Advertisement
৩০ নভেম্বর ২০২৪
Mamata Banerjee

নন্দ ঘোষ

রেফার কমাতে হলে বরং প্রতিটি জেলায় সব স্তরের হাসপাতালের পরিকাঠামো ও মানবসম্পদের বিশদ সমীক্ষা করুক সরকার।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২২ ০৬:২৪
Share: Save:

রাজ্যে প্রসূতি মৃত্যু রোধে কী করতে হবে, সে বিষয়ে ডাক্তারদের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেছেন, গর্ভবতীকে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে রেফার না করে বরং আশা কর্মী বা ধাত্রীদের ডেকে নিতে। ব্লক হাসপাতালের ডাক্তারদের নিরাপদ প্রসব জানা না থাকলে শিখে নিতে। মোবাইলে সুপারের সঙ্গে কথা বলে সঙ্কটপূর্ণ প্রসূতিকে েজলা হাসপাতালে পাঠাতে। এত বিকল্প থাকা সত্ত্বেও গর্ভবতীকে রেফার করলে, এবং তার পর সে মারা গেলে, রেফার করে-দেওয়া চিকিৎসককেই দোষী ঠাহর করা হবে, ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এমত ঘোষণায় ডাক্তাররা কেমন বোধ করেছেন, অনুমান করা চলে, এবং রাজ্যবাসী যে বিশেষ ভরসা পাননি, সেটা হলফ করে বলা চলে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক দশকেরও বেশি এ রাজ্যে শীর্ষক্ষমতায় রয়েছেন, এবং এই শাসনকালে তিনি নিজেই স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদ অলঙ্কৃত করছেন। ডাক্তারদের কষে ধমকালে, শো-কজ় বা সাসপেন্ড করলেই যদি অযথা রেফার করা বন্ধ হত, তা হলে এত দিন তিনি তা করেননি কেন, সে প্রশ্ন উঠতেই পারে। রেফার করার জন্য রোগীদের মূল্যবান সময় নষ্ট হয়, জীবনসংশয় হয়, এ কথা তো নতুন করে জানা গেল না। কেউ বলতে পারেন, হয়তো জানা আর বোঝার মধ্যে যে দুস্তর তফাত— তাতেই এতখানি সময় লাগল। রোগী রেফার করার নীতি তৈরি করা প্রয়োজন, বুঝতে এগারো বছর লাগল। স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা অবশ্য লজ্জাকে জয় করেছেন বহু দিন। এক কর্তার মন্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি নিষেধ করেছেন, তাই এ বার রেফার কমবে বলেই তাঁর আশা। অর্থাৎ, আধিকারিকের নিষেধে কান দেন না ডাক্তাররা। এমন ব্যক্তিত্বই প্রশাসন চালানোর উপযুক্ত বটে।

পশ্চিমবঙ্গের সরকারি চিকিৎসকরা সর্বদা জনহিতে মনপ্রাণ ঢেলে দিচ্ছেন, এমন দাবি করা কঠিন। বিশেষত ব্লক-মহকুমা স্তরের হাসপাতালগুলিতে কর্মরত চিকিৎসকদের কাজে উপস্থিতির হার, চিকিৎসার প্রতি মনোযোগ এবং রোগীর সঙ্গে ব্যবহার নিয়ে বহু প্রশ্ন উঠেছে। তা সত্ত্বেও, প্রসূতি রেফার করাকে কেবল চিকিৎসকের আলস্য ও অনিচ্ছার প্রকাশ বলে ধরে নেওয়া চলে না। রাজ্যের যে কোনও স্তরের হাসপাতালে কি চব্বিশ ঘণ্টা সুরক্ষিত প্রসব করানোর মতো পরিকাঠামো ও লোকবল রয়েছে? রোগীর অবস্থা হঠাৎ খারাপ হলে আপৎকালীন ভিত্তিতে উচ্চতর হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা প্রস্তুত রয়েছে? কার্যক্ষেত্রে দেখা যায়, বহু ব্লক হাসপাতাল, গ্রামীণ হাসপাতালে স্ত্রীরোগ বা অ্যানেস্থেশিয়ার বিশেষজ্ঞ রয়েছেন কেবল এক জন। ঝুঁকির সম্ভাবনা দেখলে তাই চিকিৎসকেরা রেফার করে দেন প্রসূতিকে। চিকিৎসক ইচ্ছা করলেই রেফার না করতে পারেন, এমন ধরে নেওয়া চলে না। একেই রাজ্যে চিকিৎসকদের উপরে হামলা দৈনন্দিন ঘটনা হয়ে উঠেছে। তার উপর প্রসূতির মৃত্যুর জন্য প্রকাশ্যে চিকিৎসকদের দায়ী করে তাঁদের আরও বিপন্ন করা হল।

মুখ্যমন্ত্রীই নীতি-প্রণেতা, সুতরাং তাঁর উদ্দেশে রাজ্যবাসী বরং একটি জরুরি প্রশ্ন প্রেরণ করতে পারেন: কী লাভ হল জেলায় জেলায় ‘সুপার স্পেশালিটি’ হাসপাতাল গড়ে, যদি শেষ অবধি কলকাতাতেই রেফার করতে হয় রোগীদের? কোটি কোটি টাকা খরচ করে হাসপাতাল ভবন, অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি কেনা হবে, আর প্রসব করাতে ডাক পড়বে ধাত্রী-আশার, এই কি সরকারি নীতি? রেফার কমাতে হলে বরং প্রতিটি জেলায় সব স্তরের হাসপাতালের পরিকাঠামো ও মানবসম্পদের বিশদ সমীক্ষা করুক সরকার। সাহস থাকলে সেই রিপোর্ট জনসমক্ষে প্রকাশ করুক। আর অধস্তন চিকিৎসকদের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দায় এড়ানোর চেষ্টা করছেন স্বাস্থ্য দফতরের যে কর্তারা, তাঁদের ‘রেফার’ করা হোক অন্য দফতরে।

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee Death Women
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy