালেন না, চিকিৎসায় স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তার সুযোগও হারালেন। সরকারি স্বাস্থ্যবিমা প্রকল্পের সুযোগে বেসরকারি হাসপাতালের দুর্নীতি নতুন কিছু নয়। হাসপাতালগুলি অকারণে রোগী ভর্তি করে, অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচার করে, অথবা চিকিৎসা না করেই টাকা দাবি করে। ভারতে ২০০৮ সালে রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনা প্রকল্প শুরু হওয়ার পর থেকেই অকারণ অস্ত্রোপচার, এবং বিচিত্র অজুহাতে বিপুল অপব্যয়ের নিদর্শন সামনে এসেছে। ভারতের এক-একটি জেলা থেকে চোখের ছানি, অ্যাপেনডিক্স বা জরায়ু অপসারণের যে সংখ্যা এসেছে, তাতে বিস্ময়ে বাক্যহারা হয়েছেন কেন্দ্রের স্বাস্থ্যকর্তারা। কেবল সরকারের টাকাই নষ্ট হয়নি, ভ্রান্ত চিকিৎসায় বহু নাগরিকের প্রাণ গিয়েছে। এই ভয়াবহ দৃষ্টান্তগুলি থেকে কোনও শিক্ষা গ্রহণ করেনি পশ্চিমবঙ্গ সরকার। তাই অপ্রয়োজনীয় চিকিৎসা বন্ধ করতে নজরদারির ব্যবস্থা শক্তিশালী না করে, বিমার পরিসরকে ছোট করা হচ্ছে।

সীমাবদ্ধতা নয়, প্রয়োজন ছিল স্বচ্ছতা। বিশ্বের সব দেশে স্বাস্থ্যবিমা প্রকল্পে হাসপাতালের চিকিৎসার প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখা হয়— অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা, ওষুধ প্রয়োগ করলে, ব্যয়সাধ্য চিকিৎসা অকারণে দীর্ঘায়িত করলে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে বিমা কোম্পানি। বেসরকারি বিমাগ্রাহকের সংখ্যা অল্প, তারা মোট রোগীর সামান্য অংশ, তাই দুর্নীতির অভিযোগ বার বার উঠলেও হাসপাতালগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। রাজ্য সরকার
যখন স্বয়ং গ্রাহক, তখন বেসরকারি হাসপাতালগুলি থেকে বিশদ তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে অপ্রয়োজনীয় চিকিৎসা যেমন প্রতিরোধ করা যেত, তেমনই রাজ্যে রোগের গতিবিধি সম্পর্কে তথ্যও মিলত। এই সাশ্রয়কারী ও উপকারী ব্যবস্থার পরিবর্তে সরকারি অপচয় রুখতে বিমার পরিসরকে ছোট করছে। ফলে রোগী হাসপাতালে গিয়ে প্রত্যাখ্যাত হচ্ছেন। স্বাস্থ্যবিমাকেই চিকিৎসালাভের প্রধান উপায় বলে নির্দিষ্ট করেছে সরকার। সুতরাং তার সুষ্ঠু রূপায়ণের দায় সরকার এড়াতে পারে না।

অন্য বিষয়গুলি:

Swastha Sathi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy