Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Rahul Gandhi

মূল্যবান

রাহুল গাঁধী বলিয়াছেন, হিন্দুত্ববাদ আসলে ক্ষমতালোভীদের কারবার, ইহার সহিত ধর্মের সংযোগ বড়ই ক্ষীণ।

শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২১ ০৬:১৩
Share: Save:

আজকালকার হিসাব, ভোট আসিলে ধর্ম আসে। ভোট আসিলেই কোনটি হিন্দু সভ্যতা, আর কোনটি বর্বর অহিন্দু, তাহার তালিকা পেশ করা শুরু হয়। প্রতিযোগিতামূলক গণতন্ত্রের মঞ্চে হয়তো ইহাই অবশ্যম্ভাবী— যেখানে গণতন্ত্র মানে ভোট, ভোট মানে সংখ্যার খেলা, সংখ্যা মানে সংখ্যাগুরুর আবেগ, আর আবেগ উস্কাইবার সিধা রাস্তা ধর্মের ধুয়া। তন্মধ্যেও আবার কোথাও কোথাও এই ধুয়া অধিক কার্যকর, তাই সেখানে ভোটের বাদ্য বাজিলে ধর্মের টিকিটি সজোরে আন্দোলিত হইতে থাকে। তাই উত্তরপ্রদে‌শে হিন্দুত্ববাদী কার্যক্রমের পারদ-উচ্চতা, মন্দির নির্মাণ কিংবা প্রসারণের প্রতিশ্রুতি বর্ষণ, সাধুসন্ন্যাসী গুরু-বাবাদিগের অতিসক্রিয়তাই বলিয়া দেয়— আসিতেছে, ভোট আসিতেছে! তাই নরেন্দ্র মোদী এই মুহূর্তে বারাণসীতে গিয়া মন্দির প্রসঙ্গে ঔরঙ্গজেবকে স্মরণ করিতেছেন, এবং ঔরঙ্গজেব প্রসঙ্গে শিবাজিকে স্মরণ করিতেছেন। আসমুদ্রহিমাচল প্রায় সকল দলই এই দোষে দোষী। কিন্তু গত দুই দশকে ভারতীয় জনতা পার্টি নামক দলটি ইহাকে এভারেস্টের উচ্চতায় উঠাইয়া ফেলিয়াছে। ভাবাদর্শ হইতে জিগির, নির্বাচনী সাফল্যের অভ্রান্ত পথ বলিয়া বিবেচিত হইতেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে রাহুল গাঁধী একটি পুরাতন কথা নূতন করিয়া বলিয়া ভাল করিলেন। হিন্দু ধর্মের সহিত হিন্দুত্ববাদের সম্পর্কটি যে দূরত্বের, এই বহুশ্রুত বহুচর্চিত কথাটি আবার বলিলেন। শুনিলে কাহারও ক্লান্তিকর ঠেকিতে পারে, কিন্তু যেখানে একই অসুখ বার বার ঘুরিয়া আসে, সেখানে একই চিকিৎসাও বার বার করিতে হইবে, উপায় কী।

রাহুল গাঁধী বলিয়াছেন, হিন্দুত্ববাদ আসলে ক্ষমতালোভীদের কারবার, ইহার সহিত ধর্মের সংযোগ বড়ই ক্ষীণ। বলিয়াছেন, হিন্দুরা সব ধর্মের মানুষকে শ্রদ্ধা করেন, হিন্দুত্ববাদীরা অহিন্দুদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করেন। একটি প্রীতির কথা বলে, অন্যটি ঘৃণার কথা। মহাত্মা গাঁধী আদ্যন্ত হিন্দু ছিলেন, কিন্তু হিন্দুত্ববাদী ছিলেন না। তিনি নিজেও তাহাই। স্বভাবতই এই শেষ কথার সূত্র ধরিয়া হইচই পড়িয়াছে— রাহুল গাঁধী নিজের হিন্দু পরিচিতিটি সামনে তুলিতে উৎসুক। বিজেপি নেতৃবৃন্দ হইতে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল সিদ্ধান্ত টানিয়াছেন, রাহুল গাঁধী তথা কংগ্রেস আবার নরম হিন্দুত্বে ফিরিতেছে। বিজেপির চাপের সামনে তাঁহাদের নিকট এতদ্ব্যতীত পথ খোলা নাই। এক দিকে তিনি অহিন্দুদের সহিত চলিতে চান বলিয়া প্রীতির কথা, অন্য দিকে হিন্দুদেরও হারাইতে চান না বলিয়া নিজের হিন্দু সত্তার কথা। হয়তো ভুল নাই এই পর্যবেক্ষণে। ‘নরম হিন্দুত্ব’ নামক রাজনীতির জন্য কংগ্রেস ভারতের স্বাধীনতাপূর্ব যুগেও পরিচিত ছিল, স্বাধীনতার পরও ধারাবাহিক ভাবে এই পথটিতে সে হাঁটিয়াছে। হিন্দুত্ববাদের আজিকার যে বাড়বাড়ন্ত, তাহার পিছনে কংগ্রেসের অবদান খুব সামান্য নহে। রাহুল গাঁধীও যদি আজ তাঁহার পিতামহী ও পিতার পথটিতে হাঁটিয়া একই রকম সমালোচিত হন, আশ্চর্যের কিছু নাই।

কিন্তু ইহাতে রাহুল গাঁধীর মূল বক্তব্যটির গুরুত্ব কমে না। ব্যক্তিগত ধর্মাচরণ কিংবা সামাজিক ধর্মীয়তার অর্থ হিন্দুত্বের রাজনীতি নহে। বরং ইহাদের পার্থক্যটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ। হিন্দুধর্ম বনাম রাজনৈতিক হিন্দুত্ববাদ, কিংবা ইসলাম বনাম রাজনৈতিক ইসলামের দ্বৈততাটি না বুঝিলে ভারতের মতো দেশে পদে পদে সঙ্কট। ইতিমধ্যে সমাজ, ধর্ম, রাষ্ট্র, ব্যক্তির পারস্পরিক সম্পর্কের উপর বহু আলো ফেলিয়াছে নূতন বিশ্লেষণ। সত্যই কি ধর্মকে বাদ দিয়া সমাজমনকে ধরা যায়? প্রশ্ন উঠিয়াছে। লক্ষণীয় ইহাই যে, সমাজে, লোকাচারে জড়াইয়া থাকে যে ধর্মভাব, তাহা অন্যকে ‘অপর’ বানাইয়া ক্ষমতার সাধনা করে না। এখানেই ধর্মাচার ও রাজনৈতিক ধর্মবাদের পার্থক্য। রাহুল গাঁধীর রাজনীতির সমর্থক না হইলেও তাঁহার এই কথাটি সর্বতো ভাবে সমর্থন করা জরুরি।

অন্য বিষয়গুলি:

Rahul Gandhi Hindutva
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy