—প্রতীকী চিত্র।
আজ থেকে ১৩১ বছর আগে শিকাগোর বিশ্বমঞ্চে হিন্দুধর্মের প্রতিনিধি হিসাবে বলতে উঠে স্বামী বিবেকানন্দ মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, ভারত কী ভাবে, কোন সুদূর অতীত থেকে পৃথিবীর সকল ধর্ম ও জাতির আশ্রয়প্রার্থী মানুষকে আশ্রয় দিয়েছে। বলেছিলেন ‘ইহুদিদের খাঁটি বংশধরগণের অবশিষ্ট অংশকে সাদরে হৃদয়ে ধারণ’ করে রাখার কথা, রোমানদের উৎপীড়ন-ধ্বস্ত যাঁরা চলে এসেছিলেন দক্ষিণ ভারতে। ইতিহাস বলে, প্রথম শতাব্দীর মধ্যভাগে জিশুর বারো জন শিষ্যের অন্যতম সন্ত টমাস এসেছিলেন এ দেশে। দুই হাজার বছর ধরে যে ধর্মের আদিরূপ ও রূপান্তর এই ভূমিতেই, সেই খ্রিস্টধর্মকে তাই ‘ভারতীয় ধর্ম’ হিসাবে না দেখার কোনও কারণ নেই— বেঙ্গালুরুতে ভারতীয় ক্যাথলিক বিশপদের সম্মেলনেও সেই কথাটি মনে করালেন সভাপতি আর্চবিশপ। ইউরোপের মাটিতে পৌঁছনোর ঢের আগে থেকে যে ধর্ম ভারতে আছে, তা নিশ্চিত ভাবে এক ভারতীয় ধর্ম।
সংখ্যার দিক থেকে হিন্দুধর্ম ও ইসলামের পরেই খ্রিস্টধর্মাবলম্বী মানুষের স্থান ভারতে। সংখ্যাগুরুর হিন্দুধর্মের মতোই, ভারতীয় খ্রিস্টধর্মেও আছে বিপুল বৈচিত্র— তামিলনাড়ু ও গোয়ার খ্রিস্টান জীবন এক নয়, যেমন এক নয় কেরল ও বাংলার খ্রিস্টধর্ম। উত্তর-পূর্ব ভারতের জনজাতিদের খ্রিস্টধর্ম আর দেশ জুড়ে থাকা দলিত খ্রিস্টানদেরও ধর্মাচরণ আলাদা, সেই বহুত্বেই নিহিত তার সৌন্দর্য ও গুরুত্ব। কিন্তু এই সবেরই অর্থ আছে যখন তার মর্যাদাও রক্ষিত সসম্মানে; আজকের ভারত যে তার খ্রিস্টান নাগরিকদের অধিকার রক্ষায় ব্যর্থ, দেশ জুড়ে সাম্প্রতিক নানা ঘটনাই প্রমাণ। খ্রিস্টানমাত্রেই ধর্মান্তরিত, বিদেশি মিশনারিদের কাজই হল ধর্মান্তরণ, এই ধারণার বশে খ্রিস্টানদের দেখা হচ্ছে বিভেদ-বিদ্বেষের চোখে। হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি সেই আগুনে ঘি ঢালছে, বিজেপি কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পর থেকে গত এক দশকে বেড়েছে খ্রিস্টানদের উপর হিংসা, হামলা, পরিকল্পিত আক্রমণ। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ বা বজরং দলের মতো সংগঠনের প্রকাশ্য সন্ত্রাস যদি হয় তার একটি রূপ, অন্য দিকটি ‘ভাতে মারা’র কল, খ্রিস্টান কল্যাণমূলক সংস্থার বিদেশি অনুদান নেওয়ার পথে কাঁটা বিছানো। আর এই সবই হচ্ছে প্রশাসন ও পুলিশের চোখের সামনে।
বেঙ্গালুরুতে ভারতীয় বিশপদের সম্মেলনটি শুধু ধর্মসভাই নয়, সেখানে আলোচনা হয়েছে ভারতে বর্তমান রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতিতে খ্রিস্টানদের অবস্থা ও চার্চের ভূমিকা নিয়ে, গত বছরের মে মাস থেকে মেইতেই-কুকি হিংসায় দগ্ধ মণিপুর নিয়ে। গুরুত্বপূর্ণ ভাবে উঠে এসেছে এ বছরের লোকসভা নির্বাচন প্রসঙ্গ, সভাপতি মনে করিয়ে দিয়েছেন খ্রিস্টানরা যেন ভোট দেওয়ার সময় মনে রাখেন তাঁদের ধর্মীয় স্বাধীনতা, মানবিক মর্যাদা, নাগরিক অধিকারের কথা— সর্বোপরি এ দেশের গণতন্ত্র রক্ষায় নিজেদের ভূমিকা। শুনে আশা জাগে, দুঃখও হয়। আশা, কারণ এই সময়ে দাঁড়িয়ে প্রতি পদে সংখ্যাগুরুর অপমান, হেনস্থা ও হিংসার মুখেও এই ‘সংখ্যালঘু’রা ভারতীয় গণতন্ত্র ও সংবিধানের মূল সুরটি বিস্মৃত হচ্ছেন না। দুঃখ, কারণ সহনাগরিকের মর্যাদা রক্ষার এই অতি জরুরি কাজটি সর্বাবস্থায় ও নিঃশর্তে করার কথা ছিল ভারতরাষ্ট্রের বর্তমান শাসক ও সংখ্যাগুরুর। তাঁরা এখনও ‘অপর’ করে রাখলেন তাঁদের, আপন করলেন না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy