ফাইল চিত্র।
\হিসাব মিলিতেছে না। গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ— বিভিন্ন রাজ্যে করোনা সংক্রমণে মৃতের সংখ্যায় গরমিল দেখা যাইতেছে। সরকারি কর্তারা কোভিড-মৃত্যুর তালিকায় যে সংখ্যা দেখাইতেছেন, এক-একটি শ্মশানে তাহার অধিক চিতা জ্বলিতেছে। শ্মশানের নথি অনুসারে, সেইগুলি কোভিড-মৃতের। চলতি মাসে গুজরাতের সুরাতে, মধ্যপ্রদেশের ভোপালে এমনই ঘটিয়া চলিয়াছে। ৮ এপ্রিল সরকারি মেডিক্যাল বুলেটিনে সারা রাজ্যে ২৭টি মৃত্যুর উল্লেখ আছে। কিন্তু কেবল ভোপালেই সেই দিন ৪১ কোভিড-মৃতের সৎকার হইয়াছে, বিধি অনুসরণ করিয়া। উত্তরপ্রদেশে এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে কোভিড-মৃতের সংখ্যা সরকারি ঘোষণা অনুসারে ১২৪, কিন্তু শ্মশান-কর্তৃপক্ষের নথি অনুসারে চার শতেরও অধিক। গুজরাতের আমদাবাদে সাংবাদিকরা কেবল একটি হাসপাতালের কোভিড ওয়ার্ড হইতে যে কয়টি মৃতদেহ বাহির হইতে দেখিতেছেন, তাহার সংখ্যা সরকারি ভাবে ঘোষিত মৃত্যুর সংখ্যার প্রায় তিনগুণ।
তবে কি বিভিন্ন রাজ্যের সরকার মৃত্যু লুকাইয়া কোভিড অতিমারির আগ্রাসী রূপকে গোপন করিতেছে? এই অভিযোগ গুরুতর; এবং, সংশয় নিরসনের দায়িত্ব রাজ্য সরকারের। কোনও রাজ্যই এই বিষয়ে কোনও স্পষ্ট উত্তর দিবার চেষ্টাটুকুও করে নাই। গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপাণী ‘কোভিড-মৃত’ বলিয়া গণ্য করিবার শর্ত ব্যাখ্যা করিয়াছেন— যদিও ‘কো-মর্বিডিটি’ তত্ত্ব বহু পূর্বেই খারিজ হইয়াছে। করোনা পজ়িটিভ অবস্থায় মৃত্যু হইলে তাহা কোভিড-মৃত্যু গণ্য করিবার বিধি স্পষ্ট করা হইয়াছে। প্রশ্নকারী হয় মূর্খ, নয় কুচক্রী, অতএব উত্তর দিবার প্রয়োজন নাই— ক্ষমতাসীন দলের এই মনোভাব অজানা নহে। ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া বা কোভিড, যে কোনও রোগ মহামারি হইয়া উঠিলে পশ্চিমবঙ্গ সরকারও যথাযথ পরিসংখ্যান জানাইতে অস্বীকার করিয়াছে, এমন অভিযোগ বহুশ্রুত। আজ অতিমারিতে মৃতের সংখ্যার অসামঞ্জস্য লইয়া অতি সঙ্গত প্রশ্ন তুলিলেও বিভিন্ন রাজ্যের সরকার তাহা উপেক্ষা করিতেছে, অথবা অসার উত্তর দিতেছে। তবে কি ধরিয়া লইতে হইবে, সত্যের সহিত তথ্যের সকল সম্পর্কই ছিন্ন হইয়াছে? সুরাতে, ভোপালে, লখনউতে প্রিয়জনের দেহ দাহকার্যের জন্য ছয় ঘণ্টা-আট ঘণ্টা প্রতীক্ষা করিতে হইতেছে আত্মীয়দের। দিল্লির কবরস্থানে নূতন জায়গা করিতে মাটি খুঁড়িবার যন্ত্র আনা হইয়াছে। বেঙ্গালুরুতে কোভিড-মৃতদের জন্য চিহ্নিত দাহস্থানগুলির বাহিরে শববাহী গাড়ির লাইন দীর্ঘ হইতেছে। অথচ, রাজ্য সরকারগুলি যে তথ্য প্রকাশ করিতেছে, তাহাতে মৃতের সংখ্যা সামান্য।
বাস্তবের সহিত তথ্যের এই বিচ্যুতি মানুষকে আরও আতঙ্কিত করিয়া তোলে, তাহার অসহায়তার বোধ আরও তীব্র হইয়া উঠে। যে সরকার বালিতে মুখ গুঁজিয়া সত্যকে অস্বীকার করিতেছে, সে অতিমারির মোকাবিলা করিবার কোনও চেষ্টাই করিবে না— এই আশঙ্কার উদয় হইতে বাধ্য। মৃত্যুর তথ্যকে গোপন করিবার এই অপচেষ্টারই প্রতিফলন, সরকারি হাসপাতাল হইতে মৃতদেহগুলি গোপনে অপসারণ করিবার ঝোঁক। শ্মশানে একই চিতায় পাঁচ-ছয়টি দেহ দাহ করা হইতেছে, কখনও মাটিতে গর্ত করিয়া গণচিতায় দাহ করা হইতেছে। জীবনে যেমন, মৃত্যুতেও তেমনই, রাষ্ট্র অস্বীকার করিতেছে রোগপীড়িত নাগরিকের অস্তিত্ব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy