—প্রতীকী ছবি।
এ বছরের অর্ধেক সময় তো পেরিয়েই গিয়েছে, হাতে আর সাড়ে পাঁচ বছর। এ ভাবেই যদি চলে, তবে ২০৩০ সালে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে ভারতের প্রায় ৬০% প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ নাকি হয়ে দাঁড়াবেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মাপকাঠিতে শারীরিক ভাবে ‘আনফিট’, অর্থাৎ অদক্ষ। মেডিক্যাল জার্নাল ল্যানসেট-এর সদ্যপ্রকাশিত এক রিপোর্ট বলছে, শারীরিক সক্রিয়তা বা দক্ষতা নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বেঁধে দেওয়া যে মাপ— সপ্তাহে ১৫০-৩০০ মিনিট মাঝারি মাপের, বা ৭৫ মিনিট জোরদার ‘অ্যারোবিক অ্যাক্টিভিটি’ বা তার সমতুল্য পরিশ্রম— সারা বিশ্বের প্রায় ১৮০ কোটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তা করছেন না। এই যোগ্যতামানের নিরিখে ভারতের চিত্রটি সুবিধার নয়, ২০০০ সালে দেশে প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের শারীরিক অদক্ষতা যেখানে ছিল ২২.৩%, ২০২২-এ তা ছুঁয়েছে প্রায় ৫০%!
এই পরিসংখ্যান অবশ্যই সমীক্ষাভিত্তিক। তবে উপরের তথ্য-পরিসংখ্যান দেখে এই প্রশ্ন জাগা অমূলক নয়, ভারতের ক্ষেত্রে সমীক্ষার সিদ্ধান্ত সুষ্ঠু ভাবে পরীক্ষিত তো? বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ ভারতে প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের সংখ্যাও বিপুল, এবং গ্রামে বসবাস করা প্রাপ্তবয়স্ক, কিংবা কৃষিকাজ বা কলকারখানায় কায়িক পরিশ্রমে জীবিকা নির্বাহ করেন এমন প্রাপ্তবয়স্কের সংখ্যাটি এই একুশ শতকেও বিরাট। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বেঁধে দেওয়া শারীরিক সক্রিয়তার যোগ্যতামানে এঁরা অকৃতকার্য হবেন তা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। বরং শহরের প্রাপ্তবয়স্ক ও তাঁদেরও মধ্যে বিশেষ করে বয়স্ক নাগরিকদের জীবনে শারীরিক সক্রিয়তা যে তুলনায় অনেক কম তা সহজেই বলা যায়: চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য-বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, এক জায়গায় বসে টানা কাজ করা, শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নিয়মিত সঞ্চালনার অভাব ইত্যাদি ডেকে আনছে শরীরের জড়তা ও আলস্য, তা-ই ক্রমে রূপ নিচ্ছে শারীরিক অদক্ষতায়, পরিণতি নানা রোগ-অসুখ।
লক্ষণীয়, ল্যানসেট-এর সমীক্ষা এসে থেমেছে ২০২২-এ, অতিমারি পেরিয়ে থিতু হওয়ার বছরে। কোভিডের কারণে মানুষের স্বাস্থ্যে নানা শারীরিক-মানসিক প্রভাব পড়েছে, গবেষণা চলছে তা নিয়ে। কিন্তু ভারতের জনস্বাস্থ্য-বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষের কোভিড-উত্তর শারীরিক অদক্ষতা সামাজিক ভাবে দৃশ্যমান: ব্যায়াম ইত্যাদি দূরস্থান, ন্যূনতম কায়িক শ্রম থেকেও মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছেন বহু প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ। অথচ হওয়ার কথা ছিল উল্টো। কোভিড যেখানে স্বাস্থ্যের গুরুত্ব মর্মে মর্মে বুঝিয়ে দিয়ে গেল, সেখানে দরকার ছিল নিজেদের শরীরের যত্ন নেওয়া, শরীর যাতে সক্রিয় ও সুস্থ থাকে তা নিয়ে সচেতন হওয়া। ল্যানসেট-এর রিপোর্টকে এই অসচেতনতার চেতাবনি ধরে নেওয়া যেতে পারে। জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি অর্থনীতির সঙ্গেও যুক্ত। নাগরিকের শারীরিক অদক্ষতার ফলে ২০২০-২০৩০ সময়কালে জনস্বাস্থ্যে মোট যে অর্থব্যয় হবে, বিশ্ব-অর্থনীতিতে তার পরিমাণ ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৩০,০০০ কোটি, ভারতে সে খরচ কোথায় পৌঁছবে তা অনুমান করা যায়। অন্য দিকে, এই একুশ শতকেও ভারতে নাগরিকের সরকারি স্বাস্থ্যবিমা-সহ নানা সুযোগ-সুবিধার চিত্রটি সমস্যাবহুল, নাগরিকের নিজস্ব সঞ্চয়ই হাতের পাঁচ। এই সবই নাগরিকদের জানা। তার পরেও যদি তাঁরা শরীর ভাল রাখার গোড়ার পদক্ষেপগুলি না করেন, তা হবে আত্মঘাতের শামিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy