Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Poverty

সংখ্যার দারিদ্র

নীতি আয়োগের বহুমাত্রিক দারিদ্র সূচক অনুসারে, ২০১৯-২১ সালে ভারতের মোট জনসংখ্যার প্রায় পনেরো শতাংশ দরিদ্র, যা ২০১৫-১৬ সালে ছিল প্রায় পঁচিশ শতাংশ।

poverty.

প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০২৩ ০৫:২৭
Share: Save:

শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং জীবনযাত্রার মান, এই তিনটির নিরিখে বিচার করে নীতি আয়োগের দাবি— ভারতে দারিদ্র কমেছে। নীতি আয়োগের বহুমাত্রিক দারিদ্র সূচক অনুসারে, ২০১৯-২১ সালে ভারতের মোট জনসংখ্যার প্রায় পনেরো শতাংশ দরিদ্র, যা ২০১৫-১৬ সালে ছিল প্রায় পঁচিশ শতাংশ। সাড়ে তেরো কোটি মানুষের দারিদ্রমুক্তি ঘটেছে, এমন সুখবরে আহ্লাদিত হওয়ারই কথা। সমস্যা হল, নানা দিক থেকে উন্নয়নের বিচিত্র পরিসংখ্যান অনবরত ছুটে আসে নাগরিকের দিকে। তৈরি হয় বিভ্রান্তি। যেমন, যে বারোটি মাপকাঠিতে দারিদ্রের ওঠা-নামা বিচার করছে নীতি আয়োগের ‘বহুমাত্রিক দারিদ্র সূচক’, তার প্রথমেই রয়েছে অপুষ্টি। শিশু-অপুষ্টি কমেছে, এমনই দাবি নীতি আয়োগের। কিন্তু যে সমীক্ষার ভিত্তিতে এই সূচক রচিত, সেই পঞ্চম জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষা (২০১৯-২১) দেখিয়েছিল, ভারতে শিশু-অপুষ্টির চিত্র যথেষ্ট উদ্বেগজনক। পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুদের মধ্যে পঁয়ত্রিশ শতাংশেরই অপুষ্টির কারণে উচ্চতায় ঘাটতি রয়েছে (স্টান্টেড)। হতে পারে তা পূর্বের থেকে (২০১৫-১৬) সামান্য কম (তিন শতাংশ বিন্দু), কিন্তু তাতে কি আশ্বস্ত হওয়া চলে? আন্তর্জাতিক ক্ষুধা সূচকও (২০২২) দাবি করেছিল যে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিতে অপুষ্টির নিরিখে ভারতের পিছনে রয়েছে কেবল আফগানিস্তান। ভারত সরকার সেই তথ্যের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল, কিন্তু বিশেষজ্ঞরা দেখিয়েছিলেন যে, সেই তথ্যের সঙ্গে সরকারি তথ্যের খুব বেশি গরমিল নেই। আরও মনে রাখতে হবে, পঞ্চম জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষার বেশ কিছু তথ্য সংগৃহীত হয়েছিল কোভিড অতিমারির আগে। ভারতের নিম্নবিত্তের উপরে অতিমারির ভয়াবহ প্রভাব দেখে আশা করা কঠিন যে, ২০২২ সালে ক্ষুধা ও অপুষ্টির চিত্রে উন্নতি হয়েছে।

দারিদ্রমুক্তির হাল বুঝতে যে সমীক্ষাগুলি সাহায্য করত, তার অনেক ক’টা খারিজ করেছে মোদী সরকার। যেমন, জাতীয় নমুনা সমীক্ষার (এনএসএস) উপভোক্তা ব্যয় সমীক্ষার (২০১৭-১৮) ফল সরকারি ভাবে প্রকাশিত হয়নি। কিন্তু তার যে অংশটুকু প্রকাশিত হয়েছিল সংবাদমাধ্যমে, তাতে দেখা গিয়েছিল, খাদ্য-সহ নানা অত্যাবশ্যক সামগ্রীতে ব্যয়ের হার কমেছে, বিশেষ করে গ্রামীণ অঞ্চলে। ব্যয়ক্ষমতায় এমন পতন দারিদ্র বাড়ার লক্ষণ, তাই বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। একই সময়ে জাতীয় নমুনা সমীক্ষার নিয়োগ ও বেকারত্ব সংক্রান্ত সমীক্ষাটি দেখিয়েছিল গ্রামাঞ্চলে কর্মহীনতা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। এই দু’টি সমীক্ষার তথ্য নিয়েই প্রশ্ন তুলেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু কৃষি যে অলাভজনক রয়ে গিয়েছে, এবং গ্রামীণ এলাকায় মজুরি বৃদ্ধির হারের চেয়ে দ্রুত হারে বেড়েছে খাবারের দাম, এ তথ্য অস্বীকার করা সহজ নয়। ভারতের ৭০ শতাংশ মানুষ থাকেন গ্রামে, এবং তাঁরা অধিকাংশই কৃষি-অর্থনীতি নির্ভর। অতএব তাঁদের দারিদ্র হ্রাসের সম্ভাবনা কতখানি, তা নিয়ে সংশয় থাকতে বাধ্য।

উন্নয়নের নজির বলে মানব উন্নয়নের যে সব পরিসংখ্যান পেশ করে সরকার, সেই সংখ্যাগুলির পিছনের চিত্রটিও দেখা প্রয়োজন। পানীয় জলের নল থাকলেও তা দিয়ে জল আসে কি না, বিদ্যুৎ-সংযোগ থাকলেও বিদ্যুৎ মেলে কত ক্ষণ, ডাকঘরে অ্যাকাউন্ট থাকলেও তা শূন্য অঙ্কেই রইল কি না, তার উত্তর না পেলে দারিদ্রমুক্তির প্রকৃত ছবি আঁকা যায় না। উজ্জ্বলা প্রকল্পে নাম লেখানো মহিলারাও যে কয়লা আর কাঠকুটোয় উনুন জ্বালাচ্ছেন, স্কুলে গিয়েও শিশুরা লিখতে-পড়তে শিখছে না, সে তথ্য অস্বীকার করার উপায় নেই। আরও নিবিড়, আরও পূর্ণাঙ্গ ছবি আঁকার উদ্দেশ্যেই উন্নয়নের সূচকগুলির প্রবর্তন করা হয়েছিল। আক্ষেপ, এখন সেগুলি যেন হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক আস্ফালনের অস্ত্র। তাই অবিমিশ্র উন্নতি ছাড়া (সূচক বলছে, ভারতে উন্নতি হয়েছে বারোটি মাপকাঠিতেই) আর কোনও বার্তা মেলে না।

অন্য বিষয়গুলি:

Poverty NITI Aayog India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy