কোভিড টিকাকরণে রাজ্যে-রাজ্যে বৈষম্য প্রভূত, বলিতেছে পরিসংখ্যান। গুজরাতে ৯৪ শতাংশ দুইটি ডোজ় পাইয়া গিয়াছেন, অথচ ২৫ শতাংশ ঝাড়খণ্ডবাসীর অদ্যাবধি টিকাই মিলে নাই। বৈষম্যের কারণ বহুবিচিত্র, তাহা বুঝিতে অসুবিধা হয় না। গ্রামাঞ্চল, জনজাতি-অধ্যুষিত এলাকা এবং নানা প্রত্যন্ত প্রান্তে টিকাকরণের শ্লথ গতির কথা শুনা গিয়াছে। উত্তরপ্রদেশ বা বিহারের ন্যায় যে রাজ্যগুলি হইতে পরিযায়ী শ্রমিকেরা অন্যত্র কাজ করিতে যান, সেই সকল স্থানে টিকাকরণের হার কম। বহু ক্ষেত্রে লিঙ্গভিত্তিক বিভেদও লক্ষণীয়— যথা, ১০০ জন পুরুষপ্রতি ৭৬ জন মহিলা টিকা পাইয়াছেন হরিয়ানার দুইটি জেলায়। অন্য দিকে, কেন্দ্র কর্তৃক অপ্রতুল টিকা সরবরাহের অভিযোগ তুলিয়াছে বিরোধী-শাসিত একাধিক রাজ্য।
কারণ যাহাই হউক, বৈষম্য জারি থাকিলে অতিমারির বিরুদ্ধে সংগ্রাম জয়ের চিন্তাও অসম্ভব। অল্প সংখ্যক মানুষও যদি রক্ষাকবচের আওতার বাহিরে থাকেন, তবে তাঁহাদের ফলে অবশিষ্টাংশ, এবং শেষাবধি সমগ্র সমাজ বিপন্ন হইতে পারে। অতএব, কেন্দ্র ও রাজ্যসমূহকে বৈষম্যের প্রশ্নটিতে গুরুত্ব দিতে হইবে। ভাবিতে হইবে, সমাজ-অর্থনীতির প্রান্তবাসীর নিকট— যেখানে নজরদারি এবং গণস্বাস্থ্য ও সামাজিক পরিষেবা প্রদানের ব্যবস্থা দুর্বল— কী করিয়া প্রয়োজনানুপাতে টিকা পৌঁছানো যায়। কেন্দ্রের দায়িত্ব কিছু অতিরিক্ত— রাজ্যগুলির তরফে উত্থাপিত সরবরাহের অভিযোগও মিটাইতে হইবে। বুঝিতে হইবে, যদি আর কোনও ঢেউয়ের আগমন ঠেকাইতে হয়, অথবা বর্তমান ঢেউয়ের বিপদ দ্রুত প্রশমিত করিতে হয়, তবে সুষ্ঠু টিকাকরণের সার্বিক পরিকল্পনাই একমাত্র পথ। বৈষম্যের আর একটি মাত্রা লক্ষণীয়। দেশে অনূর্ধ্ব-১৫ জনগোষ্ঠী অদ্যাবধি টিকাপ্রাপ্ত নহে— আরও মাসাধিক কাল তাহাদের অপেক্ষা করিতে হইবে। অনূর্ধ্ব-১৮ বছর বয়সিদের টিকাকরণও সদ্য-সূচিত। অতএব, প্রশ্ন উঠিবেই। দেশের শিশু-কিশোরদের বিপদে রাখিয়া আদৌ কি সুরক্ষাবলয় কল্পনা করা যায়? সরকার কি ভুলিয়াছে যে, ইহারাই দেশের ভবিষ্যৎ? ইহাদের রক্ষা করিতে না পারিলে সংগ্রামটি বহুলাংশে ফাঁকি হইয়া যায়? অল্পবয়সি জনসংখ্যায় বিশ্বে অগ্রগণ্য নাম ভারত, তাহার অনূর্ধ্ব-১৪ জনসংখ্যা সমগ্রের ৩৫.৩ শতাংশ।
বৈষম্যই ভারতের ধর্ম, এই কথাটি অস্বীকার করিবার উপায়মাত্র নাই। কিন্তু, টিকাকরণে বৈষম্য অন্যান্য বৈষম্যের তুলনায় ভয়ঙ্করতর, কারণ জনগোষ্ঠীর যে অংশ টিকা পাইবে না, তাহা টিকাপ্রাপ্তদেরও ফের বিপন্ন করিতে পারে। ফলে, ঐকিক নিয়মে আংশিক টিকাকরণের যতটুকু সুফল মিলিবার কথা ছিল, প্রকৃত পরিমাণ তাহার তুলনায় কম হইবারই আশঙ্কা। কিন্তু, এই পরিণতিবাদী যুক্তিই শেষ কথা নহে। রাজনৈতিক বা অন্য কোনও কারণে দেশের একাংশ মানুষকে টিকা হইতে বঞ্চিত করা রাষ্ট্রের পক্ষে ঘোর অনুচিত। বিশেষত, সেই জনগোষ্ঠী যদি কোনও অর্থে দুর্বলতর হয়— তাহা হইলে অন্যায়টি আরও প্রকট। বহু ক্ষেত্রেই সংবাদ মিলিতেছে যে, কোথাও যৌনকর্মী, কোথাও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ, কোথাও কুষ্ঠরোগী, এমন মানুষরা টিকা হইতে ধারাবাহিক ভাবে বঞ্চিত। এই প্রবণতাটি সংশোধন না করিতে পারিলে টিকাকরণ সম্বন্ধে যে কোনও গর্বই সারবত্তাহীন হইবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy