আঁতে বারংবার ঘা লাগা যে কু-অভ্যাসে দাঁড়াইয়া গিয়াছে, আরও এক বার বুঝা গেল। আমেরিকার মাটিতে ‘দুই ভারত’ লইয়া বীর দাসের স্ট্যান্ড-আপ কমেডির জেরে সমাজ ও সমাজমাধ্যম দুই-ই তোলপাড়, তদুপরি দিল্লি ও মুম্বইয়ে শিল্পীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগপত্র জমা পড়িল— বিদেশের মাটিতে দাঁড়াইয়া ভারতকে ছোট করিবার, েদশের মানহানির অভিযোগ। ইহাও নূতন নহে। বীর দাস এবং আরও বহু স্ট্যান্ড-আপ কমেডিয়ান— কুনাল কামরা, কিকু শারদা, তন্ময় ভাট, মুনাওয়ার ফারুকিরা হাসিতে হাসিতেই বলিবেন, তাঁহাদের বিরুদ্ধেও কত বার সমধর্মী অভিযোগ উঠিয়াছে, থানা-পুলিশ হইয়াছে, মামলা গড়াইয়াছে আদালতে। অসহিষ্ণুতার আস্ফালন, কমেডি না বুঝিবার তর্জনের সহিত তাঁহারা যেমন পরিচিত, তেমনই পরিহাস-বিদ্রুপে মোড়া তাঁহাদের ‘পারফরম্যান্স’ যে আসলে বাক্স্বাধীনতারই বহিঃপ্রকাশ, আদালতের সেই সমর্থনও তাঁহাদের কম জুটে নাই।
তবু দিন কয়েক পরে পরেই শিল্পীদের নামে এফআইআর, আদালতে মামলা উঠিবার ঘটনায় প্রশ্ন জাগে, আদালত কেন এই ধরনের মামলাগুলিকে আদৌ উঠিতে দিবে? পরিহাসের ছলে দেশকে ছোট করিবার এই অভিযোগের অসারতা যেখানে দিবালোকের মতো স্পষ্ট, বিভিন্ন সময়ে আদালতের বক্তব্য বা রায়দানেও পরিষ্কার— সেখানে একই ধরনের অভিযোগ লইয়া মামলা বা দীর্ঘ বিচারপ্রক্রিয়া বহিয়া চলিবার কোনও সঙ্গত কারণ আছে বলিয়া মনে হয় না। বিশেষত সেই ভারতে, যেখানে নিম্ন হইতে উচ্চ সমস্ত আদালতে মামলার সংখ্যা পাহাড়প্রমাণ, প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বিচারক ও অপর্যাপ্ত পরিকাঠামো হেতু মামলাগুলি শুনিয়া উঠাই বিপুল সময়সাধ্য কাজ, বিচারপ্রক্রিয়া যথাযথ ভাবে সম্পন্ন করিয়া রায়দানের কথা নাহয় ছাড়িয়াই দেওয়া গেল। ন্যায়বিচার, এবং সময়ের মধ্যে ন্যায়বিচার পাওয়াই যেখানে দুর্লভ, যে দেশে আদালতে উঠা মামলার সিংহভাগই হরেদরে এক বৎসর পরেই খারিজ হইয়া যায়, সেখানে বিদেশের মাটিতে এক কৌতুকজীবীর পূর্বনির্ধারিত এক ‘স্ক্রিপ্ট’-এর জেরে দেশের মানহানি হইবার হাস্যকর অভিযোগ বিচারকের সামনে আসিয়া পড়িবে? কৃষি, শ্রম, অর্থনীতি, মানবাধিকারের ক্ষেত্রে ঘটিয়া চলা অবিচার নহে, রাজ্য বা রাষ্ট্রীয় স্তরে দুর্নীতি-কেলেঙ্কারির মামলা নহে, বিচারকের মূল্যবান সময় ও শ্রম যাইবে দেশকে ঠাট্টার নিহিতার্থ বুঝাইতে? ন্যায্য কারণে বিচারপ্রার্থী লক্ষ লক্ষ ভারতীয়ের প্রতিই কি তাহা এক নির্মম তামাশা নহে?
শিল্পী তথা নাগরিকের বাক্স্বাধীনতা রক্ষায় ভারতের সংবিধানই সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী বর্ম, আদালতই বারংবার তাহা স্পষ্টও করিয়া দিয়াছে। সে কথা যাঁহারা বুঝেন না, তাঁহাদের প্রতি বরং ‘জ়িরো টলারেন্স’ নীতি লইয়া, কড়া করিয়া সংবিধান-স্বীকৃত অধিকারটি বুঝাইয়া দেওয়া বিচারব্যবস্থার কাজ। বীর দাসের প্রসঙ্গেই আগে এক বার দিল্লি হাই কোর্ট বুঝাইয়া বলিয়াছিল ‘স্যাটায়ার’-এর অর্থ, শিল্পীর হাতে পড়িয়া কী করিয়া তাহা চারিপাশের মন্দগুলিকে একটু বেশিই প্রকট করিয়া তুলে। ভারতীয় বিচারব্যবস্থা বাক্স্বাধীনতার সেই বার্তাই দিয়া যাক— বীর দাস বা এই জাতীয় মামলাগুলি শুনিবার কোনও এক পর্যায়ে নহে, এ-হেন তুচ্ছ মামলার সম্ভাবনাগুলিকেই অঙ্কুরে বিনষ্ট করিয়া।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy