Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪
Plastic pollution

কলুষিত

শহরে প্রতিনিয়ত সংগৃহীত বর্জ্যের বাইরেও বেশ কিছু বর্জ্য প্লাস্টিক-বন্দি অবস্থায় থেকে যায়। প্রায়শই এই জমে থাকা বর্জ্যের স্তূপে আগুন ধরানো হয়।

A Photograph representing Waste Pollution

শহরে প্রতিনিয়ত সংগৃহীত বর্জ্যের বাইরেও বেশ কিছু বর্জ্য প্লাস্টিক-বন্দি অবস্থায় থেকে যায়। প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৪:৪৮
Share: Save:

শহর কলকাতা মূলত যে তিন ধরনের দূষণে নিয়ত জেরবার হয়, তার মধ্যে অন্যতম— বর্জ্য থেকে দূষণ। অথচ, এই বিষয়ে সচেতনতা যেমন কম, বন্ধের ক্ষেত্রে কার্যকর উদ্যোগের অভাব ততোধিক। শহরে প্রতিনিয়ত সংগৃহীত বর্জ্যের বাইরেও বেশ কিছু বর্জ্য প্লাস্টিক-বন্দি অবস্থায় থেকে যায়। প্রায়শই রাতে বা ভোরের দিকে এই জমে থাকা বর্জ্যের স্তূপে আগুন ধরানো হয়। এ-হেন জঞ্জাল পোড়ানোয় বিপদ কত? তথ্য বলছে, জঞ্জাল থেকে নির্গত মিথেন গ্যাস বিশ্ব উষ্ণায়নের ক্ষেত্রে কার্বন ডাইঅক্সাইডের চেয়েও একুশগুণ বেশি দায়ী। সুতরাং, সেই জঞ্জালে আগুন ধরালে বিপদের মাত্রা আরও কতটা বৃদ্ধি পাবে, মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন।

প্রকৃতপক্ষে, এই রাজ্যের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সম্পূর্ণ চিত্রটির ভিতরেই বড়সড় গোলমাল বিদ্যমান। কয়েক মাস পূর্বে জাতীয় পরিবেশ আদালত পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে আবর্জনা ব্যবস্থাপনার ঘাটতির জন্য ৩৫০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। রাজ্যে দৈনিক যে পরিমাণ কঠিন বর্জ্য উৎপন্ন হয়, তার বেশির ভাগটাই কোনও প্রক্রিয়া ছাড়াই আঁস্তাকুড়ে জমা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, আবর্জনা খোলা জমিতে ফেলে রাখলে তার থেকে ভূগর্ভস্থ জলে দূষণ ছড়ানোর সম্ভাবনা। শহরের ভাগাড়গুলির স্তূপীকৃত জঞ্জালও দীর্ঘ দিন যাবৎ পরিবেশবিদদের উদ্বেগের কারণ। ধাপার প্রসঙ্গটি উল্লেখযোগ্য। গত বছর জানা গিয়েছিল, ধাপায় প্রায় ৬০ একর জায়গা জুড়ে স্তূপীকৃত বর্জ্যের পরিমাণ চল্লিশ লক্ষ টনের মতো। এর মধ্যে বায়োরিমিডিয়েশন-এর মাধ্যমে প্রক্রিয়াকরণ করা সম্ভব হয়েছে সামান্য পরিমাণ বর্জ্যের। অবশিষ্টাংশ দীর্ঘ দিন ধরে এলাকার তীব্র দূষণের কারণ। যে কোনও মুহূর্তে সেখানে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা। একই উদাসীনতা পরিলক্ষিত হয় তরল বর্জ্যের ক্ষেত্রেও। শহরাঞ্চলে অর্ধেকের বেশি বর্জ্য জল পরিশোধন প্রক্রিয়ার বাইরেই থেকে যায়। কলকাতায় প্রতি দিন এক বিশাল পরিমাণ তরল বর্জ্য প্রাকৃতিক ভাবে পরিশোধনের কাজটি করে পূর্ব কলকাতার জলাভূমি অঞ্চল। কিন্তু প্রশাসনিক অপদার্থতার কারণে বেআইনি নির্মাণের গ্রাসে ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে এই প্রাকৃতিক পরিশোধনাগার। সুতরাং, পরিশোধনের কাজটি হয়ে উঠছে কঠিন, তদুপরি ব্যয়বহুল।

তবে আবর্জনা ব্যবস্থাপনার সম্পূর্ণ দায় প্রশাসনের উপর চাপিয়ে দেওয়াও অসঙ্গত। এই কাজে নাগরিক সচেতনতা এবং সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন, বাস্তবে যা প্রায় দেখাই যায় না। যেমন, পচনশীল এবং অপচনশীল বর্জ্য আলাদা করার জন্য শহরের প্রতি বাড়িতে সবুজ এবং নীল বালতি দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই জঞ্জাল পৃথকীকরণের কাজের পরিবর্তে সেই বালতি গৃহস্থালির কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। পুরসভার কর্মীদের মানুষকে সচেতন করতে হবে ঠিকই, কিন্তু যাঁরা পৃথকীকরণের উদ্দেশ্য সম্পর্কে মোটামুটি সচেতন বলে ধরে নেওয়া যায়, সেই শ্রেণির প্রত্যেকেই কি সর্বদা নির্দিষ্ট পাত্রে নির্দিষ্ট আবর্জনা ফেলে থাকেন? ময়লা ফেলার পাত্র থাকা সত্ত্বেও কি তাঁরা চায়ের কাপ, প্লাস্টিকের প্যাকেট যত্রতত্র ছুড়ে ফেলেন না? শহর পরিচ্ছন্ন এবং দূষণমুক্ত রাখতে প্রশাসন এবং নাগরিক উভয়কেই দায়িত্ব নিতে হবে, নিজ কর্তব্যটি যথাযথ পালন করতে হবে। পারস্পরিক দোষারোপে শহর শুদ্ধ হবে না।

অন্য বিষয়গুলি:

Plastic pollution Waste dump Pollution Prevention
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy