Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Women Farmers

নুনের ছিটে

দলীয় রাজনীতি পিতৃতন্ত্রের প্রতিভূ, তাই মহিলা চাষির মজুরির প্রশ্নটি উপেক্ষিত থাকে, এবং সেই সঙ্গে মেয়েদের জমির মালিকানার দাবিও।

প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:৩৫
Share: Save:

মহিলা চাষিদের জন্য প্রধানমন্ত্রী কিসান সম্মাননিধি প্রকল্পে টাকা দ্বিগুণ করা হতে পারে কেন্দ্রের আগামী বাজেটে, এমন একটি সংবাদ সামনে এসেছে। এতে শাসক দলের ভোট পাওয়ার উদ্দেশ্য কতটা সাধিত হবে, আর কতটা মহিলা চাষিদের স্বার্থরক্ষা হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কৃষিকাজে নিযুক্ত রয়েছেন প্রচুর মহিলা, কিন্তু পিএম-কিসান প্রকল্পের অনুদান পেতে গেলে নিজের নামে জমি চাই। ভারতে কৃষিজমির ১৩ শতাংশেরও কম মেয়েদের মালিকানাধীন। অতএব মেয়েদের বছরে বারো হাজার টাকা দিলেও, ক’জন মেয়েই বা তা পাবেন? যাঁরা পাবেন, তাঁদের লাভই বা হবে কতটুকু? প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২০২২-এর মধ্যে চাষির রোজগার দ্বিগুণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। লক্ষ্য অধরা থেকে গিয়েছে, আয়ের প্রসঙ্গ ছেড়ে রাজনৈতিক প্রচার এসেছে অনুদানে। অথচ, অনুদান দিয়ে কি কৃষিকে লাভজনক করা গিয়েছে? তার জন্য প্রয়োজন সেচ পরিকাঠামোর উন্নতি, বীজ, সার, কীটনাশক প্রভৃতি উপকরণের যথেষ্ট জোগান; সেগুলির বৈজ্ঞানিক ব্যবহার সম্পর্কে প্রচার, কৃষি বিপণনের ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ। এই গোড়ার শর্তগুলি পূরণ না করলে চাষির রোজগার বাড়বে না। চাষিরা তা বোঝেন বলেই অনুদানের অঙ্ক বাড়ানোর দাবি তোলেননি। সময়মতো সার-বীজের জোগান, সারে ভর্তুকি, ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে সরকারকে ফসল বিক্রির সুবিধা, ফসল বিমার মাধ্যমে দ্রুত ক্ষতিপূরণ, ফড়েদের উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ— এই দাবিগুলিই বার বার করছেন।

যদি মহিলা কৃষকদের দাবির কথাই তুলতে হয়, তা হলে তাঁদের একটি প্রধান দাবি, পুরুষ ও মহিলার সমান মজুরি। কৃষি মন্ত্রকের তথ্য (২০২০-২১) অনুসারে, ভারতে মহিলা খেতমজুর গড়ে দৈনিক ৮৮ টাকা কম পান পুরুষদের দৈনিক মজুরির (৩৮৩ টাকা) থেকে, যা দু’কিলো চালের দামের সমান। এই মজুরি বঞ্চনা একই সঙ্গে মেয়েদের সামাজিক অসাম্য এবং বাড়তি দারিদ্রের কারণ। এর প্রতিকারে রাজনৈতিক আন্দোলন প্রয়োজন। আক্ষেপ, ভারতের কোনও রাজনৈতিক দল মেয়েদের মজুরি-বঞ্চনা অবসানের দাবিকে নির্বাচনী প্রচারের বিষয় করে তুলতে আগ্রহী নয়। মেয়েদের সমান মজুরি পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট চাইতেও দেখা যায় না কোনও দলকে। অথচ, এই একটি প্রতিশ্রুতি রাজকোষের খরচ এক পয়সা না বাড়িয়েও লক্ষ লক্ষ মহিলা চাষির আয় বাড়াতে পারত, সমাজকে আরও সাম্যময় করতে পারত।

দলীয় রাজনীতি পিতৃতন্ত্রের প্রতিভূ, তাই মহিলা চাষির মজুরির প্রশ্নটি উপেক্ষিত থাকে, এবং সেই সঙ্গে মেয়েদের জমির মালিকানার দাবিও। ২০০৯ সালে উত্তরপ্রদেশের রায়বরেলীর মহিলা চাষিরা স্লোগান তুলেছিলেন, ‘মহিলাওঁ কো কিসান কা দর্জা জো দিলায়েগা, ভোট হমার ওহি পায়েগা’— মেয়েদের ভোট পেতে হলে মেয়েদের কিসান পরিচিতি দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। ভারতে আজও জমির মালিকানাই সম্পদের উপর নিয়ন্ত্রণের প্রধান লক্ষণ। তাই বছরে কিছু বেশি সরকারি অনুদান পাওয়ার জন্য পুরুষেরা মেয়েদের নামে জমি লিখে দেবেন, তার সম্ভাবনা সামান্যই। জমির মালিকানায় মেয়েদের অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সমাজে সাম্য আনার কার্যসূচি ঘোষণা করে, নির্বাচনে মেয়েদের ভোট দাবিই বা করছে কোন দল? ভোট পেতে রাজকোষের টাকায় বাড়তি অনুদান তাই কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে মনে হতে পারে।

অন্য বিষয়গুলি:

agriculture Central Government
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy