প্রতীকী ছবি।
মেডিক্যাল শিক্ষায় সর্বভারতীয় ‘নিট’ পরীক্ষাকে বাতিল করিবার প্রস্তাব পাশ করিয়াছে তামিলনাড়ুর বিধানসভা। যুক্তি, কেন্দ্র যে ভাবে ওই পরীক্ষার পরিকল্পনা করিয়াছে, তাহাতে অধিক সুবিধা পাইতেছে বিত্তবান পরিবারের ইংরেজি-শিক্ষিত সন্তানরা। কারণ, পরীক্ষার ভাষা ইংরেজি অথবা হিন্দি; মাতৃভাষায় পরীক্ষা দিবার সুযোগ নাই। তদুপরি, খরচসাপেক্ষ ‘কোচিং’ কেন্দ্রগুলিতে প্রশিক্ষণ না লইলে পরীক্ষায় সাফল্যের আশা কম। ইহার ফলে গ্রামীণ, তামিলভাষী, সরকারি স্কুলের ছাত্রছাত্রী এবং স্বল্পবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা বাদ পড়িতেছে। তাহাদের মধ্যে দলিত-আদিবাসীর অনুপাত অধিক। সরকার-গঠিত একটি বিশেষ কমিটি তাহার অনুসন্ধানে এই তথ্যগুলি পাইয়াছে। অতএব সামাজিক ন্যায়ের যুক্তিতে তামিলনাড়ু সর্বভারতীয় প্রবেশিকা বাতিল করিতে চায়। যে হেতু শিক্ষার স্থান যৌথ তালিকায়, অতএব রাষ্ট্রপতি সম্মতি দান করিলে তবেই তাহা আইন হইবে। ইতিপূর্বেও এক বার চেষ্টা করিয়াছিল তামিলনাড়ু, অনুমোদন মেলে নাই। প্রশ্ন: অপর রাজ্যগুলিরও কি তামিলনাড়ুর পথ অনুসরণ করা উচিত?
শিক্ষাক্ষেত্রে সামাজিক ন্যায় ও সাম্য নিশ্চিত করিবার প্রয়োজন প্রশ্নাতীত। কিন্তু, বিভিন্ন পেশায় প্রবেশের জন্য প্রয়োজনীয় কুশলতা ও মেধাও থাকিতে হইবে ছাত্রছাত্রীদের। বহু আগ্রহী শিক্ষার্থীর মধ্যে কয়েক জনকে বাছিয়া লইবার কাজটি সর্বত্র, সকল সময়েই কঠিন। কিন্তু তাহা এড়াইয়া যাওয়া চলে না; এবং, সেই নির্বাচনে জ্ঞান ও দক্ষতাকেও শর্ত করিতে হইবে। শিক্ষায় সাম্যের অর্থ প্রতিযোগিতা খারিজ নহে, তাহার অর্থ সকল আর্থ-সামাজিক শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের প্রতিযোগিতায় অংশ লইবার সক্ষমতা তৈরি করা। সেই কাজটি স্কুলশিক্ষার। অতএব কেবল দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে মেডিক্যাল শিক্ষায় প্রবেশ নির্ধারণ করিবার সিদ্ধান্ত অনুসরণের যোগ্য কি না, সেই প্রশ্ন থাকিবে। বিশেষত বর্তমানে দ্বাদশ শ্রেণির পরবর্তী বোর্ড পরীক্ষাগুলিতে যে রূপ নম্বরের বন্যা বহিতেছে, তাহাকে পেশাদারি শিক্ষার প্রবেশিকা করিতে চাহিলে শোরগোল বাড়িবে। অতএব, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রয়োজন অস্বীকার করা কঠিন।
কিন্তু, রাজ্যগুলি কেন তাহাদের নিজস্ব পরীক্ষা গ্রহণ করিতে পারিবে না? মনে রাখিতে হইবে, ২০১০ সালে ইউপিএ সর্বভারতীয় ‘নিট’ পরীক্ষা আবশ্যক করিবার পর তাহার বিরোধিতা করিয়াছিল গুজরাত। তবু তাঁহারই প্রধানমন্ত্রিত্বে ২০১৬ সালে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ‘নিট’ একমাত্র প্রবেশিকা হইয়া ওঠে। শিক্ষার সকল বিষয়ের কেন্দ্রীকরণের যে নীতি মোদীর সরকার গ্রহণ করিয়াছে, ‘নিট’ তাহার অন্যতম দৃষ্টান্ত। শিক্ষায় সামাজিক সাম্য বজায় রাখিয়া উৎকর্ষ নিশ্চিত করিতে হইলে প্রয়োজন শিক্ষানীতির নমনীয়তা। শিক্ষা, এমনকি বিজ্ঞানের শিক্ষাও নৈর্ব্যক্তিক নহে। ভাষা, সংস্কৃতি, পাঠ্যক্রম অনুসারে ছাত্রছাত্রীর সক্ষমতা গড়িয়া উঠে। পরীক্ষাই কেবল একটি ছাঁচে হইবে কেন? কেবল রাজ্য সরকার নহে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিরও অধিকার রহিয়াছে আপন প্রবেশিকা পরীক্ষা গ্রহণের। ছাত্রছাত্রীরা ইচ্ছা অনুসারে প্রতিষ্ঠান বাছিবে, তাহাতে ন্যায়ের সুযোগ অধিক। বিশ্বের সর্বত্র দেখা গিয়াছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বাতন্ত্র্য এবং পাঠ্যক্রমের বৈচিত্র শিক্ষার মানের উন্নতিই করিয়াছে। ভারতেই বা অন্য প্রকার হইবে কেন?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy